অর্থপূর্ণ জীবন আসলে কি?

Old woman n dogতাহেরা জাবীন: এক বন্ধুস্থানীয় ছোট ভাই কয়েকদিন আগে আমাকে প্রশ্ন করেছে আমার কাছে অর্থপূর্ণ জীবনের সংজ্ঞা কি? বলেছিলাম সময় করে লিখব। আজ সন্ধ্যায় ভাবতে বসলাম: আসলেই তো আমার কাছে অর্থপূর্ণ জীবন কি?

এক জীবনে বাস করে আরেক জীবনের স্মৃতি তাড়িত এই আমি’র পক্ষে অর্থপূর্ণ জীবনের সংজ্ঞা কি সহজে দেওয়া সম্ভব? কর্মক্ষেত্রে দারুনভাবে কৃতকার্য আর পারিবারিক আর সামাজিক বলয়ে কর্তব্যপরায়ণ আর জনপ্রিয় আমার গৃহীসত্ত্বা একদিকে যেমন প্রিয়জনদের নিয়ে সামাজিক জীবনে ভীষণ ভাবে মনোযোগী থাকে অন্যদিকে এই আমারই আরেক বিবাগীসত্তা সর্বদাই নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা’র টানে ঘরে দুদন্ড থিতু হতে পারে না। অজানার নেশায় এই আমি পথে বেরিয়ে পড়ি সময় সময় – প্রকৃতির মাঝে খুঁজে পাই জীবনের আরেক প্রাপ্তি। পথের নেশা যে কি তা আমার মত যে অন্তরে বিবাগী না তার পক্ষে বোঝা সম্ভব না। অচেনাকে জানার আর নতুন মানুষের সংস্পর্শ আর প্রকৃতির মাঝে যেন পরমাত্মাকে খুঁজে ফেরা – তখন ওটাই আমার কাছে অর্থপূর্ণ জীবন। আবার এই আমিই পথে চলতে চলতে ঘরের টানে আবার আকুতি বোধ করি, তাই আবারো ফিরে আসি কৃতি জীবনে যেখানে দম ফেলার দুদন্ড সময় নেই। অস্বীকার করি কি করে এই ঘটনাবহুল কর্মময় আর সামাজিক জীবনও আমার কাছে কম অর্থপূর্ণ নয়?

কিন্তু এই দু’জীবনের টানপোড়েনে যে জীবন এর কোনটাকেই কি পুরোপুরি অর্থপূর্ণ বলা যায়? না, কারণ কোনটায় তো পরিপূর্ণ আমিকে প্রকাশ করে না। প্রিয় এক বন্ধু আজ একটা অপূর্ব কবিতা লিখেছে জীবনের ছোট ছোট ভালোলাগা যা তাকে সত্যিকারের সুখী করে সেই বিষয়ে। শেষে গিয়ে বলেছে:

“Big things make me scared
Unsettled and crappy
All those little things
Make me real happy.”

আসলেই তাই ভেবে দেখলাম বন্ধুর মতই আমার কাছে অর্থপূর্ণ জীবনের মানে হলো জীবনের ছোট ছোট ভালোলাগা’র ভেতর দিয়ে নিজেকে খুঁজে ফেরা। এই নিয়ে ভাবতে ভাবতে শেষে ডুব দিলাম গুরুদেবের ভাণ্ডারে, আর পেলাম সেই মহার্ঘ্য বাণী যা পুরোপুরি আমারই মনের কথা প্রকাশ করে যা আবারও মনে করিয়ে দিল আমি আসলেই কোন সে অর্থপূর্ণ জীবনের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছি এই দ্বৈতসত্ত্বার জীবনে:

“ উপনিষৎ বলছেন, আনন্দ হতেই সমস্ত জীবের জন্ম, আনন্দের মধ্যেই সকলের জীবনযাত্রা এবং সেই আনন্দের মধ্যেই আবার সকলের প্রত্যাবর্তন। বিশ্বজগতে এই যে আনন্দসমুদ্রে কেবলই তরঙ্গলীলা চলছে, প্রত্যেক মানুষের জীবনটিকে এরই ছন্দে মিলিয়ে নেওয়া হচ্ছে জীবনের সার্থকতা। প্রথমেই এই উপলব্ধি তাকে পেতে হবে যে, সেই অনন্ত আনন্দ হতেই সে জেগে উঠছে, আনন্দ হতেই তার যাত্রারম্ভ, তার পরে কর্মের বেগে সে যতদূর পর্যন্তই উচ্ছ্রিত হয়ে উঠুক-না, এই অনুভূতিটিই যেন সে রক্ষা করে যে, সেই অনন্ত আনন্দসমুদ্রেই তার লীলা চলছে– তারপরে কর্ম সমাধা করে আবার যেন সে অতি সহজেই নত হয়ে সেই আনন্দ সমুদ্রের মধ্যে আপনার সমস্ত বিক্ষেপকে প্রশান্ত করে দেয়। এই হচ্ছে যথার্থ জীবন। এই জীবনের সঙ্গেই সমস্ত জগতের মিল। সেই মিলেই শান্তি এবং মঙ্গল এবং সৌন্দর্য প্রকাশ পায়।“

অবশেষে হৃদয়াঙ্গম করলাম আমার কাছে অর্থপূর্ণ জীবনের সংজ্ঞা হলো এটাই!

লেখক পরিচিতি: উন্নয়ন কর্মী।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.