অনন্যা,  তুমি অনন্যাই

Hasina Nigar
হাসিনা আকতার নিগার

হাসিনা আকতার নিগার: জীবনের চলার পথে  নানা কিছু দেখতে দেখতে এখন বড় বেশী পরিশ্রান্ত মনে হয়। শুধু মনে হয় কবে যে ছুটি পাবো । মানুষ বলে অতীত সুখের কিংবা দু:খের যাই হোক না কেন, তা সব সময় সময়ই কষ্টের। তবে একজন নারী  যখন মা হয়ে সন্তানের দায়িত্ব পালন করে, তার কাছে জীবনের অতীতটা অনেক বেশী দামি হয়ে যায়। বিশেষ করে একা চলার পথে।

একজন মা যখন ছোট একটি শিশুর হাত ধরে একটি পৃথিবী তৈরী করতে শুরু করে তখন পথে পথে তার অনেক কাঁটা পেরিয়ে যেতে হয়। তারপরও তাকে শিশু মুখটি মনে করিয়ে দেয় ‘মা আমার তো কোন দোষ নেই । আমি যে বড় হতে চাই।’ আর মা তার জীবনের স্বপ্নকে দেখতে শুরু করে সন্তানের জীবনের বড় হয়ে উঠার মধ্য দিয়ে।

পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের অমতে ভালাবেসে বিয়ে করে সংসার সাজিয়েছিল অনন্যা। নামের মতো তার জীবনটাও তাকে অনন্যা করে ফেলেছে। লোকপ্রশাসনে পাশ করিও ভালোবাসা দিয়ে ঘরনী হবার সখে তৈরি করলো না নিজের ক্যারিয়ার।  আর এই ঘরমুখী জীবনের মোহের খেসারত দিয়ে যাচ্ছে আজ অবধি।

আধুনিক মানুষ হয়েও সে যেন পুরোদমে এক বাঙালী নারী। সাজতে ভালোবাসা বাঙালী নারী, কপালে টিপ পরনে ঢাকাই শাড়ী আর এলো খোঁপাতে কাঁটা, এ ছিল তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সাজ। যা দেখে তাকে ভালোবেসে ছিলো  জয়। তবে বিয়ের পর বছর তিনের মাথায় জযের চিন্তা বদলে যেতে থাকে। অনন্যাকে তার আটপৌরে লাগতে শুরু করে। অবশ্য এজন্য অনন্যা নিজেকেও দায়ী মনে করে।

অতি সাধারণ জয়কে সে তার আধুনিক পরিবেশ মানিয়ে নিতে গিয়ে নিজেই সেকেলে হয়ে গেছিল। নিজের বুকের ভিতরে ছাই চাপা আগুন নিয়ে বসবাস। কাউকে কিছু বলার নাই। জয় সব সময় নানাভাবে চেষ্টা করে অনন্যার বাবার সম্পত্তি তার নামে করে নিতে। বাবা-মা প্রথমে আপত্তি করলেও আদুরে মেয়েকে বেশী দিন দূরে রাখতে পারেনি। আর মেয়ের আয়েশী জীবনকে ঠিক রাখতে প্রতি মাসে টাকা দিতো বাবা-মা আলাদা করে।  মা-বাবার এই কেয়ারিংটাই অনন্যাকে চিনিয়ে দেয় আসল জয়কে।

এর মধ্যেই তাদের সংসারে আসে অনামিকা। এবার যেন অন্য এক সংগ্রামের পথে পা বাড়ালো অনন্যা। জয় তার ঔদ্ধত্য জীবন দিয়ে তাকে মানসিকভাবে নির্যাতন করতে শুরু করলো।

আর এই নির্যাতন এতটাই ভয়াবহ যে নিজের আত্মসম্মান বোধকে আঘাত করে। মা বাবাকে কিছু বলতে পারে না অনন্যা। কারণ তারা মেয়ের জন্য তাদের সবকিছু দিতে রাজী। আর এটা হতে দিবে না অনন্যা। তাই সে অনেকটাই দূরে থাকে মা-বাবা থেকে। অনামিকা যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করছে, তখনই অনন্যা সিদ্ধান্ত নিলো আর যাই হোক অবিশ্বাস-সম্মান ছাড়া যেমন ভালোবাসা হয় না, তেমনি ভালোবাসার নাটক করে সে তার সন্তানকে বড় করবে না।

অনন্যা আর পারলো না সংসারের মিছে মোহতে নিজেকে আবদ্ধ রাখতে। অনেক হয়েছে এবার  নিজেকে নিজের পরিচয় তৈরি করতে হবে। একা পথ চলে মেয়েকে শেখাবে জীবনের সত্যিকারের অর্থ।

ঘর ছাড়ে অনন্যা নিজের কিছু জমানো টাকা নিয়ে । নিজের মতো করে আবার সাজায় মা – মেয়ের সংসার। বন্ধু – বান্ধবদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা কাজের আলাপের চেয়ে তার জীবনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বুকের ঘা’টাকে আরো বাড়িয়ে দিতে শুরু করলো। ওদেরও মাড়িয়ে যায় অনন্যা, পথ হাঁটে, নিজের গড়া নতুন পথে।

শেয়ার করুন: