
মাসুদা ভাট্টি: বাংলাদেশ একটি যুগ-সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়ে আছে এই মুহূর্তে। ইতিহাসে এরকম সন্ধিক্ষণের ভেতর দিয়ে প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী বা দেশকেই যেতে হয়। ইংল্যান্ড, আমেরিকা কিংবা ইউরোপের জাতিরাষ্ট্রসমূহ, যারা আজকে নিজেদের সভ্যতাকে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছে, তারাও এরকম সময় অতিক্রম করেছে। যে সময়টিতে তাদের ইতিহাসের অনেক কালো ক্ষত সারিয়ে তুলে সামনের দিকে পা ফেলতে হয়েছে।
যেমন ধরুন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জার্মানির অবস্থা। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সরকারের পতন হয়েছে, হিটলার আত্মহত্যা করেছে বার্লিনের বাঙ্কারে। রুশ বাহিনী ঘিরে রেখেছে বার্লিনকে। ঠিক সেই সময় মিত্র বাহিনীর নামে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী বার্লিনকে কব্জা করে ফেলে। দেশের ভেতরে ও বাইরে আত্মগোপনে চলে যায় নাৎসি বাহিনীর নেতাকর্মীরা, যারা মাত্র কিছুকাল আগেও গোটা ইউরোপে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এবং হত্যা-নির্যাতন চালিয়েছে। জার্মানির মতো দেশকে তো আর দখল করে রাখা সম্ভব নয়, রুশ বাহিনীকে ফিরে যেতে হয়েছে, মিত্র বাহিনীর কাছে দায়ভার ছেড়ে দিয়ে। এমতাবস্থায় জার্মানির নতুন সরকারের কাছে মহা আতঙ্কের বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছিল, কাদের নিয়ে তারা সরকার পরিচালনা করবে? কোন ফাঁক-ফোকড় দিয়ে হিটলারের সমর্থকরা সরকারে ঢুকে পড়বে, রাষ্ট্র বা সমাজে জায়গা করে নেবে তা নিয়ে সকল পক্ষই যারপরনাই শঙ্কিত ছিল। এরই মধ্যে মিত্র বাহিনীর স্থায়ী ঘাঁটি হলো জার্মানিতে, তারাও দখলদারী হয়ে না ওঠে সে বিষয়েও কড়া নজর রাখতে হচ্ছিল, কারণ, জার্মানির স্বাধীনচেতা নাগরিকের কাছে যদি মনে হয় যে, মিত্র বাহিনীর নামে দখলদার বাহিনী সে দেশে রাজত্ব শুরু করেছে তাহলে পরিস্থিতি যে কোনো মুহূর্তে বদলে যেতে পারে। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর পরই জার্মানি যে সঙ্কটে পড়েছিল তাকে সে দেশের জাতি-ইতিহাসের সবচেয়ে অন্ধকার কাল হিসেবে দেখা হয়ে থাকে।
কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে যুদ্ধোত্তর জার্মানি এগুতে থাকে, পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে পড়ে বটে, কিন্তু সেটা কার্যত মিত্র বাহিনী নামে ধনতান্ত্রিক শক্তির একচ্ছত্র নট-ঘট চক্রান্তের কারণে। কিন্তু সেই সময় দেশটাকে গুছিয়ে রেখে সামনের দিকে এগুনো যে মোটেও সহজ কাজ ছিল না, সেটা সাধারণ রাজনৈতিক জ্ঞান দিয়েও উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু সেই সময় যদি নাৎসিদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না করে জার্মানি এগুতে চাইতো কিংবা তাদেরকে রাষ্ট্র বা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ করে দিতো কোনও জার্মান জেনারেল (বাংলাদেশে যেমন জেনারেল জিয়া করেছেন) তাহলে পরিস্থিতি কী হতো?
যাদেরকে তারা রেখে যাচ্ছে, মানে তাদের সন্তানেরা, তারা রক্তবীজের ঝাড়ের মতোই। একে নয়, দুয়ে নয়, লাখে লাখে ছড়িয়ে পড়বে এদেশে। তারা তাদের পিতাদের ইতিহাসকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো এদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীদেরও গলা টিপে ধরতে পারবে। রাজাকার গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, মীর কাশেম, সাকা চৌধুরী, কামারুজ্জামানদের সন্তান-সন্ততি যাদের আমরা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে দেখি, তাদের কথা-বার্তা, দম্ভ, শরীরের ভাষা আমাদের কি এরকম ইঙ্গিত করে না?
অনেক বিশ্লেষকই বলে থাকেন যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে হিটলারের নিকট সহকারীদের একজনও যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই ইউরোপের ইতিহাস নতুন করে লিখতে হতো। অর্থাৎ তাদের দুষ্টবুদ্ধির খপ্পড়ে একবার ইউরোপ পড়লে, তা থেকে মুক্তি খুব সহজে আসতো না। বাংলাদেশে যেমনটি হয়েছে, ৭৫-এর পরে মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধীদের হাতে পড়ে জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন বিসর্জন হতে বসেছিল।
জার্মানিতে হিটলারের নিকটজন বলে যারা পরিচিত ছিল তাদের সকলের কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন তোলা যেতে পারে যে, এদের পরবর্তী বংশধরদের অবস্থা কী? জার্মানির সমস্ত মানুষ তো আর আহত-নিহত হয়নি, কিংবা হিটলারের একেকটি প্যারেডে যে লক্ষ লক্ষ জার্মান উপস্থিত হয়ে হিটলারকে “হাইল হিটলার” বলে সম্বোধন করে,ছে তাদের সকলেরই কি বিচার করা সম্ভব হয়েছে? উত্তর হচ্ছে, না। কিন্তু যুদ্ধপরবর্তীকালে তাদের হিটলারি-মানসিকতা দূর করতে নানাবিধ মনস্তাত্ত্বিক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং চিহ্নিত করা হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের সেই সমস্ত “এলিমেন্টকে” যারা তখনও নাৎসি-মানসিকতা নিয়ে সমাজে রয়েছে। তারা যাতে কোনও ধরনের তৎপরতা চালাতে না পারে সে জন্য আইন করে বন্ধ করা হয়েছে নাৎসি পার্টিকে, প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য কোনও ধরনের তৎপরতাই যাতে না চালাতে পারে তারা, সেটা খুব শক্ত নজরদারীর ভেতর দিয়ে নিশ্চিত করা হয়েছে। যে কারণে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের এতো বছর পরও জার্মানিতে নাৎসিবাদ তথা উগ্রবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। বরং সাধারণ জার্মান সমাজে নাৎসিবাদ বা উগ্রবাদের প্রতি রয়েছে কঠোর নিন্দাসূচক মনোভাব। অন্ততঃ উপরিতলে কেউ সেটা প্রকাশ করার সুযোগ পান না বা করেন না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতিহাসের যে যুগসন্ধিক্ষণের ভেতর দিয়ে জার্মান জাতি গিয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে হিটলারপন্থীদের কঠোর বিচার করার ভেতর দিয়ে তারা নিজেদের পরিশুদ্ধ করেছে। নতুন দিনের উদার মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যে কারণে আজ প্রায় লাখখানেক বাঙালিসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অভিবাসী সে দেশে নিজেদের তৃতীয় প্রজন্ম নিয়ে শান্তিতেই বসবাস করতে পারছে। অথচ হিটলারের হাতে ৬ মিলিয়ন ইহুদিই কেবল নিহত হয়েছে ইউরোপে, ভাবা যায়?
চোখ ফেরাই বাংলাদেশের দিকে। বাংলাদেশে স্বাধীনতা-বিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া একটি অন্ত বা শেষ-এর দিকে এগুচ্ছে। অন্তত হিটলারের ঘনিষ্ঠজনের মতো এদেশেও যারা পাকিস্তানি বাহিনীর ঘনিষ্ঠতম সহযোগী হিসেবে বাঙালি-নিধনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছে তাদেরকে দীর্ঘ ৪০ বছর পরে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। একেকজনের শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে, মৃত্যুদণ্ডাদেশ হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তারা দুই হাতের চার আঙুলে “ভি” চিহ্ন দেখিয়ে আনন্দোল্লাস করে কখনও জেলখানায় ঢুকছে, কখনও আদালত থেকে বেরুচ্ছে, কখনও গাড়িতে চড়ছে। তাদের সন্তানদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি যে, তারা অনুতপ্ত তো নয়ই, বরং তারা উস্কে দিচ্ছে স্বাধীনতা-বিদ্বেষ।
সবচেয়ে বিপদে পড়তে হয়েছিল এদেশের মিডিয়াকে। তারা “নিরপেক্ষতা” বা “ব্যালান্স”-এর জন্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনও ব্যক্তির সঙ্গে টক শো’য় একজন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের ব্যক্তিকে বসিয়েছে এবং যথারীতি বিপক্ষের ব্যক্তিটি তীব্র মিথ্যা দিয়ে পক্ষের মানুষটিকে আঘাত করেছে। এ যেন নতুন করে ৭১-এর ফিরে আসা।
তারা এখনও সেই পাকিস্তান আমলের মতোই নিজেদের শক্তিমান মনে করছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন করা যেতে পারে যে, এখনও এই শক্তির উৎস কোথায়? উত্তরটাও বোধ করি আমাদের সকলেরই জানা। তারা মনে করছে যে, যে কোনো মুহূর্তেই পাশার দান উল্টে দিতে পারলেই তারা সরাসরি বঙ্গভবনে গিয়ে প্রেসিডেন্টের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে হলেও ফাঁসির আসামি থেকে আবার গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে, তাতে তাদের কোনোই অসুবিধে হবে না। মজার ব্যাপার হলো, তাদের যদি ফাঁসি হয়েও যায়, তাহলেও, যাদেরকে তারা রেখে যাচ্ছে, মানে তাদের সন্তানেরা, তারা রক্তবীজের ঝাড়ের মতোই। একে নয়, দুয়ে নয়, লাখে লাখে ছড়িয়ে পড়বে এদেশে। তারা তাদের পিতাদের ইতিহাসকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে হয়তো এদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসীদেরও গলা টিপে ধরতে পারবে।
রাজাকার গোলাম আজম, নিজামী, মুজাহিদ, মীর কাশেম, সাকা চৌধুরী, কামারুজ্জামানদের সন্তান-সন্ততি যাদের আমরা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে দেখি, তাদের কথা-বার্তা, দম্ভ, শরীরের ভাষা আমাদের কি এরকম ইঙ্গিত করে না? আজকাল এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জেনারেল জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া। লন্ডনে বসে তিনি মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নিয়মিত “বচন” দিয়ে যাচ্ছেন আর এদেশের মিডিয়াকে সেই মিথ্যাচারকে প্রচার করতে হচ্ছে। তারেক জিয়ার এই মিথ্যাচার প্রচারের দায় কেন এদেশের গণমাধ্যম নিচ্ছে, সে প্রশ্ন উচ্চারণের শক্তি এদেশের গণমাধ্যম হয়তো এখনও অর্জন করেনি। আসলে এই মিথ্যাচার দিয়ে ওরা, অর্থাৎ গোলাম, কামারু, মীর কাশেম পুত্ররা বাঙালির “আক্কল” পরীক্ষা করছে, দুঃখজনক হলো, এদের সঙ্গে একই কাতারে স্বাধীনতার তথাকথিত ঘোষক তারেক জিয়ার নামও একই কাতারে উচ্চারিত হচ্ছে আজকাল। কারণ, তারেক জিয়াও একই ভাষায়, একই সুরে ওদেরই মতো মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন সমানে।
২০০৮ সালে যখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ক্ষমতায় আসে তখন থেকেই আমরা দেখেছি যে, যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে আলোচনার তোড়জোড় শুরু হয়। ৭০-এর নির্বাচনের ভেতর দিয়ে যেমন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে একটি সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন তেমনই ২০০৮ সালের নির্বাচনেও দলীয় ইশতাহারে যুদ্ধাপরাধের বিচার সম্পাদন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শেখ হাসিনা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েছিলেন। দেশে এবং বিদেশে এই বিচার প্রক্রিয়ার বিরোধীরা যে গত সাত বছর ঘুমহীন, ক্লান্তিহীন অপপ্রচার চালিয়েছে এর বিরুদ্ধে তার প্রমাণ তো নতুন করে দেবার কিছুই নেই। সবচেয়ে বিপদে পড়তে হয়েছিল এদেশের মিডিয়াকে। তারা “নিরপেক্ষতা” বা “ব্যালান্স”-এর জন্যই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনও ব্যক্তির সঙ্গে টক শো’য় একজন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের ব্যক্তিকে বসিয়েছে এবং যথারীতি বিপক্ষের ব্যক্তিটি তীব্র মিথ্যা দিয়ে পক্ষের মানুষটিকে আঘাত করেছে। এ যেন নতুন করে ৭১-এর ফিরে আসা।
পক্ষের মানুষের সামান্য দুর্বলতার সুযোগেই বিপক্ষের মানুষটি তাকে কথা দিয়ে কেবল আহত করেনি, কখনও কখনও হত্যাও করেছে। সত্যিকার অর্থেই নির্মম ও রক্তাক্ত নিহতের দেখা আমরা পেয়েছি গোটা ২০১৩ সাল জুড়ে। ১৯৭১ সাল যারা দেখেনি তাদেরকে ২০১৩ সালকে মনে রাখতেই হবে, মুক্তিযুদ্ধ এর চেয়ে অনেক ভয়াল-ভীষণ ছিল ঠিকই, কিন্তু ২০১৩-ও কম যায় না, রাষ্ট্র ও নতুন মুক্তিযোদ্ধারা এই ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ আঘাতের মুখোমুখি হয়েছে এবং বলাই বাহুল্য আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তারা বিজয় অর্জন করেছে।
এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা চিনে গেছি কে আমাদের শত্রু, কে আমাদের মিত্র, কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, কে বিপক্ষে, কে মাঝে দাঁড়িয়ে খেলা দেখে আর অর্থ উপার্জনের পথ খোঁজে।
এই যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া চলার সময়টা এদেশের গণমাধ্যমের জন্য বহুবিধ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, নিরপেক্ষতার নাম করে জাতি-ইতিহাসকে বিকৃত করার সুযোগ দেওয়া যে কোনও ভাবেই সমীচীন নয় এবং গণমাধ্যমের নীতির মধ্যেও তা পড়ে না, সেটি এখন প্রমাণিত হয়েছে। নইলে চাঁদে সাঈদীর ছবি দেখিয়ে মানুষ হত্যা করার বিষয়টিকেও আমাদের নিরপেক্ষতার নামে বৈধতা দিতে হয়, কারণ, এটিও ওপক্ষের একটি কৌশল ছিল বটে!
আমরা সেই কৌশল-কাল কাটিয়ে এসেছি। সে কারণেই বলেছি যে, আমরা আমাদের জাতি-ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছি। এই সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আমরা চিনে গেছি কে আমাদের শত্রু, কে আমাদের মিত্র, কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, কে বিপক্ষে, কে মাঝে দাঁড়িয়ে খেলা দেখা আর অর্থ উপার্জনের পথ খোঁজে। বিগত ৭ বছর এই শত্রুদের চেহারা দেশের টেলিভিশনগুলোই আমাদের বেশি করে চিনিয়েছে। সেদিক দিয়ে গণমাধ্যমকে আমাদের ধন্যবাদও জানাতে হবে। নইলে, এতদিন এরা অন্তরালে ছিল এবং অন্তরালেই থেকে যেত।
এখন আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা আমাদের ২০১৪ সালে এমন এক অবস্থানে এনে ফেলেছেন, যেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিটি নাগরিককেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আমরা আগে যেতে চাই নাকি পেছনে ফিরতে চাই। পেছনে স্বাধীনতা-বিরোধী, রাজাকার, আল-বদর আর জঙ্গীবাদীদের রাজনীতি আর সামনে এক নতুন অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের হাতছানি। এর আগে যা কিছু হয়েছে তার থেকে শিক্ষা না নিয়ে যারাই সামনে আর একটি পা-ও এগুবেন, তারাই নিশ্চিতভাবে খাদে পড়বেন। এখন আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে যে, আমরা খাদে পড়তে চাই, নাকি দাঁড়িয়ে থাকতে চাই, নাকি এগুতে চাই।
সময়ের প্রয়োজনে যে দায় শেখ হাসিনার ওপরে এসেছিল, তিনি সেটুকু করেছেন। বাকিটুকু আপনার, আমার দায়িত্ব। স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যারা তারাই স্বাধীনতাবিরোধী জঞ্জাল পরিষ্কার করার দায়িত্ব নিয়েছেন। এবার নতুন স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের। আশা করি, প্রকৃত শত্রু বা মিত্র চেনার মতো “আক্কল” এই ৪০ বছরে বাঙালির হয়েছে।
লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক।
ইমেইল: [email protected]