১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা: নিজামী-বাবরসহ ১৪ জনের ফাঁসি

10 truck armsউইমেন চ্যাপ্টার: চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির ও জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী এবং বিএনপি নেতা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

১০ বছর অপেক্ষার পর বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

অস্ত্র চোরাচালান মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সামরিক কমান্ডার পরেশ বড়ুয়া, সাবেক শিল্পসচিব নুরুল আমিন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবদুর রহীম, পরিচালক উইং কমান্ডার (অব.) সাহাব উদ্দিন আহাম্মদ, উপপরিচালক মেজর (অব.) লিয়াকত হোসেন, এনএসআইয়ের মাঠ কর্মকর্তা আকবর হোসেন খান, সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহসিন উদ্দিন তালুকদার, মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) কে এম এনামুল হক, হাফিজুর রহমান, দীন মোহাম্মদ ও হাজি আবদুস সোবহান। এদের মধ্যে পরেশ বড়ুয়া ও নুরুল আমিন পলাতক। হাজি আবদুস সোবহান জামিন ছিলেন। তবে আজ আদালতে হাজির ছিলেন। অস্ত্র চোরাচালান মামলায় ৩৮ জন খালাস পেয়েছেন। আসামি ছিলেন ৫২ জন।

অস্ত্র আইনের একটি ধারায় তাদের সবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও আরেকটি ধারায় সাত বছর জেল দিয়েছে আদালত।

মতিউর রহমান নিজামী রায়ের পর বলেন, ‘আমার প্রতিক্রিয়া আমার আইনজীবী দেবেন। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করব। যে রায় দেওয়া হয়েছে তা অন্যায়ভাবে দেওয়া হয়েছে।’

Babarরায় শুনে আদালতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর বলেন, ‘ন্যায়বিচার হয়নি। এই বিচারে আমি ন্যায়বিচার পাইনি। এই বিচারকের পরও বিচারক আছেন। তিনি আল্লাহ। আখের রাতে আমি সেই বিচারকের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাব।’

তিনি বলেন, ‘কাউকে খুশি করার জন্য এ রায় দেওয়া হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করি, এই বিচারক যিনি অন্যায়ভাবে রায় দিয়েছেন, তাঁরও যেন বিচার হয়। তাঁর সন্তানেরাও যেন এই অন্যায় বিচারের সাজা ভোগ করে।’

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদী তীরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরক্ষিত জেটিঘাটে দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ আটক করে।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সর্ববৃহৎ চালান ধরা পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

পরে তদন্তে দেখা যায়, সমুদ্রপথে চীন থেকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘উলফা’র জন্য আনা এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

ওই ঘটনায় চোরাচালান ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় আসামি ছিলেন মোট ৫২ জন, যাদের মধ্যে ৩৮ জনকে খালাস দিয়েছে আদালত।

চোরাচালান মামলায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ বি ও ২৫ ডি ধারায় ১৪ আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন বিচারক। একইসঙ্গে হাই কোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে তাদের ৫ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

আর অস্ত্র আইনের ১৯ এ ধারায় ওই ১৪ জনকেই দেয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এছাড়া অস্ত্র আইনের মামলার ১৯ এফ ধারায় তাদের সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

উভয় সাজা যুগপৎ কার্যকর হবে। আর দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে যারা এতোদিন কারাগারে ছিলেন, ওই সময় তাদের সাজা থেকে বাদ যাবে।

১৪ জনের মধ্যে নুরুল আমিন ও পরেশ বড়ুয়া শুরু থেকেই পলাতক। হাজি আবদুস সোবহান জামিনে থাকলেও রায়ের পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

শেয়ার করুন: