মাসকাওয়াথ আহসান:
ঝলকে ঝলকে রেমিটেন্সের জন্য কান্না আর কেমিকেল আলীর জাস্টিফিকেশান ধারাপাত যেন কিছুতেই জমছে না। সেজেগুঁজে রাত-বিরেতে পশ্চিমা দূতদের কাছে ধর্ণা দিয়ে, মেট্রোশোকের গান গাইতে গিয়ে উলটো বে-আইনি শক্তিপ্রয়োগের অভিযোগ শুনতে হচ্ছে। আর ভাতের হোটেল এমন ফ্লপ মেরেছে যে তা বন্ধ হবার জোগাড়।
অগত্যা ডাক পড়ে এমনকি ডামি ভোটে হেরে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়া হিন্দিভাষী প্রবীণ ও ফ্যাসফেসে কণ্ঠের জাঢ্য কিংবা অক্সিজেনের অভাবে মুখ হা করে থাকা জরদগবের।
সবার প্লেটে দুটো সয়া বিস্কিট, আর এক কাপ দুধ চিনি ছাড়া সবুজ চা। একটা বিস্কিট চায়ে ভিজিয়ে মুখে তুলতে গিয়ে ভেঙ্গে পড়ে যায় জরদগবের। এরপর বড় বড় শ্বাস নিয়ে তিনি বলেন, ব্যাপারটা অনেকদূর গড়িয়ে গেছে। আটশো লাশ ধামাচাপা দিলেও দুটো লাশ মাথা উঁচিয়ে বলছে, স্টেপ ডাউন স্টেপ ডাউন!
ফ্যাসফেসে কণ্ঠের জাঢ্য বলেন, রাজাকার বলে দাগিয়ে দিয়ে ব্যাপারটা ব্যাকফায়ার করেছে। এখন জামায়াত বলে দাগিয়ে দিয়ে যদি আরো ব্যাক ফায়ার করে!
হিন্দীভাষী প্রবীণ বলেন, এখন তো কুচ করনা হোগা। আমরা উস লোগোকো জামায়াত বোলেঙ্গে, গদিজি খুশি হোয়েঙ্গে। গদি মিডিয়া তো বোল রাহাহে, জামায়াত, জামায়াত! কাজ হো জায়েঙ্গে। আব মে সংসদমে হোতে তো সব কুচ বলতে। লেকিন প্রশাসন মুঝে হারা দিয়া।
কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হিন্দী প্রবীণ।
ফ্যাসফেসে জাঢ্য বলেন, কান্না থামান; আনার ফানারের শূন্য আসনে আপনাকে জিতিয়ে আনা যাবে, আগে “গদি বাঁচান”।
জরদগব জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলেন, বাঁচন আর নাইরে কালু, বাঁচন আর নাই, তিস্তা নদীটা মাও সে তুং-কে দিয়ে দিলেই হতো। টাকাও আসতো, সঙ্গে সমর্থন। এখন এই পকেট খালি গদিজীকে খুশি করতে গিয়ে আমও গেলো, ছালাও গেলো।
চাণক্যর মতো চকচকে টাকে হাত বুলিয়ে টিনের তলোয়ারের জেনারেল বলেন, যুদ্ধটাকে ছাত্রছাত্রীর মাঠ থেকে সরিয়ে জামায়াতের মাঠে নিয়ে যেতে হবে। এমন কিছু করা দরকার যাতে অনেক দাড়ি ও টুপি রাস্তায় নেমে আসে। তখন বেশ পশ্চিমা দূতদের বলা যাবে, ঐ দেখো তালেবান, এখন “ওয়ার অন টেরর” খেলো বাছারা।
ফ্যাসফেসে জাঢ্য বলেন, আমরা তো সেই ২০১৩-তে বলেছিলাম জামায়াত নিষিদ্ধ করুন। তা তো শুনলেন না, উলটো বললেন, দেশ চলছে মদিনা সনদের অধীনে। আমাদের দুই বন্ধুকে জোর করে হজে পাঠালেন। কার্ল মার্কস জিভ কেটেছিলো লজ্জায়!
তিনি এবার কথা বলেন, স্বজন হারানোর কষ্ট আমি বুঝি। দেড়শো নিহতের পরিবারকে চেক, রুপচান্দা ঢেউ টিন ধরিয়ে দিলেই শব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। শোক পালন করছি ওদের জন্য। নিহতদের পরিবারগুলোকে নিয়ে “কোটার কান্না” নামে সংগঠন গড়ে সেইখানে সাংস্কৃতিক ঘোঁটকে কাফন পরিয়ে নাটক করালেই কেল্লা ফতে। অ মুকুল, আমারে একটু গ্লিসারিন দে।
টিনের তলোয়ারের জেনারেল টাকলা বলেন, তাহলে সিদ্ধান্ত হলো জামায়াত নিষিদ্ধ। এই সিদ্ধান্তের অনেকগুলো ডমিনো এফেক্ট থাকবে। দাড়ি-টুপিরা রাস্তায় নামবে। ইসলামি ব্যাংক খেয়ে যে যুবকেরা আজ শত কোটি টাকার মালিক, তাদের মাথায় পতাকা বেঁধে শাহবাগ টু শহীদ মিনার চেতনা সিটিং সার্ভিস বাসে বসিয়ে দেয়া হোক, শ্লোগান থাকবে, আমার মাটি আমার মা; তালেবানের ঘাঁটি হবে না! আরেকবার আস্তিক-নাস্তিক বিভাজন করে চাপাতির আয়োজন করতে হবে। সেন্টার ফর রুথলেস ইন্টেলিজেন্স (ক্রাই) এই ইভেন্টগুলো করে ফেলবে! তিনি বলেন, যা করুন তা করুন, মেট্রোরেলের যেন কিছু না হয়।
হিন্দিভাষী প্রবীণ বলেন, আপকি পিয়নকা ৪০০ কোটি হ্যায়; দুশো কোটি দিয়ে দিলেই ভাঙ্গা স্টেশন মেরামত হো যায়েঙ্গে।
তিনি ফিসফিস করে বলেন, রেমিটেন্স এসেছিলো পরশু, কাল কেন আসেনি!
জেনারেল টাকলা বলেন, ছাত্রদের ধরপাকড় শেষ হলেই, জামায়াত ধরপাকড় শুরু হবে। তখন তারা গা ঢাকা দিলে আমরা শুরু করবো জঙ্গি অভিযান। তখন দেখবেন পশ্চিমারা ঠিকই, ওয়ার অন টেররের গান গেয়ে দেবে।
তিনি মুচকি হেসে বলেন, এখন বুঝি বেয়াই সাহেব কেন আপনার মাথার সব চুল পড়ে গেছে। আপনাদের সবার জন্য একটু ভুনা খিঁচুড়ি রান্না করেছি, খেয়ে যাবেন কিন্তু।