মা এখন ভারমুক্ত!

ফাহমিদা খানম:

বাসাটা খুঁজে বের করতে কষ্ট হলো বেশ, এ রকম একটা ঘিঞ্জি এলাকায় মা থাকেন ভেবে অবাকই হলাম। বেল দেবার পরে একজন গেট খুলে পরিচয় জানতে চাইলেন, তারপর রুমে বসিয়ে ভেতরে গেলেন, কিছুক্ষণ পর ঘামেভেজা মুখে মা আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।

“কী ব্যাপার, আমাকে আবার কীসের জন্য খুঁজে বের করেছো? ”
“মা, তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি, এটা জানতে এসেছো, নাকি অন্যকিছু ব্যাপার আছে?”

আমার সমস্ত আবেগের মুখে পানি ঢেলে দিয়েও মায়ের নির্বিকার আর ভাবলেশহীন চেহারা দেখে মনে হলো মা চিরকাল আমাদের অজানাই রয়ে গেলো, নাকি আমরাই তাকে বোঝার মতো সক্ষমতা অর্জন করতে পারিনি!

“মা, একটু বসবে? আমি কথা বলতে এসেছিলাম।”
“তুমি বরং আমার রুমে গিয়ে বসো, আমি এখানে সাবলেট থাকি।”

মায়ের পিছনে একটা ঘরে নিয়ে বিছানায় বসতে দিলেন, ফ্যান ছেড়ে দিয়ে আসছি বলে বেরিয়ে গেলেন মা। রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম খুবই গোছানো। আজীবন এই এক অভ্যাস তার। এক কোনায় একটা টুলের উপরে মাটির কলস দেখে চোখে পানি এলে-ও নিজেকে সামলে নিলাম। ঘরে আলো-বাতাস তেমন নেই, আর ফ্যানটা মাথার উপরে চললেও যথেষ্ট গরমই। গত পাঁচটা বছর মা তীব্র অভিমানে আমাদের কাছ থেকে দূরে একাই থাকেন। ভুল ভাঙ্গার পরে অসংখ্যবার তাকে নিয়ে যেতে চাইলেও সে বাসা বদলে ফেলে।
এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবত আর কাঁচা পেয়ারা কাসুন্দি দিয়ে মেখে এনে সামনে দিলেন মা। অজান্তেই চোখে পানি এলো, আমার পছন্দের খাবার এখনও ঠিকই মনে রেখেছেন তিনি, অথচ …
“অনেক তো হলো মা, এবার অন্তত বাড়ি ফিরে চলো”
“তুইতো ঠাণ্ডা লেবুর শরবত পছন্দ করিস, ওটা আগে খেয়ে নে”

আমার কথাগুলো মা কি শুনতে পায়নি, নাকি ইচ্ছা করেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইছেন!
মায়ের চোখেমুখে লেপ্টে রয়েছে ক্লান্তির ছাপ, মাকে বয়সের চাইতেও বয়স্কা লাগছে, আজীবন কেবলমাত্র যুদ্ধ করলেন, সুখের দেখা পেলেন কই! কিছু দিতে চাইলেও সবিনয়ে ফিরিয়ে দেয়।

ছোটবেলায় আমাদের সুন্দর একটা পরিবার ছিলো, বাবাকে তেমন কাছে পাইনি, কারণ ভাগ্য বদলানোর জন্যে সে বহু ঘাট ঘুরে স্বপ্নের দেশ আমেরিকা পৌঁছে যায়। কাগজপত্র হয়নি বলে দেশে না ফিরলেও মাঝেমধ্যে কিছু টাকা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতো। মা একাই যুদ্ধ করতেন, দাদী বেঁচে থাকতে মায়ের ভুল ধরলেও দাদা সবসময়ই মায়ের পক্ষেই থাকতেন। একা হাতে সংসার সামলে কেউ যখন মাকে কিছু বলতো, মা নিশ্চুপ হয়ে থাকতেন, কিন্তু রাতভর কান্না করতেন। বাবা ফোন দিলেই জিজ্ঞেস করতেন কাগজপত্র আসার আর কতটা দেরি? বাবার সাথে স্মৃতি বলতে তেমন কিছু মনে পড়তো না। আমরা দুই ভাইবোন বাবার জন্য তীব্র আকুলতা নিয়ে অপেক্ষা করতাম। সবার বাবা পাশে আছেন দেখে আমাদের মনে হতো আমাদের কিচ্ছু লাগবে না, বাবা ফিরে আসুক।

হুট করেই বাসার পরিবেশ কেমন যেন গুমোট হয়ে গেলো, বড় মামা আমাদের নিয়ে যেতে এলেন। এই প্রথম দাদীর ভয়ার্ত চেহারা দেখে বুঝে গেলাম হয়তো ভয়ংকর কিছু হয়েছে। পাশের রুম থেকে মামার উঁচু কণ্ঠস্বরে জানলাম, বাবার চাপে মামারা নাকি বেশ বড় অংকের টাকা বাবাকে দিয়েছেন, আর বাবা অকৃতজ্ঞতার কাজ করেছেন বলে এই বাসায় মা আর আমাদের এখানে থাকার আর দরকার নাই। বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে, কিন্তু কেউ-ই আমাদের সামনে কিচ্ছু বলছে না। দাদা মামার কাছে কথা দিলেন সত্যিটা জেনে উনি নিজেই মাকে দিয়ে আসবেন। আমাদের জানা হলো না কী সত্যি কথা! তবে মা আমাদের দুইজনকে নিয়ে মামাবাড়ি এলেও এখানে সত্যিকার অর্থে আমরা তেমন ভালো ছিলাম না, মামীরা দুই সন্তান নিয়ে উঠায় খুশি হতে পারেননি। চোখের সামনে মামাতো ভাইবোন আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য মামীরা করলেও মামাদের সামনে একদম ভালো চেহারা দেখাতেন, মা’য়ের অসহায় চেহারা দেখে আমরা চুপ হয়ে থাকতাম, বুঝেছি মা-ও ভালো নাই। হুট করে খবর এলো দাদীর শরীর খুবই খারাপ, আমাদের দেখতে চান। মামারা রাজি না হলেও মা আমাদের দুজনকে নিয়ে রওনা দিলেন। বাসায় আসার তিনদিন পরেই দাদী চলে গেলেন না ফেরার দেশে, সংসারে আর কেউ-ই ছিলো না। ফুফুদের বিয়ে হয়ে গেছে, আর চাচাও বিয়ে করে এই সংসারে ফিরেনি। বাবাকে খবর দেওয়ার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। মা আবার সংসারের হাল ধরলেন, আর মামারা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন এখানে থাকলে তারা বোনের সাথে সম্পর্ক রাখবেন না।

দাদা কীভাবে যেনো এলাকার কিন্ডারগার্টেনে মায়ের একটা চাকুরি জুটিয়ে দিলেন। শুরু হলো নতুন আরেকটা যুদ্ধ। মৃত্যুর আগে দাদাভাই মাকে প্রাণভরে দোয়া করেছিলেন তার শেষ জীবনটা যেনো আল্লাহপাক অনেক সুন্দর করে দেয়। আমাদের তিন রুমের বাসায় মা এক রুম রেখে বাকি দুই রুম ভাড়া দিয়ে দিলেন। আমার তখন কৈশোর মাত্র আর বোনটাও দুই বছরের ছোট, বাসায় বন্ধুদের আনতে পারতাম না বলে মায়ের উপর তীব্র অভিযোগ আর অভিমান জন্মালো। বাইরের জগত বন্ধ করে আমরা দুইজন সারাদিন বইয়ে মুখ ডুবিয়ে দিলাম। আমাদের রেজাল্ট ভালো ছিলো, নতুন ক্লাসে উঠলে মা আমাদের পুরাতন নোট কপি করতেন রাতের বেলায়, তারপর সেগুলো বিক্রি করতেন। কী লজ্জায় কুঁকড়ে যেতাম, কিন্তু মা ছিলো নির্বিকার, আর ভাবলেশহীন। মায়ের সাথে আমাদের ধন্দ শুরু হলো, কিন্তু মা আমাদের সেসব কষ্ট বোঝার বা অনুভব করার ক্ষমতা ছিলো না।

বাড়িতে ফুফু বা চাচা এলে মাকে অনেক কথা শোনাতো।
“সাবলেট দিয়ে মা পরিবারের সুনাম নষ্ট করে দিয়েছেন, আর ছেলেমেয়ে বড়ো হচ্ছে এক রুমে, মা কীভাবে থাকেন!”
আমাদের মনের ভেতরের কথা বুঝতেন বলে তাদেরকে আপন মনে হতো, কিন্তু সংসার কীভাবে চলে সেটা বোঝার ক্ষমতা জন্মায়নি। আমার এসএসসির আগে একটা রুম খালি করে আমাকে দেবার পর মনে হলো, যাক মুক্তি পেলাম, নিজের মতো করে থাকা যাবে। আমাদের খাবার ছিলো খুবই একঘেঁয়ে, আমরা এসব নিয়ে অভিযোগ করলে মা চুপ করে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকতেন, তবে মাঝেমধ্যে মাছ আর মাসে এক দুইবার মাংস রান্না হলেও মা সেদিনই রোজা থাকতেন। আমার ইন্টার পরীক্ষার আগে একদিন পানি খেতে গিয়ে দেখি মা লবণ দিয়ে ভাতের মাড় খাচ্ছেন, আমার অবাক করা চোখের সামনে কাচুমাচু হয়ে বললেন —
“আসলে ভাতের সব পুষ্টি মাড়ে থাকে বুঝলি!”

পর্দাটা চোখের সামনে থেকে সরে যাওয়ার পর আমি স্বাভাবিক হতে পারিনি, পড়ায় মন বসতো না, খাবার গলা দিয়ে নামতে চাইতো না।
“এটুকু যোগাড় করতে আমার অনেক কষ্ট হয়, খাবার নষ্ট করার মতো বিলাসিতা বাদ দাও, দুনিয়ায় অনেক মানুষ আছে যাদের এতোটুকুও জোটে না”।
আমরা দুই ভাইবোন চুপ করে কথা শুনেছি, কারণ মা এভাবে কখনো কিছু বলেন না, মায়ের সময় কই? স্কুল থেকে এসে বাড়ির আশেপাশে থেকে কচুশাক আর হেলেঞ্চা শাক তুলতে হবে, দিনের পর দিন এসব খেতে খেতে আমাদের বিরক্তি এসে গিয়েছিল।

অবশেষে একদিন ফোন এলো পাশের বাসায়, বিল পরিশোধ না করায় আমাদের ল্যান্ড ফোন কেটে দিয়েছিল। আমরা জানলাম বাবা দেশে আসছেন, খুশিতে ডগমগ হলেও মায়ের চোখের তারা একই রকম নিষ্প্রভ ছিলো। বাবা আসার আগে ফুফুরা আর চাচা সবাই এসে হাজির, বাসা ভর্তি মানুষ, মেহমানদারিতে ব্যস্ত মা এক ফাঁকে এসে সবাইকে নাস্তা, শরবত দিয়ে আবারও রান্নাঘরে চলে গেলেন, আমার মনে হলো আজকের দিনে ফুফুরা অথবা অন্য কেউ এই দায়িত্ব নিতে পারতো। মায়ের মুখ দেখে অবশ্য বোঝার উপায় নাই সে কী চায়!

বাবা ফেরার পর আমরা ভেবেছিলাম মা হয়তো আগের মতো হয়ে যাবেন, হাসিখুশি পুরানো সেই মা! কিন্তু মাকে বাবার সামনে আড়ষ্ট দেখে মনে হতো মা আজীবন দুর্ভেদ্য রয়ে গেল! যাবার আগে বাবা মায়ের নামে একটা জমি কিনে দিলেন, আর পৈর্তৃক বসতবাড়ির অংশটুকুও মায়ের নামে লিখে দিলেন। কিন্তু মায়ের চোখে উচ্ছ্বাস কোথায়? আচ্ছা আমার মা এমন কেনো? অন্য সবার মতো নয় কেনো?

বাবা চলে গেলেন আবারও, আর আমি ইন্টারে এক সাবজেক্টে ফেল করে বসলাম। সেই প্রথম মায়ের চোখে পানি দেখে লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম।
দ্বিতীয় দফা বাবা এলেন ছোট বোনের বিয়ে দিতে, মা অবশ্য একদমই রাজি ছিলেন না, কিন্তু ভালো প্রস্তাব পেয়ে ফুফুরা বাবাকে জানানোর পর বাবা বিয়ের মত দিলেন, মায়ের কথার দাম কেউ-ই দিলো না। এমনকি বোনটা পর্যন্ত ফুফু আর বাবার পক্ষে থাকায় মা একদম চুপসে গেলেন। মায়ের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে কন্যা স্বনির্ভর হোক।

বিয়েতে বাবা কোনো কার্পণ্য দেখাননি, কেবল জৌলুসহীন ছিলো মা। হাজার বলার পরেও বাবার কাছ থেকে নতুন শাড়ি নেননি, আর গহনাদি তার তেমন ছিলো না, স্বামীর বিদেশ যাওয়ার আগে সবই বিক্রি করেছেন। পুরো বিয়ে বাড়িতে সবার পাশে মাকে বড় ম্লান মনে হয়েছে।
বোনের বিয়ের পর বাবাকে চাপ দিলাম আমাদের নিয়ে যেতে স্বপ্নের দেশে, বাবা জানালেন আরো সময় লাগবে …

“এতোদিনেও কি তোমার কাগজপত্র হয়নি? ”
“কিছু ঝামেলা আছে, সেগুলো শেষ হলে তোমাদের নিয়ে যাবো”।
মা সবসময় চুপ থাকেন, আজকে অন্তত কিছু বলতে পারতেন, আমি ভার্সিটিতে পড়ুয়া ছেলে, আমার দৃষ্টিকটু লেগেছে মা বাবার সাথে এক রুমে থাকতেন না, কিন্তু এটা নিয়ে কিছুই বলতেও পারি না আমি। মা সবসময়ই দুর্ভেদ্য রয়ে গেছে। বাবা যাবার পর মায়ের সাথে ধন্দ দেখা দিলো। বাবা দেশে থাকার সময়েই কোথাও দাওয়াত বা বেড়াতে গেলে মা যেতেন না বলে মনের ভেতরে অনেক অভিযোগ জমেছিল। বাবা যাবার আগে বারবার বলেছিল মাকে চাকুরিটা ছেড়ে দিতে, বাবা সংসারের সব খরচ দিবেন, মা রাজি হননি। মায়ের এই অনমনীয় জেদের বিপরীতে বাবাকে অনেক সহজ মনে হতো। আমাদের দুই ভাইবোনের সাথে মানসিক দূরত্ব আসার পরেও মাকে দেখেছি চুপ করে থাকতে, কখনও নিজের পক্ষে সাফাই গাইতেন না।

ভার্সিটির যে মেয়ের সাথে আমার প্রেম ছিলো তার বাসা থেকে চাপ দেবার পর আমি মা’য়ের কাছে সবই খুলে বললাম। একমাত্র সেদিনই মায়ের চোখের তারা অন্যরকম মনে হলো, মনে হলো মা খুশি হয়েছিল। কিন্তু সেদিন রাত্রিতে মা আমাকে অদ্ভুত একটা প্রস্তাব দিলেন।

“আমি তোমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সে বাড়ি যাবো, ওরা রাজি না হলে তোমরা নিজেরাই বিয়ে করতে পারো, কারণ দুজনেই প্রাপ্তবয়স্ক, কিন্তু তার আগে আমি তোমার বাবাকে ডিভোর্স দিতে চাই। সামাজিকতার এই ভার আমি আর বহন করতে পারছি না।”
আমি মাকে ভুল বুঝে উল্টাপাল্টা অনেক কথা বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম, রাতে বাসায় ফিরে দেখি টেবিলের উপর একটা চিঠি আর বাড়ির দলিলপত্র, যেটা তিনি আমাদের দুই ভাইবোনকে সমান ভাগ করে দিয়েছেন।

“প্রিয় পুত্র আর কন্যা, আমার যাবার কোথাও জায়গা ছিলো না বলে আমি অসহায় হয়ে এতোটা বছর সামাজিকতার এই ভার বহন করে গেছি। আমার প্রতি তোমাদের অনেক অভিযোগ আর অভিমান আছে আমি জানি, আমি সেসবের ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজন মনে করছি না। কোনো একদিন তোমরা হয়তো বুঝবে অথবা বুঝবে না, সেটা নিয়ে আক্ষেপ নাই আমার। আমার দায়িত্ব পালন করেছি আমি। এখন আমি সম্পূর্ণ ভারমুক্ত হয়েছি।
আমার কোনো অভিযোগ নাই”।

মাকে খুঁজে পাওয়ার বদলে ভেবেছিলাম রাগ পড়লে এমনিতেই ফিরে আসবেন। কতটা ভুল করেছিলাম!
বাবাকে সব জানানোর পর তিনি জানালেন, এদেশে তিনি সত্যিই অনেক বছর আগে বিয়ে করেছেন প্রথম স্ত্রী ‘মৃত’, এই বলে, এই ঘরেও তার সন্তান আছে। তবে তিনি আমাদের দায়িত্ব পালন করবেন, কিন্তু একটু দেরি হবে, কারণ প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর সার্টিফিকেট নিতে ভুলে গেছেন।

আমার হুট করে মায়ের ফেন খাবারের কথাই মনে পড়লো। দিনের পর দিন মা যুদ্ধ করে গেছেন শুধুমাত্র আমাদের জন্যই আর আমরা তাকেই ভুল বুঝেছি! বাবার সব কথা জেনেও কখনও বাবার বিরুদ্ধে একটা কথাও উচ্চারণ করেননি, আর বাবা আমার জীবিত মাকে ‘মৃত’ বানিয়ে নিজের স্বার্থে বিয়ে করেও বিন্দুমাত্র লজ্জাও পেলো না? আমরা বাবার মতো স্বার্থপর হয়েছি বলেই কি আত্মাভিমানী মা আমার বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে!

“মা, মানুষ মাত্রই ভুল করে, আমাদের কি ক্ষমা করা যায় না? ”
“এসব কথা থাকুক, যে যার জগতে ভালো থাকাটাই আসল কথা। আমার দোয়া আজীবন তোমাদের জন্যে থাকবেই, একটা আশ্রয় ছিলো না বলে আমি সাহসী হতে পারিনি। তুমি আর তোমার বোন আশ্রয়হীন নও।”

না, পারিনি তাকে ফিরায়ে আনতে, মা বাবার এই বাড়িতে কখনও ফিরবেন না। আমার যুদ্ধ করা মায়ের জীবনে সুখী হওয়া আর হলো কই! তার আত্মত্যাগ সে কাছে থাকতে সন্তানেরা বোঝেনি, এটাই কি কম কষ্টের? আমাদের দুই ভাইবোনের জন্যে বাবা কগজপত্র পাঠালেও আমাদের আর যাওয়ার তীব্র আকুলতা নাই। মায়ের জায়গায় ‘মৃত’ পড়ে বাবার সাথেও যোগাযোগ রাখার আগ্রহ মরে গেছে। আসলে আমরা কেউ-ই মাকে যথাযথ মর্যাদা দিতে পারিনি বলেই হয়তো সে একাকী নির্বান্ধব জীবন বেছে নিয়েছে।

৪/৬/২০২১

শেয়ার করুন: