ধর্ষণ নয়, চুমু হোক সর্বজনীন

নাদিয়া অনি:

চারিদিক উত্তাল ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে। সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সেই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছে। ফেইসবুকের পাতা গরম, টিভি চ্যানেলগুলোর টিআরপি বাড়ছে আর নিউজপেপারগুলো মুখরোচক সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঠিক সেই মুহূর্তেই একটি ভিডিও সামনে আসলো। ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরকে চুমু খাচ্ছে। এটা দেখেই চারিদিকে রে রে পড়ে গেলো। যারা ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করলো তারাও রাগে ফেটে পড়েছে। চারিদিকে ছি ছি পড়ে গেছে। এসব নোংরা ছেলেমেয়েদের জন্যই নাকি ধর্ষণ হয়!

প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনারা কি আদৌ বোঝেন জোর করে চুমু খাওয়া এবং স্বেচ্ছায় চুমু খাওয়া কী? আপনারা কি আদৌ জানেন স্বেচ্ছায় সেক্স এবং জোর করে সেক্স করার মধ্যে পার্থক্য কী? আপনারা কি আসলেই ধর্ষণের মানে বুঝেন?

আপনাদের চিন্তা,লেখা, কমেন্ট, পোস্ট পড়লে বোঝা যায় আপনার আসলে জানেনই না ধর্ষণ কী! যদি জানতেন তাহলে প্রেমিক-প্রেমিকার চুমু নিয়ে মাথা ঘামাতেন না।

ভারতীয় একটা নিউজে দেখেছিলাম, দিনে দুপুরে প্রকাশ্য রাস্তায় একটি ২২/২৩ বছরের ছেলে একটা পাগলিকে রেপ করছে।মানুষ পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে, কিন্তু সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে না। আমাদের অবস্থাটাও ঠিক এমনই।

যখন কেউ খোলা রাস্তায়, বাসে, ট্রেনে, অফিসে, বাসায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয় তখন কেউ এগিয়ে আসে না। সবাই চেয়ে চেয়ে দেখে অথবা এড়িয়ে যায়।

আর যদি কেও ভালোবাসে, পছন্দের মানুষের হাত ধরে বা চুমু খায়, তাহলেই সবাই শিয়াল-শকুনের মতো হামলে পড়বে। রাস্তার ইভটিজার থেকে শুরু করে পাশের বাড়ির কাকু, মহল্লার বড় ভাই, এলাকার পাতিনেতা, পুলিশ, এমনকি রাষ্ট্রের অধীনস্ত কামলারা পর্যন্ত তাদের উপর ঝাঁপিয়া পড়ে। মানুষ থেকে হায়েনাতে পরিণত হয়ে যায়।

জেলার ম্যাজিস্ট্রেটগুলা পার্কে পার্কে যুগল খুঁজে বেড়ায়, অথচ ওদের খোঁজার কথা ছিলো মাদক ব্যবসায়ীদের, দালালদের, দুর্নীতিবাজদের, ধর্ষকদের, ইভটিজারদের।

আজকে যারা চুমু নিয়ে ঘৃণা ছড়াচ্ছেন, আপনারাও কেউ ধোয়া তুলসি পাতা না। আপনারাও পার্কের চিপায় প্রেমিকাকে নিয়ে যান, আপনারাও চুমু খান, আপনারাও রিক্সার হুড তুলে প্রেমিকার বুকে হাত দেন, আপনারাও সুযোগ পেলে প্রেমিকাকে নিয়ে রুমডেটে যান।

প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া হারাম, কিন্তু প্রকাশ্যে ধর্ষণ করা? আরাম? না একদমই না, প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া সমাজের ক্ষতি করে না, এটি অপরাধও না। শব্দভাণ্ডারে ‘কনসেন্ট’ বলে একটা শব্দ আছে। কনসেন্ট এর বাংলা অর্থ সম্মতি বা অনুমতি। আপনি যদি অনুমতি নিয়ে একটা মেয়ে অথবা ছেলেকে চুমু খান, গায়ে হাত দেন,স্পর্শ করেন অথবা সেক্স করেন, তাহলে এই সবটাই প্রেম বা ভালোবাসা।
আর যদি আপনি অনুমতি না নিয়ে সেক্স করেন তাহলে সেটা ধর্ষণ। অনুমতি না নিয়ে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করেন বা চুমু খান তাহলে সেটা যৌন নির্যাতন।

ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে স্পর্শ করা অন্যায় এবং অপরাধ, সেটা আপনার অপরিচিত কেও হলেও অপরাধ, আপনার বর বা বউ হলেও অপরাধ।

তাই চুমুর বিরুদ্ধে আওয়াজ না তুলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে তুলুন, যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে তুলুন, রাষ্ট্রের মৌনতার বিরুদ্ধে তুলুন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে তুলুন। এই আওয়াজটাই কাম্য, বাকি সব তুচ্ছ।

শেয়ার করুন: