দিলশানা পারুল:
সঙ্গত কারণেই মেয়েটার নাম আমি আপনাদের দিচ্ছি না। অনেকটা নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর মতো বলতে হচ্ছে, “এমনকি তোমার নামটাও আমি মানুষকে দেবো না”। মেয়েটা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ্ না যে তাকে নিয়ে কিছু ভাবতে হবে বা লিখতে হবে।
মুশকিল হলো ট্রেন্ডটা ভয়ংকর। এই মেয়েটাসহ আরও কিছু প্রায় বালিকা নারীবাদের নামে অনলাইনে যে ধরনের ট্রেন্ড এর চর্চা করছে এবং এই ট্রেন্ডকে পপুলার করে বা পুঁজি করে নিজের পপুলারিটি কেনার চেষ্টা করছে, সেইটা ভয়ংকর! সেইটা বাংলাদেশের নারীবাদের পিছনে ছুরি বসানোর বাইরে আর কিছু না।

মেয়েটা গুরুত্বপূর্ণ না এইটাই বা বলি কী করে? আমি খুবই অবাক হয়েছি দেখে ১৮ কী ২০ বছরের একটা মেয়ে, মাহা মির্জা তার বন্ধু তালিকায় আছে, কয়েকটা পোস্টে লাইকও দিয়েছে, ব্রাত্য রাইসু তাকে লেখায় ট্যাগ দিয়েছে, মাসরুর আরেফিন তাকে লেখায় ট্যাগ দেয়, মানস স্যার তার সাথে সেলফি তোলে … এতো গুরুত্বপূর্ণ লোকজন যখন তাকে গুরুত্ব দেয়, তার মানে সে গুরুত্বপূর্ণ!
নাম করা লোক দেখে ফেবু ফ্রেইন্ড বানাও। বানিয়ে প্রোফাইলের ওজন বাড়াও। এইটা আমি যে গুরুত্বপূর্ণ এইটা স্ট্যাবলিশ করার একটা সহজ এবং সস্তা তরিকা। এবং কার্যকরি তরিকা। শুধু এই মেয়েটা না। গতকাল রাতে আমি আরও প্রায় চার-পাঁচটা মেয়ের প্রোফাইল খুব মনোযোগ দিয়ে, গবেষণার মন নিয়ে অবজারভ করলাম। অবজারভ করার পর মনে হলো এইটা নিয়ে বলাটা দরকার।
ট্রেন্ডটা কী? নুডিটি এবং যৌনতাকে নারীবাদের নামে পপুলার করা। এবং নিজেরা এই ধরনের চর্চার মধ্যে দিয়ে যেয়ে অন্তত ফেইসবুকে “আমি এই ধরনের চর্চা করি” এই ইমেইজটা তৈরি করা। এখন ফেবুতে এই ধরনের ইমেজ তৈরি করলে লাভ কী? হুর হুর করে আপনার ফ্রেইন্ড এবং ফলোয়ার বেড়ে যাবে।
এখন ব্যক্তিগতভাবে প্রাপ্তবয়স্ক একটা মেয়ে নিজের নুডিটি বা যৌনজীবন প্রোমট করবে না গোপন করবে, সেইটা ধরিয়ে দেয়ার আমি কেউ না। সেই ইচ্ছা বা রুচি কোনটাই আমার নাই। মুশকিল হলো নারীবাদের সাথে যৌনতাকে উপস্থাপন করে সেইটাকে যখন জগা খিচুরি হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, মুশকিল হলো নারীবাদকে যখন মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় নিজের যৌন জীবন এবং নিজের নারী শরীরকে কমোডিটি হিসেবে উপস্থাপন করতে।
ধরেন এই মেয়েটাই যদি বলতো সে ফ্যাশন মডেল, মডেল হিসেবে আমি এরে ১০ এ ৯.৫ দিতাম। দেখতে এতো সুন্দর একটা মেয়ে, তার ফ্যাশন সেন্স আসলেই ভালো, বডি-শো স্টিল ফটোগ্রাফি সেন্স অসাধারণ। এরকম যথেষ্ট সুন্দরী, বাচ্চা বয়সী বেশ কয়েকটা মেয়ের প্রোফাইল দেখলাম। নারীবাদের নামে যৌনতা, ন্যুডিটি মিলিয়ে জগাখিচুরি উপস্থাপনা, প্রচুর লাইক, প্রচুর ছেলেদের কমেন্ট।
আমি ভাবছিলাম মডেল হিসেবেই লাইক পাওয়ার জন্য ছবিগুলো যথেষ্ট, তাহলে নারী বিষয়কে কেন নিয়ে আসতে হচ্ছে আসলে? দেখেন, ফেবুর যুগে শুধু বিউটি এখন আর ছেলেরা খায় না। বিউটি উইথ ব্রেইন এখনকার পপুলার টপিক। কাজেই কোনো সুন্দরী যদি নিজেকে পপুলার করতে চায়, তার যে ব্রেইনও আছে সেইটাও দেখাতে হবে। সে যে বিরাট বিপ্লবী, বেশ লিখতেও পারে, এই সবই যদি দেখানো যায় তাহলে তার আর্কষণ কিন্তু অনেক উচ্চে। তখন প্রথিতযশা শিল্পী, লেখক সবাই তার সংগ পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে থাকবে এবং থাকেও। নিজেদের লেখায় ট্যাগ মেরে গুরুত্বও বোঝায়।
দিনের শেষে নারীবাদের নামে নগ্নতা এবং যৌনতাকে তত্ত্বের নামে, আধুনিকতার নামে প্রমোট করা গেলে একদল পুরুষের খুবই আরাম হয় বৈকি! এই প্রায় শিশু মেয়েগুলোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিছানায় নেয়া যায় উইদাউট এনি হ্যাসেল … কতো মজা না?
আর যে নারীবাদী বিপ্লবীরা এতোদিন যৌনতাকে, ন্যুডিটিকে নারীবাদের দারুণ কার্যকরি একটা পন্থা হিসেবে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে আসলেন, তারা দয়া করে আরেকটু দায়িত্ব নিয়ে ভাবেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই ট্রেন্ডটা যখন পপুলার হয়ে যাবে, তখন সেইটার দায় আপনারা নিবেন কি না!