‘দর্ষন কেন গটে আপনি বলেন না কেন?’

জাহানারা নুরী:

উপরের প্রশ্নটি আমাকে করেছেন ফেসবুকের জনৈক ইসলামি এক্টিভিস্ট-এমন একটা সময়ে- যখন ধর্ষণবিহীন একটিও দিন-রাত যায় কিনা সন্দেহ। একটি মুহূর্ত নেই যখন ধর্ষণের জন্য ধর্ষণের শিকারকেই কারণ মনে করা হয় না; তাকেই দোষী করা হয় না।

পুরনো বছর, নতুন বছর, শান্তিপূর্ণ দৈনন্দিন- যেদিন পেটের ধান্দা নিয়ে আমরা সকালে বেরোই সন্ধ্যায় ফিরি; পা টান করে চায়ে চুমুক দিই, টিভির সামনে সার্ফিং করি প্রিয় অনুষ্ঠান, আবার খাই, রমন-নাক ডেকে-নিদ্রা শেষে আবার আরেকটি দিনের আগমন ঘটে; এই চব্বিশ ঘন্টায় আপনি বলতে পারবেন না, একটিও নারী বা শিশুদেহ রক্তাক্ত হয়নি; কিম্বা নারী বিষয়ক বক্তৃতায় নরকের আগুনের সাথে নারীর তুলনা হয়নি।

দিনগুলোকে রক্তপাতহীন, ঘৃণাহীন রাখতে আমরা নিদারুণ লড়ে চলেছি, ঘুমিয়ে, পরদিন সকালের প্রাতঃরাশের টেবিলে পত্রিকায় ছাপা প্রাণহীন নারী, কিশোরী, বা শিশুর দলানো-মোচড়ানো কাগজের মতো ফেলে রাখা লাশের সাথে প্রাতঃরাশ সারবো বলে। ধর্ষণ, যাতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি, যেমনি অভ্যস্ত হয়ে গেছি শনৈঃ শনৈঃ বেড়ে চলা ধনী ও দরিদ্রের ফারাকে-দুই-ই রাজনৈতিক ও সামাজিক সহিংসতা এবং বৈষম্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। সুতরাং এই প্রশ্নটির জবাব শুধু তাদেরই নয় আমার নিজের ও জানা, জরুরি।

এমন গোটা দশেক প্রশ্ন পাবার পর আমাকে এই আর্টিকেলটি লিখতে হচ্ছে। কারণ ধর্ষণকে যারা প্রচারণা করছে, ছাড় দিচ্ছে, তারাই প্রশ্নকারীদের মধ্যে সংখ্যাগুরু। আমাকে প্রতিদিন প্রশ্ন করা হয়, কেন ধর্ষণ হয়? প্রশ্নটাকে ঘুরিয়ে আমি প্রশ্নকারীকে প্রশ্ন করতে পারি না, কেন আপনি ধর্ষণ করবেন, ভেবে দেখুন।
জনৈক তরুণ জানিয়েছেন, “রেপটা হওয়ার একটাই কারণ, বাংলাদেশ এর মানুষ available সেক্স করতে পারে না। আমার নিজেরও যখন ১৪ বছর হয়, তখন থেকে আমার সেক্স শুরু হয়েছিল, তখন সেক্স ছাড়া মাথাই কোনকিছু আসতো না, এমন হতো যারে পাই, তারে সেক্স করি, সো এটার জন্য আমার প্রজোজ্য ছিল বিয়ে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এটাও নিষিদ্ধ করলো, তখন কি করা উচিৎ। এনসার চাই। আর আপনি বিদেশ এর উদাহরণ দিবেন, এ বিদেশে ক্লাসেই পোলাপান সেক্স করে থাকে। একসময় মনে হতো, কেন যে বিদেশ জন্ম হলো না এটা নিয়ে আফসোস করতাম।’
সঙ্গতকারণেই মন্তব্যকারীর নাম উল্লেখ করছি না। ইনি আবার ধর্ষণবিরোধী। তো ইনি যা বলছেন, তা বর্তমানে গড় চিন্তা নয়। ভাগ্যিস নয়।

তার সমস্যা কোথায়? যৌনতা বিষয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রে যেসব কলকাঠি নড়ছে, ইনি তার লক্ষ্মণগুলোর কয়েকটা প্রকাশ করেছেন। সমাজকে যতো অসুস্থ রাজনীতি ও নানাধরনের নীতিহীনতা দিয়ে বেঁধে দেয়া হবে, ততো জীবন যৌনতাকেন্দ্রিক হয়ে উঠবে, যেমন হয়ে উঠবে সহিংস। বদ্ধ যায়গায় রক্তপাত বেশি হবে।

কিন্তু দেখার বিষয় হলো, তরুণটি যা বলছে তা কিন্তু ধর্ষণ বিষয়ক বক্তব্য নয়; তার অচরিতার্থ যৌনতা নিবারণের উপায়হীনতার বক্তব্য। অর্থাৎ ধর্ষণের মতো একটি বীভৎস অপরাধের প্রসঙ্গে তিনি বারবার ফিরে যাচ্ছেন যৌনতা প্রসঙ্গে। ধর্ষণ তখন ফৌজদারী অপরাধ থাকছে না; তখন ভুলে যাওয়া হচ্ছে যে এই অপরাধের সমাজের অত্যন্ত জরুরি শ্রমদায়ী কিংবা আগামী শ্রমশক্তির একাংশ আজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে পড়ছেন, নতুবা লাশ পড়ছে একের পর এক। সে লাশগুলো বেশিরভাগই দুই বছরের শিশু থেকে পনের বছরের কিশোরী; সমাজ ও সংসারের গহীন অরণ্যে ঘুরে বেড়ানো মাংসভূক প্রাণীগুলো সম্পর্কে যারা অনবগত।
ধর্ষণের সাথে যখনই যৌনতাকে এক করে দেখা হচ্ছে, তখন পুরুষ মন ভাবছে যেহেতু এটা তার উপভোগের বিষয়- লাশ, রক্তপাত, প্রাণহানীর বিষয়গুলো লঘু; কেন সে প্রসঙ্গে আসছি।

দুই.
বাংলাদেশের পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজে ধর্ষন অপরাধ কিন্তু সমাজে সহনীয়। এ বিষয়টি প্রমাণিত সত্য। একদিকে পুরুষতন্ত্র মেয়ে ও শিশুর ধর্ষককে এক ধরনের ছাড় দেয়। অপরদিকে ধর্মীয় আইন দ্বারা চালিত পরিবার ও সামাজিক চিন্তা চেতনা তাকে শুধু বৈধতাই দেয় না, প্রচারও করে। অথচ বাংলাদেশে ফ্যাক্টরিগুলো চলে নারী শ্রমে। পরিবারগুলো চলে নারী শ্রমে। রাজনীতির একটা বড় দাবার ঘুঁটি নারী। এই উদীয়মান বিপুল শ্রমশক্তি বাংলাদেশের চালিকা শক্তি অথচ নারী-পুরুষের এক জাতীয় অসুস্থ্ সম্পর্কের প্রচার ও প্রসারের সংস্কৃতির লালন এখানে প্রবল; সামাজিক ও রাজনৈতিক উভয় পথেই। উদাহরণের শেষ নেই, দু’ একটি উল্লেখ করি।

সম্প্রতি পাঠ্য পুস্তকে ব্যাপক রদবদল করা হয়েছে। যৌনতা বিষয়ক শিক্ষাকে পাঠ্য পুস্তকের বাইরে রাখা মানে মানব জীবনের স্বাভাবিক বিষয়টিকে জানার কৌতুহল চাগিয়ে রাখা এবং শিশু-কিশোরদের যৌনতা বিষয়ক ফ্যান্টাসি জার্নাল, পত্র-পত্রিকা এবং নেটে ঘুরে বেড়ানো বিভৎস পর্নোগুলোর দিকে ঠেলে দেয়া। অথচ প্রাকৃতিক বিষয়ের বা স্বাস্থ্য বিষয়ের মতোই এ বিষয়ও খোলামেলা আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে সুরক্ষার বিষয়গুলো পাঠ্য বইয়ে সংযোজিত হওয়া অত্যাবশ্যক। কারণ এসব জানার বিষয়, জ্ঞান। মানব শিশু জন্মেই হাঁটে না, ইতর প্রাণীর শিশুরা হাঁটে। মানব শিশুকে হাতে ধরে তা শেখাতে হয়। তাকে সুকুমার শোভন যৌনবৃত্তিটাও শেখাতে হবে।

সমাজে প্রচলিত যৌনতা বিষয়ক ফ্যান্টাসির দুটো দিক; এক নারী বিষয়ক গাল-গল্প, দুই. যৌন-সম্পর্ক বিষয়ক গাল-গল্প। দুটোর কোনোটিই বাস্তবতাভিত্তিক নয়। যা জীবনের অংশ তাকে বাস্তব জীবনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জানতে দিতে সরকার ও ধর্মের, পরিবারের ও সমাজের আপত্তি কেন? এসব প্রতিষ্ঠান চায় সাধারণ মানুষ বাস্তব, স্বাভাবিক বিষয়গুলো না জানুক, তারা কল্পলোকে বাস করুক।

তিন.
এই ফ্যান্টাসির অন্যতম উৎস ধর্মের নামে চলা ফ্যান্টাসি। ধর্মীয় কল্পগল্পের দুটো দিক; একদিকে নারীর সাথে মুসলিম উম্মাহর সম্পর্কের গোলমেলে ব্যাপারটি। মুসলিম নারী মুসলিম উম্মাহর অংশ নয়। উম্মাহ পুরুষদের ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠী। নারীর অবস্থান ঐ উম্মাহর পুরুষদের ঘরে। মুসলিম উম্মাহ পুরুষেরা একত্র হয় মসজিদে। এই উম্মাহর ঐক্য পরবর্তি জেনারেশনে ভাষন্তরিত করে নারী। উম্মাহর ঐক্যের প্রচার ইসলামের অন্যতম আদেশ। এই ঐক্যে সবাইকে সমান বলা হয়েছে, এমনকি কালো হাবশী ক্রীতদাস ও মুসলিমের পবিত্র গ্রন্থের ওপর দক্ষতা অর্জন করলে তার নেতৃত্ব মেনে নেয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু পরিবার ও সমাজের জন্য নির্দেশনা আলাদা। সেখানে অনৈক্য। সেখানে ঐক্যবদ্ধ না হওয়াই আদর্শ বলে প্রচারিত।

মুসলিম পুরুষরা এক থাকবে, কিন্তু নারী-পুরুষ এক থাকবে না। এখানে আদর্শ হচ্ছে নারীরা থাকবে তাদের পুরুষদের অধীন। নারী-পুরুষের ঐক্যের কোনো সুযোগ নেই, সাম্যের কোনো স্থান নেই, সমানাধিকারের কোনো প্রসঙ্গ নেই। প্রথমতঃ নারী আল্লাহর অধীন ও তারপর সে স্বামীর অধীন। একজন মানুষকে আরেকজনের অধীনে রেখে দেয়ার পর তাকে সমানাধিকার বা সাম্যের কথা বলাটা অর্থহীন। সামাজিক এই নিয়ন্ত্রণ শরিয়ার ভিত্তি সকল গ্রন্থে স্বীকৃত ও প্রচারিত।

আপনি বলবেন, আমার সমস্যা কী? নিয়মটা তো ভালোই। আমি ভালো-খারাপ প্রসঙ্গে যাচ্ছি না। আমি দেখতে যাচ্ছি কোন্ ব্যবস্থাপনায় ধর্ষণ অপরাধ নয় এবং সে কারণেই ধর্ষণের শিকারের জন্য ন্যায়বিচার চাইতে গেলে ইসলামিক রাষ্ট্রকামী আমাদের মুসলিম তরুণরা বলছেন – সরকার অল্প বয়সে বিবাহ বন্ধ করেছে এবং চৌদ্দ বছর থেকে যৌনতাহীন জীবন যাপনের কারণে ধর্ষণ বাড়ছে। প্রথমতঃ সরকার অল্প বয়সে বিবাহ বন্ধ করেনি, বরং গত তিন বছরে নতুন নারী নীতি সংশোধনের পর বাল্য বিবাহ প্রভূত পরিমাণে বেড়েছে এবং বেড়েছে ধর্ষণ।
আমি ২০১৪ তে লিখেছিলাম যে ধর্ষণ বাড়বে, কারণ ধর্ষকের সাথে গোলেমালে বিয়ে পড়িয়ে দেয়ার প্রথাও ওই আইনে স্বীকৃত হযেছে। যা গতবছর শুনেছি সরকার বাতিল করার কথা বিবেচনা করছিল। দ্বিতীয়তঃ চৌদ্দ বছর বয়স থেকে যৌনতার জন্য পাগল হয়ে যাওয়াটা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যগত ডিজঅর্ডার এবং ঐ তরুণ যিনি কথাটা বলছেন, তিনি এ সম্পর্কে জানেন না। তার জন্য এটা জানার সুযোগটা কোথায়? কোথাও নেই।

চার.
ফিরে যাই নারী-পুরুষের অনৈক্যের প্রচার বিষয়ক আলোচনায়। ধর্মীয় প্রজ্ঞাপনে নারী বিষয়ক যেসব প্রচার প্রচারণা রয়েছে তা ধর্ষণ, নারীর যৌনতা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে, কিন্তু পুরুষকে নানাভাবে দেয়া হয়েছে প্রকাশ্যে অবাধ যৌনতার সুযোগ। কারণ সমাজটি পুরুষের নিয়ন্ত্রণে। ধর্ম ও ধর্ম-ভিত্তিক রাজনীতি সে নিয়ন্ত্রণ স্বীকার, প্রচার ও বিধিরূপে জারী করে। পুরুষের অধীনস্ত নারীর সংখ্যা প্রচলিত ধারণার চার ’স্ত্রী’তে সীমাবদ্ধ নয়। তার সুযোগ বিস্তৃত নানা দিকে। তার দাসী সহবাস বৈধ। তার যুদ্ধে জয়ের পর বিজিতের নারীভোগ নির্ধারিত।

তবে আসুন দেখি নারীদের অধীনস্ত থাকার সংস্কৃতি কীভাবে আমাদের সমাজ ও পরিবারের অন্তর্গত রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে এবং ধর্ষনজনিত সংস্কৃতির আগাগোড়া পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠছে; একটি উদাহরণ দেব। ধরুন কোনও বালক শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিচ্ছে। তার কানে যৌনতা বিষয়ে কোনও ফ্যান্টাসি গল্প প্রবেশ করেনি। সে নারী-পুরুষের যৌন সম্পর্ক বিষয়ে জানার আগেই পরিবারের সবার সম্পর্কের সাথে দৈনন্দিন পরিচয়ের মাধ্যমে জেনেছে নারী এবং পুরুষ কেউ কারও অধীন নয়। তারা উভয়ে সমান, তাদের কাজ সিদ্ধান্ত গ্রহণ ক্ষমতা, কোনও বিষয়ে হ্যাঁ বা না বলার ইচ্ছা সমান মূল্য বহন করে। তারা উভয়ে পরিবার ও সমাজ গঠনে, রাষ্ট্র চালনায় সমান যোগ্যতার অধিকারী হতে সক্ষম। একইভাবে সে এই মূল্যবোধের অনুশীলন ঘরে দেখেছে। সে দেখেছে তার মা-বাবা পরস্পর আলোপ আলোচনা করে পরিবারের সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। সে দেখেছে মা ও বাবা দু’জনেই পরস্পরকে ভালোবাসেন এবং তা কিছুটা প্রকাশ্যও। তারা উভয়ে উভয়ের আবেগ চিন্তা ভাবনার প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সন্তান শিখতে পারছে কীভাবে সে নিজেও মা বাবার ভারসাম্যপূর্ণ যৌথ জীবনের আনন্দের ও বাঁচার সংগ্রামের অন্যতম অংশ। এই শিশুটি নারী-পুরুষের সম্পর্ক বিষয়ে কী তথ্য পাচ্ছে? সে তথ্য সে কীভাবে ব্যবহার করতে পারে?

সে জানবে যে, কোনও মেয়েকে তার পছন্দ হলে সে মেয়ে যদি সমানভাবে তাকে পছন্দ করে, তবেই তারা পরস্পরকে পছন্দের কথাটা বলতে পারে। সে জানবে পছন্দ করা মানে পছন্দের মানুষকে সম্মান দেয়া, তার সাথে সম্পর্কের সব ধরনের নিরাপত্তা বজায় রাখা। এমনকি তার গোপন কথা রক্ষার বিষয়টিও নিরাপত্তা ভাবনারই অংশ। নিজের ও পছন্দের মানুষটির স্বাস্থ্যগত, মানসিক ও সামাজিক নিরাপত্তার দিকটাও অবশ্যই সুরক্ষার অবিভাজ্য অঙ্গ। যদি যৌন শিক্ষা বিদ্যালয়েও পাঠ্য হয়, তাহলে সে এটাও জানবে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য আমাদের সমাজে সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। সুতরাং অবশ্যই ভালোবাসার মানুষের এই নিরাপত্তাহীনতা যেন তৈরি না হয়, তা দেখা তাদের উভয়ের কর্তব্য।

নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন শিক্ষাটি আর যৌনতা বিষয়ক থাকছে না, এটা মানবাধিকার শিক্ষার অঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। মানবাধিকার শিক্ষা বাদ দিয়ে আপনি আমি তাকে জীবন পরিচালনা শেখাতে পারছি না। কিন্তু ভাবনার এই জায়গাতে আমাদের হোঁচট খেতে হচ্ছে। কারণ পুঁজিভিত্তিক জীবন বা শরিয়াভিত্তিক মুসলিম আইন যা পরিবারকে চালায় মূলতঃ নারীকে নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে-তাতে উদাহরণে উল্লিখিত পরিবারটি গঠন করা সম্ভব নয়। কারণ এই পরিবারটি একটি কিছুটা মুক্ত সম্পর্কের পরিবার। পিতামাতার সাথে পুত্র ও মেয়ের সম্পর্ক সেখানে হায়ারারখিয়াল নয়। সেখানে যৌনতা অন্য দশটা বিষয়ের মতোই জ্ঞানের বিষয় মাত্র। তা নিয়ে কল্পনার কিছু নেই। তা মানব জীবনের পুরোটা নয়, একটা মাত্র অংশ। সে পরিবারে ছেলে-মেয়েদের জীবন ভরপুর পড়াশুনা, সৃজনশীল কাজ, চিন্তাশীল উদ্যোগে, পারস্পরিক হাস্যরসে। মেয়েদের সাথে ছোটোবেলা থেকে যৌথভাবে পড়াশোনা ও সৃষ্টিশীল আলাপ করতে পারলে তাদের প্রতি অদৃশ্য অব্যাখ্যাত আকর্ষণ স্বাভাবিকের বাইরে যেতে পারে না।

সবচেয়ে বড়ো কথা নিজের জীবনকে শুধু যৌনতাকেন্দ্রিক হওয়া থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়। যৌনতা যে স্বাভাবিক জীবনের অঙ্গ এ বিষয়টি কি আমরা পুত্র-কন্যাদের শেখাচ্ছি? কিছুই কি শেখাচ্ছি? না শেখাচ্ছি না। যুক্তির চর্চা করলে, দেশীয় সুস্থ সাংস্কৃতিক রুচি তৈরি হলে, ছোটবেলা থেকে মানুষের জন্য ব্যক্তি হিসেবে তার করণীয় বিষয়ক নানা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করলে যৌনতা চিন্তার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে থাকতে পারে না। তীব্র যৌনাকাক্ষ্মার ডিজঅর্ডার হয়ে দেখা দিতে পারে না।

পাঁচ.
পুত্র-কন্যাদের তো এই জ্ঞানটা দিতে হবে যে, জীব জগতে মানুষ বর্তমানে যে অবয়বে পৌঁছেছে মানব প্রজাতি তার যাত্রার শুরুতে তেমন অবয়বে ছিল না। তার চেতনার স্তরও এখন তার চিন্তা চেতনা যে অবস্থানে সব সময়ই সেখানে ছিল না। মানুষের মগজের বিবর্তন ইতিহাস অনুযায়ী প্রেম-ভালোবাসা, মায়া-মমতা ইত্যাদি আবেগ ধারণ করতে সক্ষম পরিণত মস্তিষ্কে পৌঁছানোর অবাক কাণ্ডটি মাত্র কয়েক হাজার বছরে ঘটেছে। তার পূর্ব পর্যন্ত অগুণতি সংবেদনশীল কোষ থাকা সত্ত্বেও মানুষের জীবন পূর্ণ মানব জীবন হয়ে উঠতে পারেনি। তার জীবন তখন ছিল অনেকটা আধা মানব জীবন। তখন প্রেমহীন, দায়িত্বহীন কাম তার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করতো। ক্রম পূর্ণতার দিকে অগ্রসর মানব শরীর ক্রমে এ চেতনাও অর্জন করে যে তার কাজ জীব জগতের অন্য প্রাণীর মতো কেবল জৈব চাহিদা পুরণ নয়, সে এর বাইরে অন্য রকম সৃষ্টিশীলতায়ও নিজের সময় ও মনোযোগ নিয়োগ করতে পারে। সেদিন মানুষ নিজের অজ্ঞাত ও জ্ঞাতসারে চিত্রাংকন, বস্তু তৈরীর শিল্প, ভাষা ইত্যাদির ভেতর সৃজনশীলতা আবিষ্কারে উঠে পড়ে লাগে। প্রেম, মায়া-মমতা, অন্যের প্রতি সংবেদনশীলতা, এ জাতীয় আবেগের প্রমিত সুষম প্রয়োগ ক্রমে মানুষ শেখে। ক্রমে এসব আচরণ তার সভ্যতার অঙ্গ হয়। এই মানুষের মস্তিষ্কেরই সৃষ্টি- মানুষের সমানাধিকার চার্টার। মায়া-মমতা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি ও বিশ্বাস এবং এ সবের প্রমিত প্রকাশ কামের দুর্নিবার প্রভাবকে বশীভূত করতে ব্যক্তি মানুষকে সাহায্য করে। যার ফলে সে পশু থেকে আরো মানবিক হয়ে প্রাণ জগতে নিজের অস্তিত্ব আরো সুন্দর ও সুকুমারভাবে প্রকাশের প্রয়াস করে যেতে সমর্থ হয়।

সমাজে কাম প্রকাশের সুকুমার স্বভাব বিকশিত হওয়ায় কাম ব্যক্তিগত জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠতে থাকে। হিংস্রতা যেমন প্রকাশ্য নয়, কাম ও তেমনি ইতর প্রাণীর স্বভাব না থেকে সমাজে সহনীয় ভাবে সুন্দর হয়ে প্রকাশ পেতে চাইবেই কারণ সমাজে মানুষই বাস করে। আদিকাল থেকে সে নিজেকে অন্য সব প্রাণ থেকে আলাদা করে উপস্থাপনের প্রাণপন পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। তার সব সৃষ্টিশলিতা সে সবের সাক্ষ্য বহন করে। আমাদের পুত্র-কন্যারা তো ইতর প্রাণী নয়। তাদের শেখাতে হবে কাম যত্রতত্র প্রকাশের বিষয় নয়, এবং এ জন্য যাকে তাকে আক্রমণ সভ্য মানুষের সমাজের আচরণ নয়।

শিক্ষাটা সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থার অঙ্গ না হলে সমাজ ও পরিবার সভ্য সমাজে বাসের অনুপযোগী বলেই ধরে নিতে হবে। যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা এই শিক্ষার উপযোগী একটি সমাজ ব্যবস্থা সমর্থন করে না, বরং তার বিপরীত ব্যবস্থা বজায় রাখতে সচেষ্টা সে রাষ্ট্র ব্যবস্থা অবশ্যই ওই মুক্ত সমাজ বিরোধী যার মানবাধিকার ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করার দায় রয়েছে।

খেয়াল করবেন এখানে নৈতিকতার মানদণ্ড ধর্ম নয়, সাম্য, সমতা ও মানবাধিকার এবং আইনের শাসন।
বিদ্যালয়ের কথায় আর না যাই, এমন কোনো গণমাধ্যম কি আমরা সৃষ্টি করেছি যা শিশুদের কিভাবে নিজের চরম আবেগগুলোকে সামাজিক জীবনে সংহতভাবে প্রকাশ করতে হবে, কীভাবে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তা শেখায়? মানুষ যে ইচ্ছে করলে নিজের দেহের ও আবেগের বা মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সমর্থ এই তথ্যটি গোটা সমাজে কেউই কি দিচ্ছে? দিচ্ছে না। বরং ঘটে চলেছে উল্টোটা।

সুস্থ্য যৌনতা কোন অপরাধ নয়- এ বিশ্বাসকে ভেঙ্গেচুরে শিশুদের কল্পগল্প শেখাবার বা শিশুদের কাছ থেকে জীবনের অনিবার্য সত্যকে লুকোনোর পেছনে রয়েছে নিয়ন্ত্রণ। বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ কি সম্ভব? অনলাইনে গোটা বিশ্ব মুক্ত। সেখানে শিশু থেকে বয়ষ্ক এমন জিনিস দেখে যা তার কল্পনাকে হার মানায়। তার প্রাচীন নিয়ন্ত্রণহীন কামভাব নিয়ন্ত্রণের কোনও যৌক্তিক শিক্ষা না থাকায় এবং যেহেতেু তাকে আশৈশব জানানো হয়েছে যে পুরুষের জন্য সমাজে ছাড় দেয়া আছে-শিশু ও কিশোরীরা যারা অরক্ষিত ও দুর্বল তারা তাদের হিংস্রতার শিকার হয়। পুঁজিবাদী সমাজে এই হিংস্রতা পৌরুষত্বের লক্ষ্মণ। এ জন্য আপন জুয়োলার্সের মালিক বুঝতে পারে না কেন তার ছেলের ধর্ষন অপরাধ হবে, সে তো মাত্র জীবন উপভোগ করতে চেয়েছে-যদিও তার ভোগের মূল্য দিয়েছে অন্য পরিবারের এক সন্তান। ধর্ম রয়েছে, পুঁজি রয়েছে, নেই নৈতিকতা এবং আইনের শাসন।

ছয়.
এভাবে যৌনতা নিবারণ যে মানবেতর আচরণ, এর ফলে তাকে অবশ্যই সমাজে ও রাষ্ট্রে দায়বদ্ধ হতে হবে, শাস্তি পেতে হবে এই শিক্ষাটি কি আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি? পারিনি। চেষ্টাও নেই। রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় নীল নকশায় নারীদের নিয়ন্ত্রণ করছে পুরুষেরা-যারা ধর্ষক গোষ্ঠীর-উম্মাহর অংশ। আমরা জানি উম্মাহর ঐক্য অখণ্ড। সুতরাং সপ্তাহে একশো সাতষট্টিটা শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মধ্যে খুব অল্পই এ্যারেষ্ট ও বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে। আইনের শাসনকে ছাপিয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে উম্মাহর ঐক্য এবং পুঁজির প্রতি তাদের ভক্তি। দশ বছরে ঘটে চলা কয়েক লক্ষ ধর্ষণ মামলার মাত্র একটির চরম শাস্তি হয়েছে এই সপ্তাহ দু’য়েক আগে; অনেক দেন দরবার, অনেক প্রতিবাদ প্রতিরোধ জারী রাখার পর। ধর্ষণকে ফৌজদারী অপরাধ হিসেবে দেখলে এর জন্য আলাদা কোনো আইন প্রয়োজন হয় কি?

সাত.
এবার আসি শুরুর প্রসঙ্গে, কারও যৌনতা মেটেনি বলে সে ধর্ষণ করবে, জোরপূর্বক বা ছলচাতুরি করে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করবে, তা মেনে নেয়া যাবে কি? তা কি মানব সভ্যতার অঙ্গ? তা কি মানবাধিকারের পক্ষে? তাকি গণতন্ত্রের অধিভুক্ত?
সভ্য সমাজে বাস করতে হলে মানুষকে সভ্য হতে হবে। অন্যের ওপর সহিংসতা প্রয়োগ করে নিজের শারীরিক চাহিদা মেটানোটা ডাকাতি, হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাতের মতো অপরাধ এবং মৌলিক মানবাধিকার বিরোধী অপরাধ।
প্রতিটি ধর্ষণ কেস বিচার করলে দেখা যায় বেশির ভাগ ধর্ষণ এমন লোক দ্বারা সংঘটিত-যারা প্রাপ্ত বয়ষ্ক, যারা ক্ষমতা আছে, অর্থ আছে, কিম্বা লোকে তাদের মানবে প্রশ্ন করবে না এমন অবস্থানে রয়েছে। ভিক্টিমদের অধিকাংশই, প্রায় নিরানব্বুই ভাগ ক্ষমতাহীন, নিরীহ, অর্থ-বিত্ত-ও ক্ষমতার দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল। এসব ধর্ষণ – যাদের আছে তাদের হাতে, যাদের নেই তাদের নির্যাতন শোষণ ও নিপীড়নের আবহমান ধারারই অংশ।
আমাদের সমাজে সবচেয়ে নিপীড়িত নারী ও শিশু। দরিদ্র ঘরের নারী ও শিশু চূড়ান্ত শোষণের শিকার। ধর্ষণ সামাজিক সেই শোষণের একটা চরম রূপ-যেখানে চরম শারীরিকভাবে আক্রান্ত হওয়ার, সারা জীবনের জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দেবার পরও ধর্ষণের শিকারই সামাজিক, পারিবারিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে নিপীড়িত হয়ে চলে।

আট.
ধর্ষণ শুধু একজন নারী বা শিশুকে নিপীড়ন করা নয়, একটি পরিবারকে নিপীড়ন করা ও নিয়ন্ত্রণ করা। গোটা নারী সম্প্রদায়কে নিপীড়ন করা ও তাদের মধ্যে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া। ভীতি প্রচার করে তাদের হাতের মুঠোয় আনার একটা কৌশল। কেন?

কারণ ধর্ষণের মাধ্যমে একজন পুরুষ যে নারীর চেয়ে শক্তিশালী ধর্ষক সে বিষয়টিই বুঝিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। নারী যে পুরুষের চেয়ে ছোট, ক্ষমতাহীন তা প্রমাণের কদর্য ইচ্ছার প্রকাশ-ধর্ষণ। ভেবে দেখুন, একটি ছেলে বা পুরুষ তার যৌন আনন্দ নিচ্ছে এক নারী শরীরকে বলপূর্বক সহিংসতা দেখিয়ে। তখন তার মানসিকতাটা কী? এই মানসিকতাকে মনোবিজ্ঞানে বলা হয় ‘মর্ষকামী’ মানসিকতা। অন্যকে আঘাত করে, হিংস্রতা দেখিয়ে উল্লাস বোধ করা অস্বাভাবিক।
দুঃখের বিষয় এ মানসিকতার চাষ করা হচ্ছে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে এবং ধর্মের নামে। আমরা মদীনা সনদে রাষ্ট্র চালাই, এ নিয়ে শ্লাঘার কোনো সুযোগ নেই। মর্ষকামিতা আমরা কখনও দিই শিশুকে। আমরা তাকে বলি, মায়ের মৃত্যুতে কাঁদতে নেই, ব্যাটা ছেলে কাঁদে না। যখন আমরা পুত্রের পাতে বড়ো টুকরোটা দিই, আর মেয়ের মুখের দিকে তাকাই না তখন পুত্রকে আমার তথ্য দিই। সে বেশি পাওয়ার যোগ্য কারণ তার শারীরিক অবয়ব ভিন্ন।

ভিন্নতাকে আদর্শ করে তোলা হয় পরিবারে। নারী-পুরুষ হতে ভিন্ন। সমান নয়। ভিন্নতার মাপকাঠি থেকে মর্ষকামী মানসিকতা দিয়ে আমাদের সমাজ আমাদের ছেলেদের গড়ে তোলে ছোটবেলা থেকে। শিশু বয়স থেকে আমাদের পুত্রদের ও কন্যাদের সাথে আমরা যে আচরণগুলো করি তা দিয়ে তাদের বুঝিয়ে দিই ভাইরা তাদের বোনদের চেয়ে সেরা, উন্নত, ঊর্ধতন। ভাই অপরাধ করলে বলা হয় ছেলেমানুষ একটু করবেই। মেয়ে ওই একই অপরাধ করলে তাকে শাসন করা হয় শারীরিক বা মানসিকভাবে।

আমরা আমাদের পুত্রদের অসামাজিক অপরাধের ছাড় এভাবে দিই। দিয়ে খুব আনন্দ বোধ করি যে আমরা পুত্রকে অত্যন্ত ভালোবাসি। পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং তার আদর্শ হচ্ছে ধর্ম ও ভিন্নতা ভিত্তিক শাসন। ছোটখাটো অপরাধে ছাড় দেয়ার ফলে পুত্ররা বড়ো হয়ে উঠতে উঠতে বড়ো বড়ো অপরাধ করতে থাকে, যার ফল ভোগ করে সমাজের অন্য পরিবারের মেয়েরা। তখনও সমাজ এবং পরিবার তাকে ছাড় দিতেই থাকে। আমরাই ধর্ষক, মর্ষকামী পুত্র তৈরি করি। কিম্বা এমন ছেলে গড়ে তুলি-যারা ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে দেখে না। এর সাথে তাদের নিষিদ্ধ যৌন আনন্দের সংযোগ থাকে বিধায় তাদের চেতনায় একে অপরাধ বলে মনেই হয় না। ফলে তারা ধর্ষণের বিরুদ্ধে দাঁড়ায় না। বরং ধর্ষণকে জাস্টিফাই করার যুক্তি খোঁজে। শারীরিক নিপীড়ন কোনোভাবেই বৈধতা পাওয়ার বিষয় নয়। এই সচেতনতা তাদের আমরা দিতে ব্যর্থ হয়েছি। পুঁজিবাদী সভ্যতায় এটা আমাদের পীড়িত করে না- আমরা এমনই নীতিহীন মানুষের পর্যায়ে রয়ে গেছি।

আট.
পুত্রদের যে ধর্ম শিক্ষা দেয়া হয় তার ভেতর রয়েছে পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর পূর্ণরূপ। এই কাঠামোতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব অধিকার পুরুষকে দেয়া হয়েছে। মর্ষকামীতার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে শরিয়ায়। এটা পুরোটাই নারী ও ক্ষমতাহীনদের ওপর প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। অসাম্য, বৈষম্য ও মানবাধিকারহীন সমাজ ও সামাজিকায়ন বজায় রাখার অন্যতম রাজনৈতিক কৌশল হচ্ছে ধনতন্ত্র বজায় রেখে ধর্মকে রাষ্ট্রে ও সমাজে রাজনীতির অঙ্গ করে তোলা।

আমাদের পুত্ররা যখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা পায় তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে। তাদের অপরাধীকরণের রাজনৈতিক ও সামাজিক কৌশলগুলো তখন সফল। তখনও নষ্ট রাজনীতি,ধর্মীয় বয়ানের নষ্ট ব্যাখ্যা, নষ্ট ব্যবসায়ী, নষ্ট স্বৈরাচারের দলের হয়ে আমার আপনার পুত্র অপরাধ করতেই থাকে। দল, আইন, আইন রক্ষাকারীদের একাংশ তখন তাদের পক্ষে দাঁড়ায়।এই বৃত্তটা আমাদের ভাঙতে হবে। সহিংসতা ও বৈষম্য রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক।
এর মধ্যে ধর্মীয় নৈতিকতার ধোয়া তোলা যাবে না। ধর্ম দিয়ে আইনের শাসন, মানবাধিকার সুরক্ষার কাজটি করা যাবে না। যদি ধর্মকেই আশ্রয় করে তোলা হয় তার ফল কী হয় আমরা দেখছি।
ধর্ষণের পর ধর্ষণের শিকার ডাক্তারের কাছে না গিয়ে হুজুর কাজীর বা স্থানীয় মাতবরের কাছে আশ্রয় চাইতে হচ্ছে। শোষিত আশ্রয় চাইছে শোষক সম্প্রদায়ের কাছেই। রাষ্ট্র, আইন, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ এখানে ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান যেন ব্যর্থ হয় সে ব্যবস্থা পাকাপোক্ত হচ্ছে।

আপনারা কি ভেবে দেখেছেন ধর্ষণ নারীকে শারীরিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে তার পরিবারকে নিয়ন্ত্রণ করে কীভাবে? দয়া করে ভাবুন এবং কঠিন সত্যগুলো স্বীকার করুন। দীর্ঘ দীর্ঘকাল বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি – ধর্মের নামে, ক্ষমতাবানদের শোষণ, নিপীড়ন ও দাঙ্গা হাঙ্গামা সহ্য করেও তার বৈভব হারায়নি, টিকে ছিল। একে বিকশিত হতে দিন। মুক্ত করুন।

শেয়ার করুন: