নারীবাদ, মানবতাবাদ ও পুরুষতন্ত্র

নাদিয়া ইসলাম:

ফেইসবুকে অনেকদিন চিল্লাচিল্লির পর আমি একদিন টের পাইলাম বেশিরভাগ ফেইসবুকবাসী নারীবাদ, মানবতাবাদ, পুরুষতন্ত্র ইত্যাদি সাধারণ সংজ্ঞা জানেন না। আমার আজকের পোস্ট সেই সকল ১৮ পার হওয়া শিশু কিশোর ফেইসবুকবাসীর উদ্দেশ্যে, যারা না জাইনা এতদিন নারীবাদরে ঘৃণা করছেন এবং পুরুষতন্ত্র মানেই পুরুষ ভাইবা বইসা আছেন। আসেন, শিশুরা, আমরা সহজ বাংলা ভাষায় দেইখা নেই নারীবাদ ও পুরুষতন্ত্র কী।

নারীবাদ কী?

নারীবাদ হইলো নারী ও পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের আন্দোলন। 
এই আন্দোলনের অর্থ এই না যে নারীরে পুরুষের সমান বা পুরুষরে নারীর সমান হইয়া যাইতে হবে।

এই আন্দোলনের অর্থ এই না যে পুরুষ যা করেন, যেমন- রাস্তায় দুই ঠ্যাং দুই দিকে দিয়া খাড়াইয়া মোতেন বা নারী যা করেন, যেমন- দুই ঠ্যাঙ্গের মাঝখান দিয়া শিশু জন্ম দেন, তা একে অপররে কইরা দেখাইতে হবে। নারীবাদের সাথে সিগারেট বা মদ গাঞ্জা ইয়াবা খাওয়া বা ছেলেদের পোশাক পরার কোনো সম্পর্ক নাই।

এই অধিকার আদায়ের আন্দোলনে শারীরিকভাবে নারীরে নারী ও পুরুষরে পুরুষ রাইখাই এবং একে অপরের শারীরিক (এবং সেই সূত্রে মানসিক) পার্থক্যরে হিসাবে ধইরাই দুইজনের সমান অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাষ্ট্রীয় অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।

নারীবাদ নারীদের পুরুষের সমকক্ষ হওয়ার আন্দোলন না। নারীবাদ পুরুষের বিরুদ্ধে পুরুষ নিশ্চিহ্ন করার আন্দোলন না। নারীবাদ ‘পুরুষতন্ত্রের’ বিরুদ্ধে আন্দোলন।

পুরুষতন্ত্র কী?

পুরুষতন্ত্র মানে ব্যক্তি পুরুষ না। পৃথিবীর প্রচুর পুরুষ পুরুষতান্ত্রিক না। পৃথিবীর প্রচুর (বলা ভালো বেশিরভাগ) নারী পুরুষতান্ত্রিক। জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত শ্রেণির নারীরাও পুরুষতান্ত্রিক হইতে পারেন।

পুরুষতন্ত্র এক প্রকার সামাজিক ব্যবস্থা। পুরুষতন্ত্র এক প্রকার আগ্রাসী, পুঁজিবাদী তথা সাম্রাজ্যবাদী রাজনীতি যা রাজনৈতিক নেতৃত্ব, নৈতিক কর্তৃত্ব, সামাজিক অধিকার ও সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে।

আধুনিক বুদ্ধিমান স্মার্ট মানুষজন তাই নিজের নামের পাশে পুরুষতান্ত্রিক ট্যাগ লাগাইতে চান না। কারণ এই ট্যাগ লজ্জাজনক। প্রিয় শিশু কিশোররা, আমি আশা করবো, আপনারাও কেউ নিজেদের পুরুষতান্ত্রিক বইলা জোর গলায় গর্ব করার মত ক্ষ্যাতনেস দেখাবেন না।

‘জোর যার মুল্লুক তার’ একটা পুরুষতান্ত্রিক আদর্শ। অর্থাৎ সোজা বাংলায় যার ক্ষমতা আছে এবং যিনি এই ক্ষমতা দুর্বলের উপর প্রয়োগ করেন, তিনিই পুরুষতান্ত্রিক। এই ক্ষমতার খেলায় আমাদের সমাজ, ধর্ম, রাষ্ট্র থিকা শুরু কইরা আমাদের বাপ মা, শ্বশুর শাশুড়ি, ভাই বোন অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশ পাঁচ টনের সবার সমান এবং স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আছে। ‘স্নেহ নিম্নগামী’র মত ‘ক্ষমতা প্রদর্শণ’ও নিম্নগামী হইলে বুঝবেন আপনি পুরুষতান্ত্রিক।

আপনি কাজের লোক পিটান? আপনি পাশের বাসার মেয়ে ক্যানো স্লিভলেস ব্লাউজ পিন্দা হাঁটেন তা নিয়া সমালোচনা করেন? আপনি আপনার কন্যারে নিজ পুত্রর চাইতে কম সুযোগ দেন? আপনি ডিভোর্সের বিরোধিতা করেন? আপনি ‘বিয়ে হয় একটি পবিত্র বন্ধন’ বইলা নির্যাতিত বিবাহিত মেয়েরে মানাইয়া নিতে বলেন? আপনি ধর্ষিতার কাপড়ের সমালোচনা করেন? আপনি মেয়েরা ক্যানো রাতে বাসা থিকা বাইর হোন, তা নিয়া উষ্মা প্রকাশ করেন? আপনি ভাবেন মেয়েরা শারীরিকভাবে দুর্বল, তাই পুরুষের আপনারে নিরাপত্তা দিতে হবে? আপনি ভাবেন চাকরি বা ব্যবসা করার পরেও রান্না করা, ঘরকন্যা করা শুধু মেয়েদের কাজ? আপনি পুরুষতান্ত্রিক। শুধুমাত্র ধর্ষক, শুধুমাত্র নির্যাতনকারীরাই পুরুষতান্ত্রিক না, পুরুষতন্ত্র বজায় রাখতে আপনি তাবেদারি করলে আপনিও পুরুষতান্ত্রিক।

লিঙ্গ হিসাবে নারী পুরুষ ও ট্রান্সজেন্ডার কেউ কারো চাইতে কম বা বেশি দুর্বল বা শক্তিশালী না। প্রত্যেক লিঙ্গের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে এবং আলাদা বৈশিষ্ট্যের কারণেই একের সাথে অন্যের প্রতিযোগিতা সম্ভব হয় না। কিন্তু এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে, না, অনন্ত জলিল সাহেব না, এই অসম্ভবরে সম্ভব করছে আমাদের সাধের মহান পুরুষতন্ত্র। পুরুষতন্ত্র নারী ও পুরুষরে একে অন্যের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড়া করাইয়া দিয়া নারীরে দুর্বল এবং পুরুষরে শক্তিশালী ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে এক পক্ষের হাতে ক্ষমতা তুইলা দিছে।

কীভাবে? আসেন সংক্ষেপে একটু ইতিহাস জাইনা নেই। আমি সংক্ষেপে কথা কইতে পারি না বাই দ্যা ওয়ে।

পৃথিবীতে সামন্তযুগ আসার সাথে সাথে মানুষ প্রথম নিজ সম্পত্তি নিয়া সচেতন হন। সেই সময় নারীর সন্তান জন্মদানরে দুর্বলতা হিসাবে দেখাইয়া নারীরে দুর্বল লিঙ্গ বানানোর পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতি শুরু হয়। নারীরা খুব স্বাভাবিক কারণেই সেই রাজনীতিতে ধরা খান। নারী তার স্বাভাবিক শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সন্তান জন্মদানে সক্ষম। সামন্ততন্ত্র যখন বুঝতে পারছে নারীর সন্তান জন্মদানের বৈশিষ্ট্যরে কাজে লাগাইয়া নারী এবং তার সন্তানরে ‘বিয়া’ এবং ‘বংশপরিচয়’এর মাধ্যমে নিজের আন্ডারে আনার মারফত ‘যত নারী তত সন্তান এবং যত সন্তান তত সম্পত্তি এবং যত সম্পত্তি তত ক্ষমতা’ লাভ সম্ভব, তখন সে নারীরে দুর্বল লিঙ্গ হিসাবে উপস্থাপন করছে।

সামন্তযুগের আবির্ভাবের সাথে সাথেই দুনিয়াতে প্রথম বিয়া এবং পিতৃতন্ত্র নামের সিস্টেম চালু হয়। সামন্তযুগের আবির্ভাবের সাথে সাথেই দুনিয়াতে ধর্মগ্রন্থের আগমণ ঘটে। সেই কারণে পৃথিবীর সকল ধর্ম পুরুষরে কর্তা, প্রভু, প্রধান, উচ্চ এবং নারীরে তার দাস হিসাবে দেখাইছে। আপনি যতই মাথা ডাইনে বায়ে নাইড়া এই বেলা প্রতিবাদ করেন, লাভ নাই। আপনার বিশ্বাসের কারণে সত্য পাল্টায়ে যাবে না।

প্রচলিত ধর্মগুলির প্রধান হাতিয়ার মানুষের ঈশ্বর বিশ্বাস। মানুষের জন্মলগ্ন থিকা মানুষ অদৃশ্য বা ঈশ্বরে বিশ্বাস কইরা আসছেন। চতুর ধর্মবেত্তারা জানতেন, ঈশ্বরের নাম দিয়া মানুষরে দিয়া সব রকম কাজ করায়ে ফেলানো সম্ভব। অর্থাৎ ধর্ম যদি ঈশ্বররে দিয়া বলাইতে পারে, গরুর মুত খাওয়া ভালো, আপনি সোনামুখ কইরা সকাল বিকাল কাচের গ্লাস ভর্তি কইরা সেই মুত খাবেন। কোনো প্রশ্ন করবেন না। ধর্মপ্রবর্তকরা তাই ঈশ্বরের নাম দিয়া নারীদের বিশ্বাস করাইছেন, স্বামীর সেবা করাই তার প্রধান কাজ। সন্তান জন্ম দেওয়া ও তাদের প্রতিপালন করাই নারীর দায়িত্ব। প্রচলিত ধর্মগুলি সময়ের হিসাবে আধুনিক হইতে থাকার পথে অর্থাৎ সনাতন ধর্ম থিকা ইসলাম, এইভাবে যদি দেখেন, দেখবেন, সনাতন ধর্মে নারীদের সবচাইতে নিচু ভাবে দেখানো হইলেও ইসলামে আইসা নারীরা কিছু অধিকার পাইছেন।

ক্যানো? কারণ সময়ের সাথে সাথে নারীরা পুরুষতান্ত্রিকতার অসাড়তা টের পাইছেন এবং ধর্ম ও সমাজের বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়াই উনারা নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হইছেন। সময়ের সাথে সাথে পুরুষতান্ত্রিকতাও টের পাইছে, নারীরা যেহেতু আগের চাইতে বুদ্ধিমান, তাই তাদের দিয়া শুধু সন্তান জন্ম দেওয়াইয়া ঘরে আটকায় না রাইখা উনাদের দিয়া ব্যবসা বাণিজ্য চাকরি বাকরি করাইলে তার নিজের লাভ।

আজকের দিনে মেয়েরা যতটুকু স্বাধীন, ততটুকু উনারা নিজেরা লাফাইয়া গলাবাজি কইরা স্বাধীন না, পুরুষতন্ত্রের লাভ আছে বইলা পুরুষতন্ত্র তাদের ঐ অতদূর লাফানোর ঐ অতদূর গলাবাজি করার ক্ষমতা দিয়া দূরে দাঁড়াইয়া মুখে বই চাপা দিয়া ফিক ফিক কইরা হাসছেন এই ভাইবা যে, “হ, নিজে আন্দোলন কইরা এই অধিকার আদায় করছো ভাইবা খুশি থাকো! আমি তোমারে সুযোগ না দিলে তুমি এই আন্দোলনের ‘আ’ বানান করার জায়গা পাইতা না, হিহি!”

হ্যাঁ, পুরুষতন্ত্র নিজের লাভ বিচার কইরা নারীদের সুবিধা দেওয়ার কারণে অনেকাংশে নারী আন্দোলন হইতে পারছে, নারীবাদের শুরু হইছে, তা অস্বীকার করার উপায় নাই। তাই প্রশ্ন উঠতে পারে, আজকের দিনে আমি পুরুষতন্ত্রের খাইয়া পইরা যদি পুরুষতন্ত্রের উচ্ছেদ চাই, তা কি আসলে পুরুষতন্ত্রের নিজের চাল? অর্থাৎ সময়ের হিসাবে পুরুষতন্ত্রের কি এখন আসলেই সময় ফুরাইয়া গেছে তাই সে নিজ থিকা আমাদের মত নারীবাদীদের উস্কায়ে দিতেছে পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করতে? আমি জানি না।

আমি শুধু জানি, পুরুষতন্ত্রের নিজের চাল হোক বা আমার স্বতন্ত্র ইচ্ছায় হোক, আমি পুরুষতন্ত্রের বিরোধিতা করলে তা যদি নারী পুরুষ ট্রান্সজেন্ডারের সমান অধিকার আদায়ের পথ সুগম কইরা দেয়, তাইলে আমি পুরুষতান্ত্রিক সিস্টেমে বইসাই তার বিরোধিতা করবো।

ডিয়ার শিশুগণ, আপনারা বেশিরভাগ আস্তিক, বেশিরভাগ বিশ্বাসী মানুষ। আপনারা আজকেই আবার খুব খেয়াল কইরা নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ পড়েন। দরকার হইলে দুই তিনটা প্রচলিত ধর্মের বই একসাথে নিয়া বসেন। খেয়াল কইরা দেখেন, আপনার ধর্ম সকল মানুষরে সমান অধিকার দিছে কীনা। না দিলে ক্যানো দেয় নাই?

খেয়াল করেন, নারীবাদ ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়া প্রশ্ন না তুললেও ধর্মগ্রন্থের বিরোধিতা করে ক্যানো? কারণ, ক্ষমতার রাজনীতিতে সামন্তবাদ তথা পুরুষতন্ত্রের প্রধান হাতিয়ার ছিলো ধর্মগ্রন্থ।

ঈশ্বর বিশ্বাস এবং ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস দুইটা আলাদা জিনিস। ঈশ্বর যদি সত্যি সত্যি থাকেন, তাইলে উনার পুরুষতান্ত্রিক ধর্মগ্রন্থ লেখার প্রয়োজন নাই। ঈশ্বর যদি থাকেন, তার পুরুষতন্ত্রের চাইতে মহানুভব হওয়ার কথা। ঈশ্বর যদি থাকেন, তার নিজের সৃষ্টির মধ্যে বিভেদ তৈরি করার কথা না। ঈশ্বর যদি থাকেন, তাইলে তার ক্ষমতালোভী, নিষ্ঠুর, একপাক্ষিক হওয়া সম্ভব না।

তাই নারী নির্যাতন ঠেকাইতে, নারী পুরুষ ট্রান্সজেন্ডারের সম অধিকার আদায় করতে হইলে আজকের আধুনিক সমাজে পুরুষতান্ত্রিকতা তথা ধর্মগ্রন্থের উচ্ছেদ জরুরী। ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস রাইখা নারী নির্যাতন বন্ধ করতে চাইলে তা গোড়া না উপড়াইয়া গাছের দুই তিনটা ব্যাঁকা ব্যাঁকা পাতা ছিঁড়া “আমার বাগানে আগাছা ক্যানো হয়” বইলা উদ্বাহু লাফাইয়া বেহুদা কান্নাকাটির মতো শোনায়।

আসেন, লম্বা গল্প থামাই এবং আজকের আলোচনা থিকা আমরা কী কী শিখলাম তা আরেকবার দেইখা নেই।

আমরা আজকে শিখলাম, পুরুষতন্ত্র মানে পুরুষ না। নারী পুরুষ ট্রান্সজেন্ডার সবাই পুরুষতান্ত্রিক হইতে পারেন। পুরুষতন্ত্রের প্রধান কাজ হইলো ক্ষমতা আদায়ের পথে দুর্বলের উপর অত্যাচার। নারীবাদীরা যদি পুরুষতন্ত্ররে উচ্ছেদ করতে গিয়া নিজেরা পুরুষদের উপর অত্যাচার শুরু কইরা দেন, সেইটাও পুরুষতন্ত্র হয়। শিখলাম, ধর্মগ্রন্থগুলি হইতেছে পুরুষতন্ত্রের হাতিয়ার। তাই পুরুষতন্ত্র উচ্ছেদের সাথে সাথে ধর্মগ্রন্থগুলির অসাড়তা প্রমাণ করা জরুরী। ধর্মগ্রন্থের সাথে সত্যিকার ঈশ্বরের সম্পর্ক নাই। এইক্ষেত্রে বইলা নেওয়া ভালো, একলা নারীবাদ পুরুষতন্ত্রের উচ্ছেদ করতে গেলে যেহেতু তার আরেকখান পুরুষতন্ত্রে রূপ নেওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর, তাই নারীবাদের সাথে সাথে সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদী বিপ্লবও জরুরী।

এখন দেখা যাক মানবতাবাদ কী এবং ক্যানো মানবতাবাদী হইতে গেলে আপনার আগে নারীবাদী হইতে হবে।

মানবতাবাদ জাতি ধর্ম বর্ণ গোত্র শ্রেণি লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকার দেয়। হ, খুব ভালো কথা। সেই হিসাবে প্রত্যেক সুস্থ মানুষের মানবতাবাদী হওনের কথা। কিন্তু যদি আজকের দিনের কথা খেয়াল করেন, তাইলে দেখবেন, পৃথিবীতে এখনো কোথাও মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা হয় নাই। পৃথিবীর কোনো ধর্মই সমকামীদের স্বীকার করে নাই, কিছুকিছু ক্ষেত্রে তাদের হত্যার নির্দেশ দিছে। বেশিরভাগ রাষ্ট্র তাদের নাগরিক অধিকার দেয় না। সমকামীরা ভালো কী খারাপ, প্রাকৃতিক কী অপ্রাকৃতিক এই আলাপে না গিয়াও যদি তাদের আমি শুধু মানুষ বইলা মনে করি, তাইলেও আমি মানবতাবাদী হইলে আমার সমকামীদের অধিকারের ব্যাপারে কথা কইতে হবে। পৃথিবীর কোনো ধর্মই বিনাবিচারে একজন খুনী বা ধর্ষকরেও খুন কইরা ফেলতে হুকুম দেয় না, অথচ বেশিরভাগ ধর্মগ্রন্থেই সমকামীদের হত্যার নির্দেশ আসছে। তাই সমকামী মানুষ এবং নারীদের সমান অধিকার আদায়ের সাম্যবাদী এবং নারীবাদী আন্দোলন সফল না হইলে আপনার মানবতাবাদী হওয়ার প্রশ্নই আসে না।

অফ টপিক হিসাবে বলি, সাম্যবাদ একটা সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, যা পুঁজিবাদ এবং সাম্রাজ্যবাদরে ভাইঙ্গা সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে চায়।

তাই প্রিয় ফেইসবুকিয় শিশু-কিশোররা, আপনারা নিজেদের সুস্থ, স্বাভাবিক এবং বুদ্ধিমান মানুষ বইলা স্বীকার করলে নিজেদের নারীবাদী বলতে লজ্জা পাবেন না এবং দুর্বলের উপর অত্যাচারের ক্ষমতার রাজনীতির বিরোধিতা করতে চাইলে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াইতে ভয় পাবেন না আশা করি।

ভালো থাকবেন। আজকের ক্লাস এখানেই শেষ। ঠিকঠাক মতো হোমওয়ার্ক করবেন, নারীবাদ এবং পুরুষতন্ত্র নিয়া বাসায় লেখাপড়া করবেন। ধর্মসঙ্ক্রান্ত বিশ্বাসে আঘাত লাগলে ধর্মের বইগুলি অনুবাদ ও ব্যখ্যা সহকারে বারবার পড়বেন। তাতে ধর্মগ্রন্থের সুচতুর চাপাবাজি সহজে ধরতে পারবেন নিশ্চই। আগামীতে আবার দেখা হবে। আজকের মত বিদায়।

শেয়ার করুন: