তানিয়া কামরুন নাহার:
আপনারা জানেন, শিশুদের, এমনকি নবজাতকদের প্রতিও যৌন আকর্ষণ বোধ করার মানসিক রোগের নাম পেডোফিলিয়া। এমন বিকৃত রোগে আক্রান্ত পেডোফাইলরা শিশুদের যৌন নিগ্রহ থেকে শুরু করে ধর্ষণ পর্যন্ত অনেক সময় করে থাকে।
অবশ্য আমাদের দেশে মেয়েদের বাল্য বিয়ে খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। শিশুর বাবা–মা–ই বেশির ভাগ সময় বাল্য বিয়ের আয়োজন করে থাকে। এভাবেই সমাজ এই বাল্য বিয়ের মাধ্যমে পেডোফিলিয়াকে এক রকম বৈধতাই দিয়ে আসছে। সেও বহুকাল আগে থেকে এখানে ঘটে আসছে।
এবার আসি চাইল্ড পর্নোগ্রাফির প্রসংগে। খুব আগ্রহ নিয়ে ও মনোযোগ দিয়ে এটা অনেকেই উপভোগ করে থাকে। এরকম বিকৃত বিনোদনের দর্শকের মানসিকতাও যে একপর্যায়ে বিকৃতির দিকেই যাবে, এটা তো আর বলে দিতে হয় না!
পেডোফিলিকদের প্রতি রাগ ক্ষোভ ঘৃণা ঝেড়ে অনেক সময় আমরা উপদেশ দিই :
এতোই যখন লালসা, যৌনকর্মীদের কাছে গেলেই তো পারিস! কিন্তু যৌনকর্মীদের প্রতি তাদের রুচি নেই, তাদের আকর্ষণ শিশুদের প্রতিই। আবার আমাদের দেশে অনেক শিশুদেরকেও এই পেশায় কাজ করতে জোর করে বাধ্য করা হয়। এইসব পেডোফাইলরা যদি যৌনকর্মীদের কাছেই যায়, তবে তারা কি প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে যাবে বলে আপনাদের মনে হয়? নিশ্চয়ই না। ফলে অপ্রাপ্তবয়স্ক যৌনকর্মীদেরই চাহিদা বেড়ে যাবে। শিশুদেরকে এভাবে আমরা আরো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছি।
এছাড়াও শিশুরা বেশির ভাগ সময় বোঝেই না যে সে নিগ্রহের শিকার হচ্ছে। একবার নিগ্রহের শিকার হলে, তার ঝুঁকি আরো বেড়ে যায়। শিশুদের সহজে ভয়/লোভ দেখানো যায়, ব্ল্যাকমেইল করা যায়। ওরা দূর্বল। এগুলোর প্রতিবাদ কিভাবে করা যায়, তারা বুঝতে পারে না। আবার বড়রাও ছোটদের কথার গুরুত্ব দেয় না। এ কারণে শিশুদের মধ্যে যৌন নিগ্রহে আক্রান্তের ঝুঁকির আশংকা বেশি । আমরা এমন এক পেডোফিলিয়ার চক্রে আবদ্ধ হয়ে গেছি এর থেকে সহসা বের হয়ে আসার পথ আমাদের জানা নেই।
তবে যেসব পরিবারে বাবা– মায়ের সাথে শিশুদের সম্পর্ক সহজ, বন্ধুত্বপূর্ণ সেখানে এরকম ঝুঁকি অনেক কমে যায়। কেননা এসব পরিবারে সন্তানের সাথে বাবা-মায়ের সুসম্পর্ক থাকায় বাবা-মায়েরা সহজে সন্তানদের ভালো ও মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন। সন্তানেরা সহজেই সব কিছু বাবা-মায়ের সাথে শেয়ার করতে পারে। তাই পারিবারিক বন্ধন, বাবা–মা–সন্তানের সুসম্পর্কের দিকে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে।