সাদিয়া অন্তরা:
না, নতুন কোন বাংলা ছবি মুক্তি পাচ্ছে না। এই কথাটাই মনে হলো যখন আমার চোখে পড়লো ছেলেমেয়েগুলোর অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর সাহস। বলছিলাম চট্টগ্রামে চারুকলার শিল্পকর্ম নষ্ট করা নিয়ে।
কয়দিন ধরে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা বা না করা নিয়ে অনেক তর্ক -বিতর্ক চোখে পড়ছে। ভেবেছিলাম চুপ থাকবো।কিন্তু পরশু রাতের ঘটনার পর আর স্থির থাকতে পারলাম না। কাপুরুষতারও একটা সীমা আছে, যেটা মনে হয় আমরা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। জাতি হিসেবে আমরা অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। নিজ নিজ পিঠ চাপড়ে নিন এবার।

কী এমন ক্ষতি করেছিলো চিটাগাং এর ওই রঙিন দেয়াল চিত্রগুলো? এতোগুলো ছেলেমেয়ে নিজেদের সময় ব্যয় করে, রোদের মাঝে কষ্ট করে ছবিগুলো এঁকেছিলো। রাতের আঁধারে কে বা কারা এসে ছবিগুলোর উপর পোড়া মবিল ছড়িয়ে সব ছবি নষ্ট করে যায়। এটা কী ধরনের মানসিকতার পরিচয়, নাকি হিংসা যে তারা ওই ছেলেমেয়েদের মতো সুন্দর ছবি আঁকতে পারে না!!
কীসের এতো রাগ? ভালো লাগেনি। দেখবেন না। আজ বাদে কাল পহেলা বৈশাখ সেজন্যই তো আঁকা, অন্য কোনো উদ্দেশ্য তো ছিলো না, আর এই ছবিগুলো এমনিতেই কয়দিন পরে ম্লান হয়ে যেতো রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে। মানুষ মনেই রাখতো না যে এখানে কোন চিত্রকর্ম ছিলো। কিন্তু এখন মানুষের অন্তরে গেঁথে যাবে এর কথা, ওই রাতের আঁধারে আসা লোকগুলোর কাপুরুষতার কথা। সেখানে কী করে মবিল ছিটাবেন!!
তবে দমে যায়নি কেউ। ছেলেমেয়েগুলি সেই মবিল এর দাগের উপর আবার নিজেদের তুলির আঁচড়ে রঙিন ছবি ফুটিয়ে তুলেছে। দেয়াল কলুষিত করতে পারবেন হয়তো পোড়া মবিল ঢেলে, কিন্তু মানুষের মন নয়।

দেশটা তো কারো একার না। আপনাদের ইচ্ছা, অনিচ্ছা আরেকজনের উপর চাপিয়ে দিলেই যে সব আপনার মন মতো হবে সেটা ভাবাই বোকামি। আমরা এতো কিছু জানি কিন্তু সহনশীলতা, সহমর্মিতা এর ছিঁটেফোটাও আমাদের মাঝে নেই। যারা অন্ধকারে, চোরের মতো এসে এই কাজ করেছে, আমি নিশ্চিত যে বাসায় তাদের নতুন জামা কেনা আছে বৈশাখ এর জন্য, তারাও সেদিন বের হবে আনন্দ করার জন্য। তাই তো লুকিয়ে এসেছিলো, পাছে কেউ তাদের পহেলা বৈশাখ এর দিন নতুন জামা পরে, একতারা হাতে ‘সেলফি’ তুলতে দেখে ফেলে!
কী লাভ হয়েছে!! পেরেছে মনোবল গুড়িয়ে দিতে, পেরেছে নষ্ট করতে আনন্দ? পারেনি, পারবে না। বাঙালি কখনো হারেনি, হারবেও না, পারলে ঠেকাও তাদের….