উইমেন চ্যাপ্টার: নারী শিক্ষা আন্দোলনের অন্যতম কর্মী পাকিস্তানের কিশোরী কন্যা মালালা ইউসুফজাই বলেছেন, ‘একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি কলম এবং একটি বই বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। শিক্ষাই একমাত্র সমাধান, শিক্ষাই সর্বপ্রথম’। ১২ জুলাই জাতিসংঘে দেয়া এক ভাষণে মালালা একথা বলেন। তিনি সবশিশুর জন্য অবৈতনিক শিক্ষা নিশ্চিত করার আবেদন জানান বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি।
মালালা ইউসুফজাই এর ১৬ তম জন্মদিন ছিল ১২ জুলাই। এ দিনটিকে জাতিসংঘ ‘মালালা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
মালালা বলেন, মালালা ডে, এটা আমার দিন না। এই দিনটি প্রতিটি নারীর, প্রতিটি ছেলের এবং প্রতিটি মেয়ের, যারা তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। হাজার হাজার মানবাধিকবার কর্মী আছেন, সমাজ কর্মী আছেন, যারা কেবল অধিকারের কথাই বলছেন না, তারা তাদের শিক্ষা, শান্তি ও সমতার লক্ষ্য অর্জনে প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছেন। হাজার হাজার মানুষ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হচ্ছেন, লাখ লাখ আহত হচ্ছেন, আমি তাদেরই একজন মাত্র। কাজেই এখানে আমি দাঁড়িয়ে আছি অনেকের একজন হয়ে। আমি শুধু নিজের জন্য বলছি না, তাদের জন্য বলছি, যাদের কথা শোনা যায় না, যারা অধিকারের জন্য লড়ছে, যারা লড়ছে শান্তিতে থাকার জন্য, সমান অধিকারের জন্য, সমান সুযোগ, শিক্ষার অধিকারের জন্য। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবরে তালেবান আমার ওপর গুলি চালায়, আমাকে আহত করে, আমার বন্ধুকেও আহত করে। তারা ভেবেছিল তাদের বুলেট আমাদের মুখ বন্ধ করে দেবে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে।
সন্ত্রাসীরা ভেবেছিল তারা আমাদের লক্ষ্যকে বদলে দেবে, থামিয়ে দেবে আমাদের স্বপ্নকে। কিন্তু পারেনি। আমার জীবনে কোন পরিবর্তনই আনতে পারেনি। বরং সমস্ত দুর্বলতা, ভয়, আশাহীনতা কেটে গিয়ে সেখানে জন্ম নিয়েছে শক্তি আর সাহস।
আমি সেই আগের মালালাই আছি, সেই আশা, সেই স্বপ্ন, সবই আছে আগের মতো। আমি কারও বিরুদ্ধে না। এমনকি তালেবান, যারা আমাকে গুলি করেছিল, আমি তাদেরও ঘৃণা করি না। এমনকি আমার হাতে যদি বন্দুক থাকে, আর সেই তালেবান এসে আমার সামনে দাঁড়ায়, আমি তাকে কখনই গুলি করবো না। আমার শক্তির উৎস আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স:), যীশু খ্রিস্ট, মহান বুদ্ধ, আমার অনুপ্রেরণা মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা, মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
‘প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকারের কথা বলছি আমি। আমি চাই, প্রতিটি তালেবান বা সন্ত্রাসীদের ছেলেমেয়েরাও যেন পড়ার সুযোগ পায়। এটা খুবই সত্য যে, কলম তরবারির চেয়েও শক্তিশালী। চরমপন্থীরা বইকে ভয় পায়। শিক্ষার শক্তি তাদেরকে ভীত করে। তারা নারীকে ভয় পায়। নারীর কণ্ঠস্বরের শক্তি তাদেরকে ভীত করে।
বক্তব্যের শুরুতে মালালা তার আহত অবস্থায় সবার ভালবাসা পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি বিশ্বাস করতে পারেন না ঠিক কি পরিমাণ ভালবাসা পেয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার সুস্থতা কামনা করে সুদৃশ্য কার্ড পাঠানো হয়েছে। তিনি সবার প্রতি, বিশেষ করে পাকিস্তান এবং যুক্তরাজ্যের সব চিকিৎসক, নার্সের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় তার পরনে ছিল হালকা গোলাপি রংয়ের সালোয়ার-কামিজ। আর ওপরে জড়ানো ছিল পাকিস্তানের শহীদ প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভূট্টোর একটি শাল।
মালালা বলেন, ‘আজ আমি নারীদের অধিকার এবং মেয়েশিশুর শিক্ষা নিয়ে কথা বলছি, কারণ তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এমন একটি সময় ছিল যখন নারী সমাজকর্মীরাই পুরুষদের অনুরোধ জানাতো তাদের অধিকারের জন্য লড়াইয়ে শামিল হতে। কিন্তু এখন আমরা নিজেরাই সব করবো। আমি বলছি না যে, পুরুষরা নারীর অধিকার বিষয়ে কথা বলা থেকে পিছিয়ে যাবে, কিন্তু বলছি যে, নারীরা যেন নিজেদের যোগ্যতা দিয়েই তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারে’।
মালালা বলেন, প্রতিটি শিশুর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা চাই স্কুল এবং শিক্ষা। সবার জন্য শান্তি এবং শিক্ষার লক্ষ্য নিয়ে আমরা আমাদের যাত্রা অব্যাহত রাখবো। কেউ আমাদের দমাতে পারবে না। আমরা কথা বলবো আমাদের অধিকারের জন্য এবং আমরা আমাদের এই লড়াই দিয়েই পরিবর্তন আনবো। আমাদের নিজেদের কথায় এবং শক্তিতে বিশ্বাস করতে হবে। আমাদের শব্দই বদলে দিতে পারে পুরো বিশ্বকে’।
অধিবেশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন মালালার মা-বাবা ও ছোট ভাই।
মালালার জাতিংঘের বক্তৃতার ভিডিও: