রাহিমা আক্তার: হলরুম গিজগিজ করছে আমন্ত্রিত অতিথিতে। অসংখ্য নারী, পুরুষ আর শিশুদের গুঞ্জনে কিছু শোনা দুষ্কর। মঞ্জুসার কপালে পড়া দুঃশ্চিন্তার ক্ষীণ ভাঁজ ক্রমান্বয়ে স্পষ্ট হতে শুরু করল। সকাল দশটায় প্রধান অতিথি আসার কথা এবং অনুষ্ঠান শুরু করার কথা, অথচ এখন বাজে এগারোটা।
–রনিকা, তুমি মালিহা আপার মোবাইলে চেষ্টা করছো তো?
–জী আপা, তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
–আবার দেখো।
রনিকা বারবার রিডায়াল করে তার হাতের আঙ্গুলে ব্যথা বানিয়ে অবশেষে বিখ্যাত সমাজসেবি মালিহা হোসেনের ফোনে ঢুকতে পারলো।
– স্লামালাইকুম আপা, আমি ”পথ দিশারির” প্রোগ্রাম অফিসার রনিকা ইসলাম বলছিলাম, আপা আপনি আসছেন তো?
–হ্যাঁ, রনিকা আমি রওনা দিয়েছি, মিনিট বিশেকের মধ্যেই পৌঁছে যাবো। সরি, একটু দেরি হয়ে গেল আমার।
–না না আপা, ঠিক আছে, তেমন আর দেরি কোথায়, আপনি এত ব্যস্ত মানুষ! ধন্যবাদ আপা, অনেক ধন্যবাদ ।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রনিকা মঞ্জুসাকে খবরটা দিল। মঞ্জুসা রনিকাকে বললো মাইকে ঘোষণা দিতে যেন অতিথিরা আর একটু ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করে।
মঞ্জুসার ছোট্ট সংগঠন। শিশুদের জন্য কাজ করে। তেমন কোন বড় অনুদান নেই, সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য ছোট্ট একটা অনুদান পেয়েছে এ বছর। শিশু অধিকার সপ্তাহ পালন উপলক্ষে আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজনে যে কত কষ্টে করতে হয়েছে তাকে। শিশুদের আগ্রহেই আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। বাজেট নেই, তবুও অন্য খাত থেকে অর্থ নিয়ে ও সব কর্মকর্তা-কর্মচারী চাঁদা দিয়ে এ আয়োজন।
মালিহা আপাকে অনেক কষ্টে নানা জনকে ধর্ণা দিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে রাজি করান গেছে, সাথে শীর্র্ষ দৈনিক ”সময়” থেকে সাংবাদিক তৌফিক ভাইকে। ছোট সংগঠনে উনাদের মত বড় বড় মানুষেরা আসতে চান না।
অনুষ্ঠানে আসা অসংখ্য দরিদ্র শিশুদের দিকে তাকিয়ে মঞ্জুসার মন একটু মলিন হয়ে যায়। তার সংগঠন যদি অনেক বড় ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতো তবে সে এ সকল ছিন্নমুল শিশুদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী কোন শিক্ষা কর্মসুচি নিতে পারতো। ইচ্ছে আছে অথচ সামর্থ্য নেই, হয়তো এক সময় সামর্থ্য হবে, কিন্তু তখন মঞ্জুসার এই ইচ্ছেটা আর নাও থাকতে পারে।
অবশেষে বেলা এগারটা চল্লিশ মিনিটে মালিহা হোসেন এসে পৌঁছালেন। অপেক্ষায় ক্লান্ত শিশুরা তাকে বিপুল করতালিতে স্বাগত জানালো, যদিও তারা ভেবে পাচ্ছিলো না এই আপার আসার দেরি দেখে কেন অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছিল না। মঞ্জুসা মালিহা হোসেন ও তৌফিক চৌধুরীকে মঞ্চে নিয়ে বসিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করলো। মালিহা হোসেন শুরুতেই মঞ্জুসাকে বলে নিলেন যে, তিনি অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ সময় জুড়ে থাকবেন না, তার বক্তব্য শেষ হলেই তিনি চলে যাবেন।
মঞ্জুসা স্বাগত বক্তব্য দেওয়ার সময় সাংবাদিক তৌফিক ও মালিহা হোসেন আলাপচারিতায় মগ্ন হলেন।
–আপা আপনি আসবেন বলেই আমি এসেছি। আমি শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষ্যে আপনার একটা সাক্ষাৎকার ছাপাতে চাই। আমাকে একটু সময় দিতে হবে। কখন ফ্রী আছেন আপনি ?
– ফ্রী! আর বলো না ভাই, এত ব্যস্ত থাকতে হয়।
– চল্লিশ মিনিট হলেই চলবে। শিশু অধিকার সপ্তাহের আর আছে তিনদিন, এর মধ্যেই ছাপাতে চাই। আমাকে সময় দিতেই হবে আপা।
–মুশকিলে ফেললে তৌফিক….দাঁড়াও…হু, আজ সন্ধ্যায় আমার একটা টিভি প্রোগ্রাম আছে, দেখবো ভাবছি, বাসায় থাকবো, চলে এসো। ঠিক সাড়ে ছটায় এসো ভাই।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেওয়ার সময় শিশু অধিকারের নানা দিক বলতে বলতে আবেগী হয়ে উঠলেন মালিহা হোসেন। তিনি বললেন যে, তিনি সব সময় শিশুদের, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের যেকোনো বিষয় প্রাধান্য দেন। এই সব শিশুদের কথা ভেবেই অন্য একটি বড় সংগঠনের প্রোগ্রাম পিছিয়ে দিয়ে এখানে এসেছেন তিনি। এই সব শিশুদের সুন্দর শৈশব, অধিকার আর শিক্ষাসহ অন্যান্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার কথা বলতে বলতে তার চোখে পানি এসে গেল। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিরা নিশ্চুপ হয়ে গেল। মঞ্জুসা আর তরুণ সাংবাদিক তৌফিক শ্রদ্ধায় বিমোহিত হল। মঞ্জুসা বললো, আপার মনটা খুবই নরম, শিশুদের প্রতি তার অসীম ভালবাসা। শিশু অধিকার রক্ষায় আপা সবসময় কাজ করে যাচেছন।
আলোচনা পর্ব শেষ হতেই মালিহা হোসেন যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। মঞ্জুসা অনেক অনুরোধ করল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বটুকু দেখে যাওয়ার জন্য, শিশুরাই পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনা ও অংশগ্রহণ করবে। অনেক অনুরোধে মালিহা হোসেন সূচনা পর্ব দেখতে বসলেন।
রনিকা মঞ্জুসাকে ডেকে নিয়ে মালিহা হোসেনকে সম্মানি প্রদানের ব্যাপারে জানতে চাইলো। রনিকা বললো, আপাকে সম্মানির টাকাটা এখনই দিয়ে দেবো, না পরে পাঠাবো? মঞ্জুসা বললো, আপা কি আর টাকা নেবে? শিশুদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠান আর আমাদেরও ছোট সংগঠন। আমার বিশ্বাস, আপা সম্মানি বাবদ কোন টাকা নেবে না। তারপরও তুমি অফার কর।
মালিহা হোসেন শিশুদের প্রথম দলীয় সঙ্গীত শুনেই উঠে পড়লেন। রনিকা গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে দিতে বললো, আপা আপনি আমাদের অনুষ্ঠানে এসেছেন আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। একটু ইতস্তত ভাব নিয়ে রনিকা হাতে ধরা খাম উঁচু করে বলল, আপা আপনার সম্মানিটা কি এখনই দিয়ে দেব না পরে পাঠিয়ে দেব?
মালিহা হোসেন মিষ্টি করে হেসে বলল, না না কষ্ট করে আর বাসায় পাঠাতে হবে না। খামটা হাতে ধরে মালিহা হোসেন রনিকা আর মঞ্জুসাকে ধন্যবাদ দিতে ভুললেন না। মঞ্জুসার বিস্মিত দৃষ্টির উপর হাত নেড়ে মালিহা হোসেনের গাড়ি সাঁই করে বেরিয়ে গেল। দরিদ্র শিশুদের কথা বলতে যেয়ে যার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে সে কিভাবে শিশু অনুষ্ঠানে ঘন্টাখানেক সময় ব্যয়ের বিনিময়ে সম্মানিটা এক কথায় অবলীলায় নিয়ে নিতে পারে তা তার মাথায় ঢোকে না !
গাড়িতে বসে মালিহা হোসেন খামটা খুললেন। খামে নতুন ছটা পাঁচশত টাকার নোট দেখে তার ভুরুতে বিরক্তির ভাঁজ পড়লো। বাসায় ফিরে মেজাজটা আরো চটে গেল কারণ সলিমা ড্রয়িং রুমে কর্নারে রাখা সিঙ্গাপুর থেকে আনা ক্রিস্টালের শোপিসটা ভেঙ্গে ফেলেছে।
সন্ধ্যায় মালিহা হোসেন টিভি ছেড়ে বসলেন। সাতটায় শিশু অধিকার বিষয়ক টক্ শো আছে যেটাতে মালিহা অংশগ্রহণ করেছেন। তৌফিক আসবে সন্ধ্যা সাড়ে ছটায়। সিনিয়র সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে মালিহা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এসব তরুণ সাংবাদিকদের ভেতর উত্তেজনা বেশী কাজ করে। এদের সাথে কথা বলতে হয় হিসেব কষে।
ছটা চল্লিশে ডোর বেল বাজল। তৌফিক আর সাথে আরো একজন।
–স্লামালাইকুম আপা।
–এসো তৌফিক, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
– পরিচয় করিয়ে দেই…এ হলো শফিক, ফটো সাংবাদিক। আপনার দু-একটা স্নাপ নিতে হবে তাই ওকে নিয়ে আসলাম।
– ড্রয়িং রুমের দেয়ালে টানানো একটি পেইন্টিং দেখে তৌফিক মুগ্ধ হলো… ছবিতে দু বছরের একটি শিশু পেছন দিক থেকে তার মায়ের গলা জড়িয়ে স্বর্গীয় হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে আছে…।
আপা, আমি বর্তমানে বাংলাদেশে শিশু নির্যাতনের চিত্র, কারণ ও শিশু নির্যাতন বন্ধ করতে আমাদের করণীয় বিষয়ে আপনার মতামত নেব।
তৌফিকের সাথে বর্তমানে শিশু নির্যাতন, শিশু পাচার বিষয়ক আলোচনার ফাঁকে সাতটা বেজে গেল…..টক শো শুরু হয়ে গেল। টক শো দেখতে দেখতেই আলাপ এগিয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ সলিমা খুব ধীর পায়ে হেঁটে ড্রয়িং রুমে এসে ঢুকলো, যেন হাঁটতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। মালিহা হোসেন একটু যেন চঞ্চল হয়ে উঠলেন এবং জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সলিমার দিকে তাকালেন।
-ছোট আপা পেপার নিতে পাঠাইছে।
পেপার খুঁজে হাতে নিতে নিতেই সলিমার চোখ পড়লো টিভির উপর। আনন্দে উচ্চ স্বরে বললো, হায় আল্লাহ, খালাম্মারে টিভিতে দেখাইতাছে। বলেই সে কার্পেটের উপর বসে পড়লো। মালিহা হোসেন কিছু বলতে পারলেন না, সামনে তৌফিক বসে আছে। দশ বছর বয়সী সলিমাকে দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে যে সে এ বাসার কাজের মেয়ে।
টিভিতে তখন মালিহা হোসেন ঘরে বাইরে শিশুদের নির্যাতনের বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরছেন। শিশুদের শারীরিকভাবে মারধর করা, মানসিকভাবে নির্যাতন করা কিভাবে একটি শিশুর সুস্থ বিকাশকে ব্যাহত করে তা বর্ণনা করে চলেছেন। কর্মরত শিশুদের ব্যাপারে তিনি বললেন যে, যার অধীনে শিশু কাজ করবে তিনি শিশুর অভিভাবক এবং অভিভাবককেই শিশুর নিরাপত্তার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতে হবে। এবং এ ব্যাপারে তিনি শিশু অধিকার সনদের বিভিন্ন ধারা আলোচনায় নিয়ে আসলেন।
হঠাৎ ভেতরের ঘর থেকে উচ্চস্বরে সলিমার নাম ধরে কেউ ডাক দিল। সলিমা পেপার নিয়ে দ্রুত ছুটতে যেয়ে ঘরের মাঝখানে রাখা টি-টেবিলের কোনায় জোরে হোঁচট খেয়ে চিৎকার দিয়ে মেঝেতে গড়িয়ে পড়লো। তার হাঁটুর উপরের দিক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তৌফিক, শফিক দ্রুত সলিমার কাছে ছুটে গেল, সাথে মালিহা হোসেনও।
তৌফিক সলিমার ফ্রক উঁচু করে কোথা থেকে রক্ত পড়ছে তা দেখতে গিয়ে বিস্ময়ে শিউরে উঠলো। সলিমার ঊরুতে আড়াআড়ি কালচে দাগ পড়ে আছে, যে কেউ দেখলে বুঝবে এগুলো মোটা বেত বা স্কেলের আঘাতের চিহ্ন। দাগগুলোর আর একটু উপরে একটা দগদগে মাঝারি আকারের পোড়া ঘা যেখানে টেবিলের কোনায় বাড়ি লেগে দরদরিয়ে রক্ত পড়ছে।
শফিকের ক্যামেরা আপনা থেকেই ক্লিক ক্লিক শব্দে ছুটে যেতে লাগলো সলিমার আঘাতের উপর একের পর এক। তৌফিক সলিমাকে জিজ্ঞেস করলো, এগুলো কিসের চিহ্ন? সলিমা ভীত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। তার জল গড়ানো চোখের দৃষ্টি বলে দিচ্ছে যে সে বুঝে উঠতে পারছে না চিহ্নের কারণ প্রকাশ তার জন্য আরো নির্যাতন বয়ে আনবে কিনা!
মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই ঐ নিষ্পাপ দৃষ্টিতে। অনেক আস্থা আর মাথায় হাত রেখে নির্ভরতার শপথ করে তৌফিক জানতে পারলো আজ সকালে একটি শোপিস্ ভেঙ্গে ফেলায় খালাম্মা দুপুরে ফিরে তাকে স্টিলের স্কেল দিয়ে পিটিয়েছে আর পরশু দিন দুধ পুড়িয়ে ফেলার অপরাধে খালাম্মা তাকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দিয়েছে। এছাড়া তাকে কখনোই পেট পুড়ে খাবার দেওয়া হয় না। সলিমার জামা খুলে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেল।
মালিহা হোসেন অস্থির হয়ে তৌফিককে বোঝাতে গেল – পত্রিকায় খবরটা না ছাপানের জন্য তৌফিক যা চাইবে তাতেই তিনি রাজি। তৌফিক শান্তদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, আপনার মত ঐ লোক দেখানো অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই আমি করি না, তবে যেখানে চাকরি করি সেখানে প্রতারণা করি না মানুষের সাথে, প্লিজ আমার প্রফেশনাল কাজটা আমায় করতে দিন। কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজনকে ডেকে আনলো এবং অন্যান্য দৈনিকগুলোতে ফোন করলো, থানায় খবর দিতে বললো। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ, সাংবাদিক, টেলিভিশনের নানা চ্যানেলের লোকজনে পুরো বাড়ি ভরে উঠল।
তৌফিক যখন মালিহা হোসেনের বাড়ির সিঁড়ি ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে এলো তখন রাতের ঢাকা শহরের অন্য এক ধরনের রুপ, ব্যস্ততা কমে যাচ্ছে, সবাই ঘরে ফিরছে, কেমন অচেনা লাগছে শহরটাকে আজ। হাঁটতে হাঁটতে তৌফিক ভাবছিল মানুষের ভেতরের অন্ধকারের কথা। যে অন্ধকার অধ্যায় অনেক সময়ই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে সমাজটাকে ঘুণপোকার মতই ধ্বংস করছে। মানুষের ভেতর আর বাহিরের রূপের কতো ব্যবধান! মুখোশের আড়ালে এতো অন্ধকার!
এদিকে রাতের খবর দেখতে বসে মঞ্জুসা বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেল। সমাজসেবি মালিহা হোসেনকে শিশু নির্যাতনের দায়ে পুলিশ গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে, শারীরিকভাবে নির্যাতিত তার বাসার দশ বছর বয়সি গৃহকর্মীকে সলিমাকে পুলিশি হেফাজতে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ! মঞ্জুসার মাথায় কিছু কাজ করছিল না। কেবল অনুষ্ঠানে মালিহা হোসেনের দেওয়া শিশু অধিকার সনদের ধারাগুলো তার মাথা ভেদ করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাতাসে উড়ে যাচ্ছিল।
“তৌফিক যখন মালিহা হোসেনের বাড়ির সিঁড়ি ভেঙ্গে রাস্তায় নেমে এলো তখন রাতের ঢাকা শহরের অন্য এক ধরনের রুপ, ব্যস্ততা কমে যাচ্ছে, সবাই ঘরে ফিরছে, কেমন অচেনা লাগছে শহরটাকে আজ। হাঁটতে হাঁটতে তৌফিক ভাবছিল মানুষের ভেতরের অন্ধকারের কথা। যে অন্ধকার অধ্যায় অনেক সময়ই লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে সমাজটাকে ঘুণপোকার মতই ধ্বংস করছে। মানুষের ভেতর আর বাহিরের রূপের কতো ব্যবধান! মুখোশের আড়ালে এতো অন্ধকার!” —এটাই নির্মম বাস্তবতা। এটাইতো আমরা দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। পুরো গল্পটাই যেনো এক অসাধারণ সত্যের মোড়ক উন্মোচন !