হ্যাঁ, আমি একজন ডিভোর্সি মেয়ে বলছি

ফাহরিয়া ফেরদৌস: ডিভোর্স হয়েছে, আর তার একটু কারণ লিখেছি বলে ভাববার কোনো কারণ নেই যে আমি জীবন নিয়ে খুব ব্যথিত ও আহত। আর একজন মানুষ আমাকে ছেড়ে চলে যাবার কারণে আমি নারী “জলে ভাসা পদ্ম” হয়ে গিয়েছি!

Fahriya 2একজন নারী যদি গর্ভধারণ করে একজন মানুষ পৃথিবীতে নিয়ে আসতে পারে, তবে একজন ডিভোর্সি মেয়ের সমাজে বেঁচে থাকা, টিকে থাকাও খুব কঠিন না। এখন আর সেই যুগ নয় যে  “পেলাম শুধুই ছলনা” এই গান গাইতে গাইতে জীবন শেষ করে দিব।

সমাজে যদি খুনি প্রকাশ্যে হত্যা করে ও প্রকাশ্যে ঘুরেও বেড়াতে পারে; রাজনৈতিক নেতারা প্রকাশ্যে গলাবাজি করতে পারে, আর সেখানে বসে হাজার মানুষ হুজুর হুজুর করে তালি দিতে পারে, পত্রিকায় নিউজ হতে পারে, স্কুলের বাচ্চা ছেলেমেয়ে ফিল্মি স্টাইলে চুমু খেয়ে ভিডিও করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দিতে পারে, সমাজের মানুষ সেটাকে সাপোর্ট করে লিখা লিখতে পারে, তবে ডিভোর্স নিয়ে কেনো লেখা যাবে না!

এটিও একটি সমস্যা। পরিবার এখন আর ইনিস্টিটিউশান হিসাবে কাজ করছে না। তাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এই বিষয়ে কথা বলা যে, সমস্যাটা কোথায়? “প্রতিদিন কতদিন খবর আসে যে কাগজের পাতা ভরে, জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে”, এখন আর সেই যুগ নেই, জীবন খাতার খবর নিয়ে আসুন সবার সামনে যে কী হচ্ছে, সমাজকে জানান, আপনি যত বলবেন মানুষ ও আইন প্রয়োগকারীগণ জানবে যে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে নির্যাতনের ধরন।

মানুষ যদি ফেসবুকে বয়ফ্রেন্ড আর স্বামী নিয়ে ভালোবাসার কথা লিখতে পারে, ছবি দিতে পারে, নজর যেন না লাগে সেজন্য মাশআল্লাহ্‌ বলে অন্য মানুষ কমেন্ট দিতে পারে, তবে কেন একজন মানুষ সমস্যার কথা লিখতে পারবে না!

ছবিতে “তোমারে লেগেছে এতো যে ভালো চাঁদ বুঝি তা জানে” এই গান যেমন আছে, আবার “প্রেমেরই নাম বেদনা এ কথা বুঝিনি আগে” এই গানও আছে; ভালোবাসা ও বিচ্ছেদ দুটোই জীবনের অংশ, তাই দুটোই লিখা যাবে।

বর্তমানে এমন কোন পরিবার নেই যেখানে ডিভোর্স বিষয়টি নেই!    

আবার এখনো আমাদের ধারণা ডিভোর্স মানেই কোন একজনের চরিত্রে সমস্যা। এখন ছেলেমেয়েরা উভয়ের সম্মতিতেও ডিভোর্স  নিচ্ছেন। ছলনা করে বেঁচে থাকার চেয়ে, সত্যি কথা বলে দূরে থাকা ভালো। ফেসবুকে হাসি দেয়া ছবি দেখে সত্যিকারের সুখী পরিবার নির্ণয় করা কঠিন।

বরং আমি তো আমার এক্স-হাজব্যান্ডকে ধন্যবাদ দেই যে, অনেক পুরুষের মতো আমাকে বউ হিসাবে ঘরে রেখে বাইরে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন দীর্ঘায়িত না করে চলে গেছে!  

আমি আমার ডিভোর্সের কথা লিখেছি, সমবেদনা পাবার জন্য নয়; অনুপ্রেরণা পাবার জন্য ও অনুপ্রাণিত করার জন্য, যে জীবন অনেক সুন্দর। কোনো মেয়ে যেন শুধুমাত্র এই ডিভোর্সের জন্য ডিপ্রেশানে চলে না যায় বা নিজের জীবন শেষ করে না দেয়।

Divorceআমাকে সমবেদনা দেখানো বন্ধ করে যে সমস্যার কথা লিখেছি তাতে মনোযোগ দিন, জেনে নিন কী ধরনের সমস্যা হয় তালাকের সময় বা পরে, সাহায্য করুন আপনার বোন, বন্ধু বা সহকর্মীকে, অনুপ্রাণিত করুন তাকে। তাকে অসম্মান করা বন্ধ করুন।

ডিভোর্সি মেয়েদের সমাজের মানুষ খুব সস্তা ভাবে, আসলে যেটা আমরা নই! টাকার গায়ে যেমন লিখা থাকে “চাহিবা মাত্র বাহককে দিতে বাধ্য”, ঠিক তেমনিভাবে পুরুষ ভাবে যে, ডিভোর্সি মেয়েদের ডাকা মাত্রই ডাকে সাড়া দিতে বাধ্য!

আমাদের হাত-পা আছে, আমরা আয় করতে জানি, নিজের পথে পথ চলতে পারি। আমরা সমাজের বোঝা নই! যদি অনুপ্রেরণা দিতে না পারেন, তবে আমাদের করুণা বা সমবেদনা দেখানো থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।

“তুমি কি দেখেছো কভু জীবনের পরাজয়……আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন মুকুলেই ঝড়ে যায়” না, আমি পরাজিত হবো না আর আমার স্বপ্নও ঝড়ে যেতে দিবো না। আমি কেন মরবো? আমি বেঁচে থাকবো, অনেককে সাথে নিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য।         

আমি ততদিন পর্যন্ত লিখবো, যতদিন পর্যন্ত একটি মেয়েও আর চক্ষের পানি ফেলবে না, বা আমাকে বলবে আমার কথা তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি ততোদিন পর্যন্ত লিখবো, যতদিন পর্যন্ত  ডিভোর্সি মেয়েকে পরিবারের মানুষ, বন্ধু, সামজের মানুষ অসম্মান ও দয়া দেখানো বন্ধ করে বেঁচে থাকার জন্য, জীবনে এগিয়ে যাবার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।

 

শেয়ার করুন:

ডিভোর্স মানেই শুধু পুরুষের পরকীয়ার ফলাফল না, নারীরাই আজ আর পরকীয়ায় পিছিয়ে নাই। সমানে সমান। তিনি তাঁর এক্স হাজবেন্ডের পরকীয়ার কথা বলে নিজের ডিভোর্সি হওয়াকে হালাল করতে চেয়েছেন বলেই কথাটা বললাম।

আপনি মেয়ের কথা বলছেন, আমি একজন পুরুষ, আমাদের স্বামী স্ত্রী তে সাংসারিক মতভেদ থাকার কারণে আলাদা হয়ে গিয়েছি। পশ্চিমা দেশের বাসিন্দা হিসেবে আমাদের বর্তমান আবাসে কোন সমস্যার সৃস্টি না হলেও আমাদের দেশিও সমাজ ও প্রথাগত রীতিনীতি ধরেই নিয়েছে হয় মেয়ের চরিত্রদোষ নয়তো ছেলের চরিত্রদোষ। অথচ এই দুইটার কোনটাই ঠিক নয়।