নারীর প্রতি রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক যৌন সহিংস আক্রমণের বিরুদ্ধে বিবৃতি

উইমেন চ্যাপ্টার:

অনলাইনে নারীর প্রতি ‘রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক যৌন সহিংস আক্রমণে’ উদ্বেগ প্রকাশ করে এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন সেক্টরের ৫৩ জন নারী। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে তারা এই বিবৃতি পাঠান।

এতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক বিদ্বেষের কারণে অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় নারীর প্রতি যৌন সহিংস আচরণ ও প্রচারণা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রেস সচিব, সাংবাদিক শফিকুল আলমের কন্যাকে নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে সংঘটিত অনলাইন আক্রমণ আরও একবার প্রমাণ করেছে কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। সম্প্রতি পতিত স্বৈরাচারী দল আওয়ামী লীগের অনলাইন প্রচারক ও তাদের সহযোগীরা শফিকুল আলমের কন্যার ছবি কুরুচিপূর্ণভাবে অপর এক নারী শরীরের ছবির সঙ্গে যুক্ত করে এবং বিকৃতরূপে এডিট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এ ধরনের আচরণ নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর এবং অনলাইন সহিংসতার স্পষ্ট উদাহরণ। রাজনৈতিক বিরোধিতাকে দমন করতে নারীর ব্যক্তি শরীর ও চরিত্রকে লক্ষ্য করে সামাজিক মর্যাদাহানির অপচেষ্টা একটি ন্যাক্কারজনক প্রবণতা, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের পরিপন্থি।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এখন ব্যক্তিগত জীবনে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে ব্যক্তি ও তার পরিবারকে টার্গেট করার কৌশলে পরিণত হয়েছে। এটি শুধু প্রাইভেসির চরম লঙ্ঘন নয়, বরং রাজনৈতিক মাঠ লড়াইয়ে নারীকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ভয়াবহ দৃষ্টান্ত। অতীত পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে যে, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বা রাজনৈতিক ভিন্নমতের কারণে সংঘটিত এই জাতীয় অনলাইন সহিংসতার ফলে বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে আক্রান্ত নারীর আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আমরা রাজনৈতিক মতামত নির্বিশেষে যেকোনো নারীকে সাইবার আক্রমণের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাই। নারীর ব্যক্তিগত জীবন বিপর্যস্ত করে তাকে এবং তার পরিবারকে মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার এই প্রবণতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

আমরা এই ঘৃণ্য অনলাইন সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। এছাড়াও, আমরা সকল ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আহ্বান জানাই, যেন নারীর প্রতি এই ধরনের সহিংসতা রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়। আমরা বিশ্বাস করি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করতে হলে, একজন নারীকে শুধুমাত্র যৌনবস্তু হিসাবে ধরে নিয়ে, নারীর বিরুদ্ধে যাবতীয় অনলাইন সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে। আমরা সকল ন্যায়পরায়ণ ও মানবিক চেতনাসম্পন্ন মানুষকে এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাই।

স্বাক্ষর:

1. রেহনুমা আহমেদ, লেখক

2. ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, সঙ্গীত শিল্পী

3. সায়দিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক

4. জাকিয়া শিশির, সমন্বয়ক, জাতীয় সমন্বয় কমিটি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন

5. সায়েমা খাতুন, নৃবিজ্ঞান গবেষক ও লেখক

6. শামারুহ মীর্জা, বিজ্ঞানী ও অ্যাক্টিভিস্ট

7. অরণি সেমন্তি খান প্রভাষক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

8. ফারহানা মানিক মুনা, অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন,কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি

9. উমামা ফাতেমা মুখপাত্র, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

10. অপরাজিতা চন্দ, সাধারণ সম্পাদক নারী সংহতি

11. নাসরিন সিরাজ, নৃবিজ্ঞানী

12. ফেরদৌস আরা রুমী, কবি ও অধিকার কর্মী

13. মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

14. মিথিলা মাহফুজ, শিক্ষক ঢাকা, বাংলাদেশ

15. লুনা রুশদী লেখক মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া

16. নাইমা ইমাম চৌধুরী, শিক্ষক ও নারী অধিকার কর্মী, কানাডা

17. সায়েমা শারমিন, ইঞ্জিনিয়ার (সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন), অস্ট্রেলিয়া

18. সালমা লুনা, লেখক, সমাজকর্মী

19. মিস ফারহানা শারমিন, উদ্যোক্তা

20. সাদিয়া শবনম, গৃহিণী ও অ্যাক্টিভিস্ট

21. সোনিয়া আফরোজ জুথি, ব্যাংকার ও অ্যাক্টিভিস্ট

22. উশিন ফাতিমা, বায়োটেকনোলজিস্ট ও উন্নয়নকর্মী

23. জেবুন্নেছা জোৎস্না, ডায়াগনস্টিক মেডিকেল সনোগ্রাফার

24. ফারজিনা মালেক, চাকরিজীবী ও অ্যাক্টিভিস্ট অস্ট্রেলিয়া

25. জহুরা আকসা, উন্নয়ন কর্মী ও প্রবাসী

26. সালওয়া শামস, হিউম্যান রাইট অ্যাক্টিভিস্ট

27. প্রাপ্তি তাপসী, শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

28. ইসবা শুহরাত, গবেষক

29. ফাতেমা তুয জোহরা, অ্যাডমিনিস্ট্রেশান এবং গ্রাহক সেবা সহকারী, পার্থ, অস্ট্রেলিয়া

30. ভায়লা সালিনা, হিউম্যান রিসোর্স, জেট ব্লু

31. মুক্তি জহির প্রেসিডেন্ট, ঊনবাঙাল

32. দিলশানা পারুল, পলিটিক্যাল অ্যাক্টিভিস্ট

33. সুলেখা রহমান, স্কুল শিক্ষক

34. ছন্দা মাহবুব, উন্নয়ন কর্মী

35. তানিয়া শুকরানা, মাল্টিমিডিয়া আর্টিস্ট ময়মনসিংহ

36. ডা. মুশতাব শীরা মৌসুমী, শিশু বিশেষজ্ঞ

37. মনীষা মাফরুহা, চব্বিশের উত্তরা

38. রাবিয়া সাহিন ফুল্লরা কবি, অনুবাদক, গৃহিণী

39. সুপ্রভা জুঁই। স্থপতি ও মাল্টিমিডিয়া জার্নালিস্ট

40. আনমনা প্রিয়দর্শিনী, ভিজিটিং লেকচারার, সাউর্থান মেথোডিস্ট ইউনিভার্সিটি, ডালাস, ইউএসএ

41. মোশফেক আরা শিমুল, নির্বাহী পরিচালক, স্পেস ফাউন্ডেশন

42. দিলশাদ সিদ্দিকা, নৃবিজ্ঞানী

43. কানিজ ফাতেমা মিথিলা সংগঠক, লড়াকু ২৪

44. ইশরাত জাহান প্রাচী, মানবাধিকার আইনজীবী এবং কর্মী

45. ডক্টর ফারজানা মাহবুবা, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্ট এন্ড একাডেমিক, অস্ট্রেলিয়া

46. মুনা হাফসা পিএইচডি গবেষক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

47. জান্নাতুল মাওয়া, লেখক ও গবেষক

48. শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি কেন্দ্রীয় সদস্য জাতীয় নাগরিক কমিটি

49. নাইমা ইমাম চৌধুরী, শিক্ষক ও নারী অধিকার কর্মী, কানাডা

50. কাজী রোকসানা রুমা, থিয়েটারকর্মী, বটতলা

51. মারজিয়া প্রভা, অ্যাক্টিভিসস্ট

52. সুপ্রীতি ধর, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, উইমেন চ্যাপ্টার

53. উযমা তাজরিয়ান, অ্যাক্টিভিস্ট

শেয়ার করুন: