নারীর শরীর যখন ‘সেক্স অবজেক্ট’ না

মারজিয়া প্রভা: ভিড় ঠেলে বাসে উঠে বসলেন দুজন নারী। বোরকা পরা, শুধু মুখ দেখা যাচ্ছে। কোলে বাচ্চা। একটু পরেই নারী সিট খালি হলে তারা সেখানে বসলেন। বসার সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো বাচ্চা। থামাতে পারছে না মা।

Adibashi Nari with child
ছবিটা ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

তারপর ঐ বোরকা পরিহিতা নারী স্থান, পাত্র-কাল ভুলে গিয়ে স্তনের বোঁটা চেপে ধরলো বাচ্চার মুখে। ওড়না দিয়ে স্তন ঢাকার চেষ্টা করলেও, বাচ্চার হাত বার বার তা সরিয়ে দিচ্ছিল। বাসে একগাদা লোক, কেউ পর্যন্ত তাকালো না ঐ নারীর দিকে। কী আশ্চর্য না! এক ছেলে ঐ মুখে দাঁড়িয়ে ছিল, আলতো হয়ে পিছু ফিরলো।

গুলশান যাওয়ার পথে বিআরটিসি বাসের ঘটনা এটি। বাচ্চার গরম লাগবে বলে ফ্যান ছাড়তে বলেছিল মা, বাসের ফ্যান তো নষ্ট। নিজে এক হাতে দিয়ে বাতাস করছেন, আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছেন বুকে। আমার দিকে চোখে চোখ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় হেসে উঠলেন।

আমি খুব কাছের একজনকে দেখেছিলাম, বাচ্চার দু মাস হবার সময় আমার সামনেই একদিন বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিডিং করাচ্ছিল। জিজ্ঞেস করেছিলাম “লজ্জা লাগে না?” সে বলেছিল “মায়ের আবার কিসের লজ্জা”!

কলেজে পড়ার সময় দেখেছিলাম এক মেয়েকে এক স্বামী মেরেছিল রাস্তায়। রাগ করে সে আমাদের বাসে উঠে পড়ে। একটু পরে কোলের বাচ্চা কেঁদে উঠলে ব্লাউজ খুলে দুধ খাওয়াচ্ছিল! নিজেও কাঁদছিল।

Joya Ahsanসাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত চলচ্চিত্র ‘রাজকাহিনী’তে জয়া আহসানের একটা দৃশ্য ভাইরাল হয়েছিল খুব। সে রুদ্রনীলের হাত নিজের স্তন আর যোনিতে রেখে মাহাত্ম্য প্রকাশ করেছিল। স্তনের দুধ খেয়ে বাচ্চা বাঁচে, আর জঠরে দশ মাস থাকে। এই অঙ্গে কি নারী অপবিত্র হয়? এই অঙ্গগুলাই কি কেবল নারী? এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও হয়। কিন্তু চলচ্চিত্রের কাহিনীর প্রয়োজনই ছিল এরকম একটি দৃশ্য-তা অস্বীকার করার জো নেই।

মাইক্রোবাস কিংবা বাসে সুযোগ পেয়ে একজন মেয়েকে যখন ধর্ষণ করা হয়, তখন এই অঙ্গগুলো হয়ে উঠে মর্ষকামিতার বস্তু! আবার মাঝরাতের নীল ছবিতে এই অঙ্গগুলোই কামনার বস্তু হয়ে উঠে!

অথচ ভিড় বাসে মা বাচ্চাটাকে দুধ খাওয়াচ্ছিল যখন, আমি কারও চোখে কাম দেখিনি, হাত নিশপিশ করে ধরার ইচ্ছা প্রকাশ দেখিনি! কী চমৎকার একটা দৃশ্য, বিশেষ করে এইদেশে প্রতিদিন বাসের ভিড়ে যখন মেয়েরা নানারকম হয়রানির শিকার হয়, তখন সবার সামনে এরকম একটা স্বর্গীয় দৃশ্যে কারও কামনা জেগে উঠে না, আশ্চর্য লাগে। একই অঙ্গের প্রতি এতো ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি হয় কী করে?

বোধহয় নারীর শরীরকে সেক্স অবজেক্ট বানিয়েছে কিছু চোখ। ঐ চোখগুলো তৈরি হবার আগে কেন জানি মনে হয়, ভালই ছিল আমাদের জীবনটা।

শেয়ার করুন:

আমার তো মনে হয়, ওই দৃশে “সে রুদ্রনীলের হাত নিজের স্তন আর যোনিতে রেখে মাহাত্ম্য প্রকাশ না করে, মুখ রাখা উচিৎ ছিল। কারন আমার মনে হয়েছে, চলচ্চিত্রের কাহিনীর প্রয়োজনই ছিল আরও গভীর কোন দৃশ্য- যা অস্বীকার করার জো নেই।

Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.