মারজিয়া প্রভা: মজার একটা ব্যাপার খেয়াল করেছেন? পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্লগ সামলে লিখতে বলেন! স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি পর্যন্ত বলেন ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে না লিখতে! তারানা হালিম টেলি কনট্রোল নিজের আয়ত্তে আনতে কড়া নজরদারিতে রাখেন ‘কে ফেসবুক ইউজ করল কে না’! অথচ মুদ্রার উলটা পিঠে “নয়ন চ্যাটার্জি” কিংবা “বাঁশেরকেল্লা” র মত পেইজ নিয়ে একদিনও টু শব্দ করে নি কেউ!
কে এই নয়ন চ্যাটার্জি! একটা সুন্দর মতন (?) আদিবাসী মুখের ছবি দিয়ে রাখা প্রোফাইলে! যে কিনা দেশ, জাতি উদ্ধারে সাম্প্রদায়িকমূলক, উস্কানিমার্কা বাণী উচ্চারণ করেই যাচ্ছে। ফ্রি ব্লগ হলেও হতো, রীতিমত টাকা দিয়ে ডোমেইন কিনে দিনের পর দিন নিরলসভাবে গালাগাল করে যাচ্ছে নাস্তিকদের, অন্য ধর্মালম্বিদেরকে! “মুসলিমদের সংখ্যালঘু করার প্রচেষ্টা ভারতের! নাস্তিকরা আসলে উগ্র হিন্দুবাদী!” ধর্মানুভূতির চরম নিদর্শন! সরকার তো সেক্ষেত্রে চক্ষু মুদিয়া রয়েছেন!
নয়ন চ্যাটার্জি কি একা একজন? না একটা গোষ্ঠী! যারা চাচ্ছে অন্য সব ধর্মের বিরুদ্ধে, নাস্তিক্যবাদের বিরুদ্ধে রগরগে গালি দিয়ে কোমলমতি তরুণের মন নষ্ট করতে! তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করতে! অবশেষে বাংলা একাডেমিতে বই প্রচার হবে কি না হবে তার দায়ভারও তুলে নিয়েছে নয়ন চ্যাটার্জিরা। প্রকাশ্যে খেলাফত আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে। তাদের হুমকির মুখে পড়ে পুলিশ গিয়ে বদ্বীপ প্রকাশনী বন্ধ করে দিল! জব্দ করল তাদের চুলকানির মূল কারণ “ইসলাম ও বিতর্ক” নামের বইটি। পুলিশকে জিজ্ঞেস করা হলে জানায় যে বইটিতে ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত হানার বিষয় আছে! কোন লাইনটি জিজ্ঞেস করা হলে, পুলিশ ক্যাবলা হয়ে যায়! বই না পড়েই বই জব্দ করতে এসেছে! এর আগেও রোদেলা প্রকাশনী সংস্থা নিয়েও একই ঘটনা ঘটেছে। অভিজিৎ হত্যা, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয়, নীলয় নীলসহ মুক্তমনাদের হত্যার আগেও এই পেইজ থেকে ছড়ানো হয়েছে বিদ্বেষ, যার কয়েকদিন পরই তারা হত্যার শিকার হয়। অথচ প্রশাসন তখন নীরব থাকে।
সবচেয়ে দারুণ লেগেছে এই যে,বাংলা একাডেমির ডিজি চুপচাপ! এত লেখক হত্যা হলো! তিনি চুপ! বইমেলার আগেই বলে দিলেন “উস্কানিমূলক বই যেন কেউ না লেখে। ধর্মীয় বিতর্ক নিয়ে কোন বই না বের করতে” এবং নয়ন চ্যাটার্জি ব্লগ যেই বলল বদ্বীপ প্রকাশনা বন্ধ করতে, সেই তিনিই সুরসুর করে বদ্বীপ প্রকাশনী বন্ধ করে জঙ্গিদের পক্ষ নিলেন। তখন বুঝতে বাকি থাকে না, দেশটা কোন পথে যাচ্ছে, আর কাদের ইন্ধনে সব ঘটছে।
এইবার ক্লিয়ার তো বিষয়টা! আরেকটু বলি, একা নয়ন চ্যাটার্জি নামের কোন ব্লগার বা কতগুলো সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠীর পক্ষে এতো জোরালো হওয়া সম্ভব না যদি না সরকারের প্রচ্ছন্ন অনুমতি না থাকতো!
প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিমকে বলি, খুব তো ফেসবুক নিয়ে আমাদের নাকানি-চুবানি খাইয়েছেন, মনে করেছেন বড় বিজয় আপনি করে ফেলেছেন। এবার তাহলে নয়ন চ্যাটার্জি এবং তার পিছনের ইন্ধনদাতাদেরও একটু দেখুন!
এটা আপনার ঘুমের সময় না। আপনার তো ফেসবুক নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে খুব ভাবার কথা! এখন যে নয়ন চ্যাটার্জি পেইজ থেকে বদ্বীপ প্রকাশনীর মালিকের ছবি বের হচ্ছে, সেই ব্যক্তির নিরাপত্তা দিবে কে? তারানা ম্যাম, দেখছেন না বিষয়টা? নাকি সিপি গ্যাং এর যেসব সদস্যকে আপনি পুনর্বাসিত করলেন তারা কেউ জানায়নি আপনাকে! আপনি তো আবার ডিজিটালি ডিজ্যাবল পারসন।
গত কয়েক বছর ধরে দেখে আসা, এই নয়ন চ্যাটার্জি পেইজ থেকে যেসব লেখকের বিরুদ্ধে কথা বলা হয়েছে তারাই খুন হয়েছে, হেনস্থা হয়েছে! শক্ত টেলিমনিটরিং সার্ভিস দরকার নেই, এমনিতেই দেখা যায় কি সন্ত্রাসবাদ লুকিয়ে আছে এই পেইজে! কিন্তু তবুও এই পেইজ বন্ধ হয় না! বন্ধ হয় বইমেলার বই!
লেখকের হাত পা বেঁধে দিয়েছে! সত্য বা নিজের মত প্রকাশের অধিকার নেই তাদের! ভোগাস কতগুলো কথা বলে লেখকদের কলমের শক্তি শুষে নিচ্ছে সরকার, ওদিকে বাড়ছে নয়নের মত শত খুনে ব্লগারের সংখ্যা!