প্রত্যয়ের নাম আসমা

asmaআমি আসমা খাতুন, বয়স ২৫ বছর। আমার বাড়ি যশোর জেলার কোদালিয়া মধ্যপাড়ায় । আমরা ৩ ভাইবোন। বড় ভাই বিয়ে করে ঘর-সংসারী হয়েছে, ছোট ভাই ৫ম শ্রেণীতে পড়ছে এবং বাবা মাকে নিয়ে আমাদের সংসার। আমি এসএসসি পাশ করার পরও অবিবাহিত কেননা আমি নিজেকে একজন কৃষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখি। এজন্য বিয়ের প্রস্তাব আসলেও আমি তা ফিরিয়ে দিয়েছি। ছোটবেলা থেকেই বাবার সাথে মাঠে গিয়ে কৃষিকাজ করতে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতাম। জমি চাষবাদ সংক্রান্ত সব কাজগুলোই (জমি নিড়ানো, জমিতে বাঁশই দেয়া, পানসি দেয়া, বীজ বপন, সার, পানি, কীটনাশক প্রদান, বেড বানানো, ফসল কাটা, বাড়িতে এনে ঝাড়া বাছা ও ঘরে সংরক্ষণসহ বীজ সংরক্ষণ) আমি নিজে করে থাকি। সমাজের কেউ আমাকে স্বীকৃতি দিতে চায় না শুধুমাত্র নারী কৃষক বলে। কৃষিক্ষেত্রে আমার এই বলিষ্ঠ পদচারণার ফলে অনেক সময় মানুষ অনেক কটু উক্তি করে আমার নামে। অনেকেই আমাকে ভাল চোখে দেখে না বা এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে চায় না। কিন্তু আমি এসব কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে আমার মতো করে এগিয়ে চলেছি।
আমার নিজের কোন চাষাবাদের  জন্য জমি নাই। বাবার ১২ কাঠার বসতভিটায় অন্যদের সাথে আমিও বাস করি। কৃষিকাজের জন্য আমি ১ বিঘা ৩ কাঠা জমি বর্গা নিয়েছি, তাতে ধান, সরিষা, কপি, করলা, পটল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ ইত্যাদি চাষ করি। গরুর দুধ বিক্রয় করে বর্তমানে ৭টি গরু ও ৬টি ছাগলের মালিক হয়েছি। এছাড়া আমি অন্যের জমিতে সবজি তোলা, ধান কাটা, ধান ঝাড়া, বিচালি বাঁধার কাজ করেও উপার্জন করে থাকি। অন্যের জমিতে থেকে সবজি তুলে আমি রোজ ১৫০ টাকা করে মজুির পাই, যেখানে পুরুষ কৃষকরা ২০০ টাকা মজুরি পায়। এইসব উপার্জন থেকে আমি চাষাবাদের খরচ বহন করি এবং অবশিষ্ট টাকা সঞ্চয় করছি জমি ক্রয়ের জন্য। নিজের জমিতে ফসল চাষ করার প্রত্যাশা পূরণে আমি টিউশনি করেও টাকা জমাচ্ছি। উৎপাদিত ফসল আমার বাবা বাজারে নিয়ে যান বিক্রয়ের জন্য। তবে বাড়ি বা মাঠ থেকে যে ফসল বিক্রয় হয় সেখানে দরদামে আমি জড়িত থাকি। আরসি সমিতির সাথে আমি জড়িত, একবার ১০,০০০ টাকা ঋণ নিয়েছি। কৃষিকাজে আমাকে আমার বাবা ও ভাই সহায়তা করে। পারিবারিক ও কৃষি সংক্রান্ত যে কোন কাজেই আমি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। asma1
“কোন একটি দুর্ঘটনার কারণে বাবা কৃষি আবাদের প্রায় সবটুকু জমি বিক্রি করে দেয়, তখন থেকেই আমি প্রতিজ্ঞা করি কৃষি কাজ করেই আমি প্রতিষ্ঠিত হবো, জমি কিনবো চাষাবাদের জন্য।” এতসব কিছুর মধ্যে আমি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাবার পরিকল্পনাও অব্যহত রেখেছি।

শেয়ার করুন: