চম্পা বেগমের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা

champa1আমি চম্পা বেগম। মানিকগঞ্জ জেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের শাকরাইল গ্রামের বাসিন্দা আমি। আমার ১৩ বৎসর বয়সে বিয়ে হয়। অভাবের সংসারের শুরু থেকেই আমাকে জমিতে ও অন্যান্য কাজ করে স্বামীকে সহায়তা করতে হত। এখন আমি আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম ব্যক্তি। আমার নিজের কোন চাষের জমি নাই। তাই আমি ঋণ নিয়ে এবং জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করি, এই জমিগুলোর যাবতীয় তত্ত্বাবধান আমি নিজে করি। কৃষক হয়েও আমি সমাজে নারী কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি পাই না। প্রথম দিকে আমি যখন কৃষিকাজ শুরু করি, তখন আমার কৃষিকাজ করাকে কেউ ভালভাবে দেখে নাই। সবাই অ  ামার কৃষিকাজ করা নিয়ে কটাক্ষ করতো। এখনও নারী হিসেবে আমাকে সমাজের অনেকে অবহেলা করে, অসম্মান করে তারপরও আমি আমার প্রয়োজনে কৃষিকাজ করে যাই ।
একজন কৃষক হওয়া সত্ত্বেও আমি কোন সরকারি অনুদান ও কৃষি উপকরণ (যেমন: সার, বীজ) পাই না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরুষ কৃষকেরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পায়, আর নারী কৃষক হওয়ার কারণে আমি এই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হই। এখনও আমি এসব সুযোগ সুবিধা ছাড়াই নিজের চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছি। বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হয়ে যায়। যেমন- গত দুই বছর আগে শীল পড়ে আমার তিন বিঘা তামাক সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। এবারও বন্যায় তিন বিঘা ধান ও ২ বিঘা ভূট্টা পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু আমি সরকার থেকে কোন রকম ক্ষতিপূরণ বা অনুদান পাই না। তখন আমাকে ধার-দেনা করে চলতে হয়। কৃষিকাজের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য অধিকাংশ সময়ই পাই না, ফলে কমদামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হই। ফসল সংরক্ষণের জন্য কোন কোল্ড স্টোরেজ না থাকায় ভবিষ্যতের জন্য ফসল এবং বীজ সংরক্ষণ করতে অসুবিধা হয়। নিজের জমিতে কাজ করা ছাড়াও প্রয়োজনে আমি অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিক হিসেবে কাজ করি, কিন্তু তখন পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় আমাকে মজুরি কম দেয়া হয় ।
দীর্ঘ ৯ বৎসর যাবত আমি ‘কর্মজীবী নারী’ সংগঠনের সাথে জড়িত। ‘কর্মজীবী নারী’ নারী কৃষকদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আমি বিভিন্ন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি। ধান ও আলুর নায্যমূল্যের দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সেমিনারে এবং মানববন্ধনেও অংশগ্রহণ করেছি। champa
আমি পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মতামত প্রদান করি। এখন সংসারের উন্নতি হয়েছে দেখে অনেকেই আমার প্রশংসা করে এবং আমার সাফল্য দেখে আশেপাশের অনেক নারী এখন কৃষিকাজ শুরু করেছে। আমি মনে করি, পরিবার থেকে আমি কৃষিকাজ করতে শিখেছি। কৃষি অফিস থেকে শুধু পুরুষ কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কিন্তু নারী কৃষকদের জন্য কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নাই। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে আমরা উপকৃত হব। আমার একটা দাবি হলো, নারী কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। নারী ক  ৃষক হিসেবে আমি সমাজের কাছে আমার কাজের স্বীকৃতি চাই।

শেয়ার করুন: