জয়তু পুরুষ, জয়তু পুরুষত্ব

Draupodi 3তামান্না কদর: হে মহিমাময়, পূজনীয় পুরুষ, আপনারাই পারবেন, আপনাদের পক্ষেই মানায় যেকোনো কাজ।
আপনারা প্রেমিক হয়ে, বর হয়ে, ফুফা, খালু, মামা এমনকি বাপ হয়েও পারবেন। না হলে আপনি যে পুরুষ এটা প্রমাণ হবে কী করে? ধর্ষণ তো আপনাকেই মানায়। আর মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হবে, এটাও এ রাষ্ট্রের অলিখিত নিয়ম।

ধর্ষণের শিকার হয়নি এমন মেয়ে বাঙলাদেশে নেই। ও আপনারা তো আবার ধর্ষণ বলতে শুধু যোনির ভেতর জবরদস্তি লিঙ্গ প্রবেশই বোঝেন। বুঝবেনই তো। রাষ্ট্র আপনাদের, সমাজ আপনাদের, পরিবার আপনাদের, আইন আপনাদের, ধর্মও আপনাদের। তা আপনারা যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে। আপনাদের বোধকরি যোনিও লাগে না। আপনারা নারী বা অন্য যেকোনো পশুর কাছে একটি ছিদ্রই প্রত্যাশা করেন। হয়তো পিঠেও ছিদ্র খুঁজতে শুরু করবেন কিছুদিন পর।

বড়ো মেয়েরা এখন সচেতন হচ্ছে, সতীত্ব নামক ফালতু জিনিসের তোয়াক্কা করছে না, বিয়ে করা বউও বোধ করি আর ধর্ষিত হতে রাজী হচ্ছে না; তাই বেছে নিচ্ছেন নিজের বাচ্চা মেয়ে, মেয়ে সমতুল্য বাচ্চাটিকে। পারবেন। আপনাদের পক্ষেই এই মহিমান্বিত কাজ করা সম্ভব! ধর্ষণকে কোন শয়তান অপরাধের আওতায় এনেছে তার এখন মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত। ধর্ষণ পুরস্কার দেবার মতো উত্তম কাজ।

অবশ্য এখানে ধর্ষক যেভাবে রেহাই পায় তাতে ধর্ষণ উত্তম কাজ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ধর্ষক আরামে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারে। বরং ধর্ষণের শিকার মেয়েটিই একবার ধর্ষণের পর মরে না যাওয়া পর্যন্ত নানাভাবে আইন, ধর্ম, পরিবার এবং সমাজ দ্বারা ধাপে ধাপে প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হতে থাকে।

তো শুধু শুধু একটা ফালতু আইন ধর্ষণের-এটা থাকার কী দরকার? পত্রিকায়, নানা রকম মিডিয়ায় ধর্ষণের খবরটি আনার কী দরকার? ডালভাতের আয়োজন ঘটা করে জানানোর কী দরকার? আইনটি ফালতু, তবু একটি আইন আছে, এটিও থাকার দরকার নেই আর।
কিছুটা ভালোবাসা পুরুষের জন্যে অবশিষ্ট রাখার ইচ্ছে ছিলো। আজ সেই ইচ্ছেটিও বাতিল করে দিতে চাইছি। আমি লিখলেই পুরুষবিদ্বেষী উপাধি পাই। অস্বীকার আমি কখনো করিনি। পুরুষতন্ত্র বা কোনো তন্ত্রেরই নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই যতোক্ষণ না সেটি মানুষ ধারণ ও লালন করে। ‍

পুরুষ চরমভাবে পুরুষতন্ত্র ধারণ ও লালন করে; তাহলে কোন্ বুদ্ধিতে পুরুষতন্ত্রবিদ্বেষী হবো পুরুষবিদ্বেষী না হয়ে? এরপরও চলার পথে পুরুষের সাথে উঠবস করতে হয়, কারণ নারী এখনো অমানবিক হয়ে যায়নি। পুরুষকে নিয়ে সাথে থাকা মানেই পুরুষের প্রতি চরম আবেগ নয়।

বন্ধু নামক পুরুষেরা আবার বলবেন, সব পুরুষ এক না। বন্ধু নামক পুরুষেরা দয়া করে বলবেন কি, কোন্ পুরুষ ভালো, কীভাবে বুঝবো যে ভালো! কোন শিশু কীভাবে বুঝতে পারবে তার পিতৃতুল্য পুরুষটি ভালো! কোন মেয়েশিশু কীভাবে বুঝবে তার বাবা ভালো! তরুণী মেয়েটি কীভাবে নিশ্চিত হবে যে সুযোগ পেলে তার বাবাও তার গর্ভে ভ্রুণ সৃষ্টি করবে না?

আমরা মেয়েরা ভয়াবহ এক অবিশ্বাসের পৃথিবীতে প্রতিদিন উৎকন্ঠা নিয়ে বেঁচে থাকে। আমি যখন বাসা থেকে বের হই আমিও কিন্তু আতঙ্কে থাকি। কোনো জন্তু-জানোয়ারের নয়, পুরুষের কুরুচির আতঙ্ক গ্রাস করে নেয়। কীভাবে আমি বুঝবো কোন্ পুরুষটি ভালো? বাঙলাদেশে এমন কোন্ মেয়ে আছে যে পুরুষের কুরুচির আতঙ্কে থাকে না? আজ যে পুরুষ বন্ধুটি ভালো কালকেই যে সে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে না; মেয়েরা এখন এই শঙ্কায়ও ভুগে। এতসবকিছুর পরও পুরুষ ভালো, পুরুষ ভালো, পুরুষ ভালো, পুরুষ ভালো।

জয়তু পুরুষ, জয়তু পুরুষত্ব। নারীরা সব আতঙ্কে থাকো।

শেয়ার করুন: