আমার মুক্তমনা

loveরওশন আরা বেগম: বাংলাদেশ এই নামটি আমি চিরদিনের জন্য ভুলে থাকবো। আমাকে থাকতে হবে বাঁচার জন্য। এর কোন গন্ধ আমি গায়ে মাখবো না, এত কোন কৃষ্টি নিয়ে আমি ভাববো না, এর বর্ণমালাগুলো মাথার থেকে খুব ঘন মিহিন চিরুনীর আঁচড়ে ঝেড়ে ফেলবো। এর সংগীতের সুরে মুগ্ধ হবো না। বেছে নিবো ভিন দেশী কোন সংগীত। বিশ্ব ডাকে সাড়া দিবো বাংলাকে বাদ দিয়ে। সে আমার দেশের তালিকাভুক্ত কোন দেশ নয়। সে আমার ভুলে যাওয়া অতীতের কোন রক্তাক্ত ইতিহাস মাত্র। আর সারা জীবন বয়ে যাব সেই রক্তাক্ত আঘাতের চিহ্নগুলো। এই দাগ আমি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে যাব।

বাংলাদেশ শব্দটির সাথে সব লেন দেন চুকিয়ে ফেলার সময় পার হয়েছিল অনেক আগেই। আজ মনে হচ্ছে এই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি অতীতে অনেকেই নিয়েছিলেন আরো অনেক মানুষকে ভবিষ্যতে নিতে হবে আমার মতই। বাংলা নামের এই দেশটি আমাদের অনেক স্বজনদের কেড়ে নিয়েছে।

হুমায়ুন আজাদ স্যারকে যেভাবে মারা হয়েছিল ঠিক সেইভাবেই অভিজিৎ দাকেও চাপাতি দিয়ে সবাইর সামনে কুপিয়ে মারা হলো। এই ভাবেই মুক্তচিন্তা ধারনকারীকে এক মূহূর্তেই ধুলার সাথে মিশিয়ে দেওয়া হলো। অথচ এই মুক্তচিন্তার মানুষটি তৈরী হতে কত সাধনা কত শ্রম ও কত সময় ব্যয় করতে হয়েছে তার হিসাব তিনি নিজেই। আঁধারের যাত্রীদের হাতে আলো দেওয়ার অপরাধ?

প্রায় দশ বছর যাবত আমি তার লেখার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম আর মনে মনে স্বপ্ন তৈরী করে ফেলেছিলাম মুক্তমন তৈরীতে পাঠাগার গড়বো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়বো। হায়রে আমার স্বপ্ন। যে স্বপ্ন দেখাতে চেয়েছিলেন অভিজিত দা সেই স্বপ্নই তার মৃত্যু এনে দিলো। অভিজিৎদার স্ত্রী বন্যার ক্যান্সার ধরা পড়লে অভিজিৎদা মুক্তমনায় একটি লেখায় লিখেছিলেন মেয়েটির কথা, মায়ের রক্ত নেওয়া দেখে মেয়েটি বেহুশ হয়ে যায়। যে মেয়ে রক্ত দেখে এত ভয় পায় আজ তার মা বাবাকে সেই রক্তেই ভাসিয়ে দেওয়া হলো।

কি ছিল অপরাধ? মুক্তচিন্তা। কয়জন মানুষ পারে এটি ধারণ করতে? আজ অভিজিৎদার কলমটি জোর করেই বন্ধ করে দেওয়া হলো, সেই সাথে কেড়ে নেওয়া হলো তার প্রাণটিও। এর থেকে বড় কোন নিষ্ঠুর কাজ কি আর হতে পারে? আমি জানি এই হত্যার বিচার আমি পাবো না। এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হলো না।

রাষ্ট্রের থেকে কোন বিবৃতিও দেওয়া হলো না। এদিকে জাতিসংঘ ও আমেরিকার থেকে সঠিক তদন্তের দাবী তোলা হয়েছে। এটি কি একটা রাষ্ট্রের লজ্জা নয়?

আজ আমি এই বাংলা নামটির সাথে হত্যা ছাড়া আর কিছু দেখতে পাই না। এই নামটির মধ্যে আছে হত্যার অহংকার, বিচারহীনতার অহংকার, ধর্ষণের অহংকার আর অভিজিৎদার মত মানুষদের প্রাণ কেড়ে নেবার অহংকার। তাই অভিজিৎদার মত মানুষের জায়গা হয়নি ঐ নিষ্ঠুর মাটিতে। এই মাটি আমাদের না, কখনো না।

শেয়ার করুন: