রাস্তায় মূত্রত্যাগে বীরত্ব কোথায়?

Urineনাজিয়া হক অনি: রাস্তায় বের হলে প্রায়ই দেখি রাস্তার ধারে আমাদের দেশের বীরপুরুষেরা মূত্র ত্যাগ করছে। সেদিন বাসায় ফিরছিলাম। গাড়ির জানালা থেকে তাকিয়ে দেখলাম এই সৌন্দর্যপূর্ণ দৃশ্য। অনেকদিন চুপ চাপ চলে গিয়েছি। ঐদিন আর পারলাম না। গাড়ি থামিয়ে নেমে লোকটির কাছে এগিয়ে গেলাম। তার কাছাকাছি যাবার পর ভেবেছিলাম থেমে যাবে কিন্তু না, সে তখনও পানি বিসর্জন করে যাচ্ছে তো যাচ্চেই। এবার কাছাকাছি গিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম, মোটামুটি দুই ফিট দূরত্বে। লোকটি সম্ভবত বুঝেনি আমি তার সাথে কথা বলার জন্যই দাড়িয়ে আছি। বিসর্জন শেষকরে ফিরতে যাবে আমাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে একটু লজ্জা পেল। আমি মুচকি হেসে বললাম,

-‘এখানে প্রস্রাব করছেন কেন? এটা কি টয়লেট?’

– ‘না … মানে…’ কিছু বলার পাচ্ছে না লোকটা। জীবনে এমন কিছু হতে পারে আশা করেনি।

-‘ মানে মানে আবার কি? এটা একটা রাস্তা, টয়লেট না। এখানে প্রস্রাব করছেন কী মনে করে? নাকি টয়লেট আর রাস্তার পার্থক্য বুঝেন না?’

-‘আপা আর করব না।’ মিনমিন করে বলে লোকটা।

-‘না না করবেন না কেন, অবশ্যই করবেন। বেড়াল কুকুরও রাস্তার ধারে এভাবে হাগু মুতু করে না যেভাবে আপনি করছিলেন। ব্যাটাছেলে হয়ে জন্মেছেন সেটা মানুষকে দেখাতে হবে না??? আর কোন উপায় নেই আপনাদের পুরুষত্ব জাহির করবার? পুরুষত্ব অবশ্যই দেখাবেন তবে কুকুর বেড়ালের স্টাইলে কেন?? আর অন্যের রাস্তায় কেন? নিজে একটা জমি কিনে রাস্তা তৈরি করেন, তারপর যত ইচ্ছা হেগে মুতে বেরান। কেউ কিছু বলবেনা। সেটা হলে না আপনি পুরুষ। তা না করে আরেক বাড়ির সামনের রাস্তায় পাছা তুলে মুততে বসেছেন। লজ্জা নাই?? এমন কি জিনিস নিয়ে ঘুরেন যেটা দেখানোর এত সখ আপনার দেখি দেখান তো একটু, দেখি দেখি।’
দাঁত বের করে হেসে বলি আমি।

-‘আপা মাফ করে দেন, আর হবে না, আর হবে না।’ লোকটা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিল। মায়া লাগল এবার আমার। সমগ্র পুরুষদের বেহায়াপনার ঝাল একজনের উপর মেটানো ঠিক হবে না মনস্থির করলাম। ওদিকে দেখি লোকজন জড়ো হওয়া শুরু করছে। ভাবলাম এটুকুতে ছেড়ে দেই আজকের মত, থাক। চলে এলাম।

আচ্ছা আমরা যদি যার যার নিজ নিজ বাসার সামনে যদি রাস্তায় কাউকে দাড়িয়ে প্রস্রাব করতে না দেই তাহলে কেমন হয়? পুরো দেশে একবারে পরিবর্তন আনা তো সম্ভব হবে না। তবে নিজ নিজ জায়গায় অবশ্যই সম্ভব। বেশি কিছু করা লাগবে না। যারা এমন রাস্তার ধারে প্রস্রাব করতে বসে তাদের কাছে গিয়ে তাদের দিকে আঙ্গুল তুলে হাহাহা করে হাসলেও এই ঘটনা কমে যাবে। প্রয়োজন এদের লজ্জা দেয়া। বাঙালি সচেতনতায় জাগে না। জায়গা মত গুঁতা না দিলে এদের টনক নড়বে না। এবং এই কাজটি আমরা খুব সহজেই করতে পারি। কি বলেন আপনারা?

শেয়ার করুন: