ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কিশোরীরা আইএস এ ঝুঁকছে

Three idiotsউইমেন চ্যাপ্টার: এর আগের এক রিপোর্টে উঠে এসেছিল, ইসলামিক স্টেট সংগঠনটি কি করে বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের তরুণ প্রজন্মকে জিহাদে অংশ নিতে প্রলুব্ধ করছে। প্রাথমিকভাবে তারা বেশ সফলতার সাথেই কাজটি করছে। এই তরুণ জিহাদিদের বেশিরভাগই আসছে যুক্তরাজ্য থেকে। আর সেখানে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ছেলেমেয়েদের একটি বিশাল অংশ এই প্রলোভনে পড়ে দেশ ছাড়ছে গোপনে।

যখন খবরটি চাউর হচ্ছে, ততক্ষণে হয় তারা তুরস্কে পৌঁছে যাচ্ছে, নয়তো চলে যাচ্ছে পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ নিয়ে ব্রিটিশ প্রশাসনে যেমন তোলপাড় চলছে, তেমনি ভেঙে পড়ছে এসব ছেলেমেয়ের পরিবারগুলোও।

গত সপ্তাহেই পূর্ব লন্ডনের তিনজন কিশোরীর নিখোঁজ হওয়ার খবর আসে প্রথমে। পরে জানা যায়, স্কুল ছুটির অবসরে তারা ইসলামিক স্টেটের সাথে যোগ দিতে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে। এমনটিই সন্দেহ করছে ব্রিটিশ পুলিশ। এরই মধ্যে তাদের খোঁজে ব্রিটিশ পুলিশের একটি দল তুরস্কে গেছে।

১৫ এবং ১৬ বছরের এই তিন কিশোরীর মধ্যে শামিমা বেগম এবং খাদিজা সুলতানা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। তবে এই বয়সী তিনজন কিশোরী কি করে কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে তুরস্কের বিমানে উঠতে পারলো, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

জানা গেছে, ২০১৩ সালে আকসা মাহমুদ নামে যে তরুণী স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো থেকে আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করতে সিরিয়া গেছে, তার টুইটার পাতায় শামিমা তার পালিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল।

আকসা মাহমুদের টুইটার অ্যাকাউন্ট পুলিশের নজরদারিতে থাকলেও, শামিমার বার্তা তাদের নজর এড়িয়ে গেল তা নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এদিকে আইএস এ যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে পূর্ব লন্ডনের এই তিনজন কিশোরীর বাড়ি ছাড়ার ঘটনায় পরিবারগুলো মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা তাদের ফিরে আসার জন্য প্রশাসনের কাছে আকুল আহবান জানিয়েছে।

বিবিসি বাংলার এক খবরে বলা হয়, ওই তিন কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে, তারা সিরিয়ায় যাবার পরিকল্পনা করছে — এমন কোন ইঙ্গিত পরিবারগুলো কখনো পায়নি।

ছোট বোনের পাজামা আঁকড়ে, ধরা গলায় শামীমা’র বড় বোন রেনু বেগম বিবিসিকে বলেন, যাবার সময় তেমন কিছুই সঙ্গে করে নিয়ে যায়নি তার বোন।

বোনকে এখনো ‘ছোট্ট বাচ্চা’ বলে তিনি আকুতি জানাচ্ছিলেন, যেখানেই থাকুক, শামীমা যেন শীগগিরই বাড়ি ফিরে আসে।

আমিরার বাবা বলছেন, তার বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। ‘সিরিয়াতে যেও না’ বলে তার মেয়ের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানাচ্ছিলেন মি. আবাস হোসেন।

তিন কিশোরীই বাংলাদেশী অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমি স্কুলের ছাত্রী। তাদের সবশেষ দেখা গিয়েছিল গত মঙ্গলবার।  এই স্কুল থেকে ডিসেম্বরে তাদের বন্ধু একটি সিরিয়া চলে গেছে পুলিশ জানিয়েছে। সেসময় এই তিনজনকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল।

এই ঘটনা পূর্ব লন্ডনের বাঙালী মুসলমান কমিউনিটির মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন মুসলিম কাউন্সিল অফ ব্রিটেনের একজন উপদেষ্টা আব্দুল বারি।

ব্রিটেন থেকে ইতিমধ্যেই প্রায় ৫০০ ছেলেমেয়ে জিহাদে অংশ নিতে মধ্যপ্রাচ্যে গেছে বলে জানা গেছে।

লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমান্ডার রিচার্ড ওয়াল্টন বলেন, সিরিয়ায় আইএস জঙ্গিদের সঙ্গে যোগ দিতেই ১৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী ওই তিন কিশোরী তুরস্কে পাড়ি জমিয়েছে। তারা যেকোনো সময় তুর্কি-সিরিয়া সীমান্ত পাড়ি দিতে পারে।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ওই তিন তরুণীর মধ্যে শামীমা বেগম (১৫) ও খাদিজা সুলতানা (১৬) ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও কথা বলেন। ১৫ বছর বয়সী আরেক তরুণী ইংরেজির পাশাপাশি আফ্রিকার আমহারিক ভাষায় পারদর্শী।

পূর্ব লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় তাদের বসবাস বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। ওই তিন কিশোরীর জন্য তাদের অভিভাবকেরাও উদ্বিগ্ন।

এদিকে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, সিরিয়ায় জঙ্গি সংগঠন আইএসের তথাকথিত জিহাদিদের স্ত্রী হতে ৫০ জনেরও বেশি ব্রিটিশ নারী তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। এই তিন স্কুলছাত্রীর ক্ষেত্রেও একই ধারণা করা হচ্ছে।

লন্ডন পুলিশ তাদের সন্ধানে সবার সহযোগিতা চেয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। মেয়েগুলো ভুলবোঝাবুঝির (ঘটনার) শিকার বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

অবশ্য মেয়েগুলোর স্কুল বেথনাল গ্রিন একাডেমির অভিভাবক প্রতিনিধি আব্দেল সামিদ দাবি করেন, ওই স্কুলে কোনো ধরনের চরমপন্থা চর্চা হয়না এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত।

তিনি বলেন, “আমি একশ’ ভাগ নিশ্চিত, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য নীতি নির্ধারকেরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তারক্ষীর মতো তত্ত্বাবধান করে থাকে।

মেয়েগুলো সিরিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে না, বরং অবসর সময় কাটাতে ভ্রমণে গিয়েছে বলে মত দেন তিনি।

কিন্তু ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে তুরস্কের একটি বিমানে চড়ার জন্য গেটউইচ বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেস্টনি পাড়ি দেওয়ার সময় ওই তরুণীদের ছবি সিসিটিভি ক্যামেরায় রেকর্ড হয়।

শেয়ার করুন: