শুভ মেহেদী: আজ অনেকদিন পর লিখতে বসলাম। না পেরেই বসলাম কারণ রুবেল হ্যাপি কিচ্ছায় আমার বন্ধু তালিকার অনেকে যেরকম অন্ধভাবে রুবেলকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তা দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি, অথচ তারাই নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলতে ও লিখতে শুনি। অথচ আজকে এটা আবার প্রমাণিত হোল যে, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা নারী স্বাধীনতা এখনো অনেক সুদূর পরাহত।
এই ক্ষেত্রে আমি অবশ্যই হ্যাপি কে তার দৃঢ়তা এবং সাহসের জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাবো। কারণ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যেভাবে সকল প্রতিকুলতা এবং নোংরা কথা বার্তাকে পাশ কাটিয়ে যেভাবে সে তার বক্তব্যে অটল রয়েছে তা অনুসরণ যোগ্য। এবং এটাও আবার নতুন ভাবে দেখতে পেলাম যে, এই সমাজ এখনো ক্ষমতাবান কিংবা ক্ষমতাশালীদের পক্ষে। যেভাবে দেশের সকল পুরুষ, এবং ক্ষমতাবান মানুষেরা রুবেলের পাশ দাঁড়িয়েছে তার ১ ভাগ মানুষও হ্যাপির পক্ষে দাড়ায়নি। হ্যাপি যদি অপরাধ করে তাহলে সেই অপরাধে একইভাবে রুবেল ও সমানভাবে দোষী, কিন্তু বাজে মন্তব্য গুলো কিন্তু সব হ্যাপিকেই শুনতে হচ্ছে, এটা কেমন বিচার!!!
অনেকেই তার চলচ্চিত্র নায়িকা হওয়া নিয়ে মন্তব্য করছে এবং তার চরিত্র কেমন হবে তাও তাঁরা অনুমান করে বলে দিচ্ছেন কিন্তু একজন নায়িকা যেমনই হোক বা যতই নীচে নামুক তার ক্যারিয়ার নিয়ে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার তাই বলে নিশ্চয়ই সে তার দেহ নিয়ে বাজার দিয়ে বসেনি যে, যেকোনো পথ চলতি পথিক বা মুসাফিরের সাথে তাঁকে বিছানায় যেতে হবে। এটা তার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার, এটা তার দেহ এবং এই দেহের মালিকানা তার একান্তই নিজের এবং সে নিজেই একান্ত ভাবে সিদ্ধান্ত নিবে সে কি করবে তার দেহ নিয়ে, এখানে আমাদের মন্তব্য করার বা তাঁকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করানোর কোন এখতিয়ার আমাদের নেই। রুবেল কোন দুধে ধোয়া মানুষ? কতটুকুই বা আমরা তাঁকে চিনি যে তাঁকে পবিত্র বলে চরিত্র সনদ দিবো?
রুবেলের পাশে যেভাবে বড় বড় মানুষেরা, ক্ষমতাশালী ও জনপ্রিয় মানুষেরা এসে দাঁড়িয়েছে, এর একটা ভাগও তো হ্যাপির পাশে এসে দাঁড়ায়নি। ব্যাপারটি এখন বিচারাধীন কিন্তু বিচারের আগেই আমরা হ্যাপিকে আসামী করে রায় দিয়ে দিচ্ছি এবং তাঁকে নিয়ে নোংরা মন্তব্য করছি এটা কোন ধরনের বিচার, কেমন নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্বাধীনতা।
আমি আজ বলতে চাই যে, এখন আমাদের সমাজে একজন রুবেলের চেয়ে একজন হ্যাপির দরকার অনেক বেশী। কারণ একজন খেলোয়াড় গেলে আমরা হয়তো আরেকজন তৈরি করতে পারবো কিন্তু নারীর ক্ষমতায়ন এবং স্বাধীনতা নিয়ে যদি একবার আমরা বাজে উদাহরণ তৈরি করি তবে আর কোনদিন কোন হ্যাপি কিংবা অন্য কোন নারী এমন সাহস এবং দৃঢ়তা নিয়ে সামনে এগিয়ে আসবেনা। আর কোন নারী কখনো এই শব্দগুলোয় বিশ্বাস আনবে না।
আমি স্যালুট করি হ্যাপিকে, সম্মান জানাই তার দৃঢ়তা এবং সাহসকে। সকল প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যাক এটাই কামনা করি। তার এই আইনি লড়াইয়ে সে হারুক বা জিতুক তাতে আমার কোন আনন্দ বা আক্ষেপ থাকবে না কিন্তু সে যে লড়াইয়ের সূচনা করেছে সেটা সে সম্পূর্ণ করুক, লড়াই কে পরিণাম পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে এটাই তার কাছে এবং সকল নারী সমাজের কাছে আমার প্রত্যাশা।