কফি উইথ কাকলী

Kakoli
কাকলী

উইমেন চ্যাপ্টার: উইমেন চ্যাপ্টারের বন্ধুপ্রতীম মেল চ্যাপ্টার সম্প্রতি ‘কফি উইথ’ বলে একটা ‘আইটেম’ চালু করেছে ফেসবুকে। এতে নিয়মিতভাবে মেল চ্যাপ্টারের বন্ধুরা যোগ দিচ্ছেন আড্ডায়। আড্ডার বিষয়বস্তু ‘হাস্যরস’ থেকে শুরু করে সমকালীন সাহিত্য, রাজনীতিকেও ছুঁয়ে যাচ্ছে। তাই উইমেন চ্যাপ্টার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই আড্ডা থেকে কিছু তুলে ধরবে তাদের নিজস্ব পাঠকের জন্য।

আজ যার সঙ্গে আড্ডা হচ্ছে তিনি ফাতেমা জোহরা হক কাকলী। তার বিচরণ বাংলা ও ইংরেজী উভয় সাহিত্যে। শিক্ষাবিদ হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের খুব প্রিয় এই শিক্ষক। কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়; সবার সঙ্গে বন্ধুতা; বঙ্গবন্ধুর এই নীতিতে আস্থাশীল আমাদের আজকের আড্ডার অতিথি। কাকলীকে তার লেখালেখি, সমাজ-রাজনীতি ভাবনা, শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কার এসব বিষয়ে প্রশ্ন করে অংশ নিতে পারেন আজকের আড্ডায়।

মাসকাওয়াথ আহসান: শিক্ষকতা-লেখালেখি-ফেসবুকিং করে তো আপনার ক্লান্ত হবার কথা। কিন্তু তবু আপনাকে এতো ফ্রেশ দেখাচ্ছে কেন?

কাকলী: Sorry, that was a joke apart!! The hidden reason of my vigor, exuberance and energy is the following pathway ( to n from classrooms) of my every day productive working hours… Regards.।

সাব্বির খান: আপনি রান্নার সময় পান?

তীর্থের কাক: কাকলী নামের সাথে আপনার মিল কোন জায়গায়? বৈরিতা কোন জায়গায়?

কাকলী: হা হা হা!! যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে!! দেশের প্রধানমন্ত্রী যখন রান্নার সময় পান; আর আমি তো আমিই!! ধন্যবাদ।

কাকলী: @ তীর্থের কাক , মিলটাই বেশী।। সারাদিন কল- কাকলী তে মুখর আমি।। শুনতেও বলতে ভালোবাসি!! অমিল নেই তেমন টা।। নামের সম্মান রাখতে পেরে আমি রীতিমতো ধন্য!!

সাব্বির খান: আপনি কি নিজেকে খুব ইম্পর্টেন্ট ভাবেন?

মাসকাওয়াথ আহসান: ১৩ দফার এক দফাও মানতে দেখতেছি না মা তোমায়। পর্দা-পুসিদা কী মানিতে মন চাহে না! তীর্থের কাক: আপনার লেখালেখির শুরু কবে এবং কিভাবে? কারণ আমরা জানি সম্ভবত ক্লাস নাইনে পড়াকালীন আপনি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন! সেক্ষেত্রে আপনার নতুন পরিবার আপনার জন্য কতটা সহযোগী হয়? অথবা অসহযোগী ?

কাকলী: আপনারা, মানে জনগণ যখন আমাকে importance দেন, তখন না ভেবে কি আর উপায় আছে?? @ মাসকাওয়াথ, পর্দা হলো মনের ব্যাপার!! মনটাকে শক্ত করে বেঁধেছি!! আর চিন্তা কি!!! @ তীর্থের কাক, যেদিন থেকে মা কে দেখতাম শরৎচন্দ্র পড়তে। লুকিয়ে লুকিয়ে নিজেও পড়তাম…সেই পড়া থেকে লেখার আগ্রহ।। আমার লেখালেখির জগতের একমাত্র সহযোগী আমি এবং আমার ইচ্ছা শক্তি আর সাহিত্যের প্রতি অসীম ভালোবাসা!!

সাব্বির খান: আপনি আজ যে অবস্থানে এসেছেন, সেটা কি নেহাতই আপনার কপালগুণে, নাকি কঠোর পরিশ্রমের ফল?

কাকলী: কঠোর এবং কঠিনতম অধ্যবসায়, পরিশ্রম এবং প্রচণ্ড ইচ্ছা শক্তি ও সততার ফসল!!

সাব্বির খান: আপনার জীবনের প্রেমবিরহ সম্বন্ধে যদি কিছু বলতেন…

কাকলী: হা হা হা! সুন্দর প্রশ্নের জন্যে ধন্যবাদ সাব্বির খান !! আমি তো প্রতিনিয়ত প্রেমে পড়ছি। আর প্রেমেই ডুবে আছি। প্রকৃতি র প্রেম, মানব প্রেম, কাজের প্রতি প্রেম এবং সর্বোপরি রবীন্দ্রনাথের প্রেমে ডুবে আছি সারা জনম ভর!!!

মাসকাওয়াথ: এই যে সব পুতুপুতু অনলাইন একটিভিজম করেন; আমাদের মত রোদে পুড়েছেন; বৃষ্টিতে ভিজেছেন কী!

কাকলী: সব পোড়া, সব ভেজা, চোখে দেখা যায় না সব সময়!!

তীর্থের কাক: আপনার জীবনে প্রথম কবে কোন পুরুষ প্রেমের আকুতি জানিয়েছেন?

কাকলী: স্যরি। ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে বিব্রত করবেন না!! তীর্থের কাক… প্রেম সার্বজনীন।। একে ব্যক্তি পর্যায় টেনে আলোচনা না করা টাই শ্রেয় আমি মনে করি!! মাসকাওয়াথ, আমি জানি যে কোন ধরনের মিশ্রণ দূষণীয়!! আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে সচেতন থাকবো… তীর্থের কাক, কবিনী ডাকটি আমার ভীষণ আপনার!! আপনি কিভাবে এই ডাকের সন্ধান পেলেন?

তীর্থের কাক: কে বেশী জনপ্রিয়, কবি কাকলী? নাকি শিক্ষক কাকলী?

কাকলী: বাহ!! অসম্ভব সুন্দর একটি প্রশ্ন করেছেন, এর উত্তর হলো— পরিচয় দুটি একে অন্যের পরিপূরক।। ঠিক যেন আলো আর ছায়া।। রাত্রি আর দিন!!

তীর্থের কাক: কে বেশী দায়িত্বশীল, শিক্ষিকা মা? নাকি সন্তানের মা? কাকলী: নিশ্চয়ই মা! এবং মা!

মাসকাওয়াথ: সামাজিক-আর্থিক নিরাপত্তা থেকেই প্রেম; নাকি প্রেম থেকেই বন্ধুতার নিরাপত্তা কোনটি খোঁজে আধুনিক নারী?

কাকলী: vice verse!! আধুনিক বলুন আর প্রাচীন বলুন নারীর একান্ত চাওয়া নিখাত এবং নিবিড় প্রেম…তা যদি সামাজিক-আর্থিক নিরাপত্তা সহ ধরা দেয় তাহলে সেটা সোনায় সোহাগা!! কিন্তু তা কোনভাবেই প্রথম ও প্রধান ইস্যু নয় অন্তত প্রেমের ক্ষেত্রে!!

সুপ্রীতি ধর: আপনি অত্যন্ত ধৈর্য্যশীলা। এই গুণ আপনি জন্মগত পেয়েছেন? তাছাড়া আপনি অনেক সুন্দরীও। এই যে এতো গুণের ছড়াছড়ি, তাতে আপনার অসুবিধা হয় না কোথাও?

কাকলী: হা হা হা!! আমার মা শুনলে নির্ঘাত অক্কা পাবেন!! আমি নাকি সব সময় রাগী, বদমেজাজি!! কিন্তু হয়ত বয়স ও অভিজ্ঞতা র আলোকে এখন সেগুলো অনেক টাই অস্তমিত!! বলে রাখি, আমার মা অনেক গুণী এবং ধৈর্য্যশীলা!! আমি তার ছিঁটে ফোঁটাও পাইনি!! তবে প্রথমেই বলে রাখি, আপনার প্রশ্নের প্রথম অংশের সাথে আমি মোটেও এক মত নই!! আমার তেমন কোন গুণ নেই তাই অসুবিধার কোন বালাই ও নেই!! ধন্যবাদ!

সুপ্রীতি: ধরেন, বাংলাদেশের বিখ্যাত, মহীয়সী নারী সাংবাদিকের মুখোমুখি আপনি। আপনি কি ভড়কে যাবেন তার সামনে? নাকি স্বাভাবিক থেকে অ্যাঁ, উঁ করবেন?

মাসকাওয়াথ: ইউনিভার্সিটিতে আপনি আমগোরে ফাও করিডোরে আড্ডা দেয়া ইনডিসিপ্লিনড ইডিয়টস ভাবতেন; সেটা কী ঠিক হয়েছিলো! এখন আমাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় দেখে আপনার কী মনে হয়না আপনি জাজমেন্টাল ফার্স্টগার্ল টাইপের ভুল করেছেন?

সুপ্রীতি: বস, আপনাদের যে উনি ইডিয়টস ভাবতেন, সেজন্যি তো একদিন হরতাল ডাকতি ইচ্ছা করতিছে আমার।

কাকলী: তীর্থের কাক, কাউকে এক কথায় কোন শ্রেণীতে ফেলতে নেই… আমরা হলাম সমন্নিত মানুষ।। দোষে গুণে ভরপুর।। আর আমি ঘরে বাইরে একই রকম।। মাসকাওয়াথ, ইউনিভার্সিটিতে আমি আপনাদের ফাও করিডোরে আড্ডা দেয়া ইনডিসিপ্লিনড ইডিয়টস ভাবতাম ঠিকই ; এবং সেটা ঠিক হয়নি! এখন আমাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সক্রিয় দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি ভুল করেছি।। দুঃখিত সে জন্যে…

তীর্থের কাক: শিক্ষা ভীতি কাটানোর জন্য আমাদের কি করা উচিৎ?

কাকলী: একমুখী!! এবং সবার জন্যে শিক্ষা!! ত্রিমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা জাতিগতভাবে বিভেদ তৈরিতে অন্যতম ভূমিকা রাখছে বলে আমি মনে করি!! সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।। শিক্ষা ব্যবস্থা এবং এর উপকরণ যেভাবে শিক্ষার্থীদের মাঝে সহজ লভ্য করা হয়েছে তাতে আমি মনে করি না আমাদের কোমল মতি শিক্ষার্থীদের মাঝে এখন আর সেভাবে শিক্ষা ভীতি আছে।।

তীর্থের কাক: একজন উঠতি কবির নারী ভক্তদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কি ধরনের কবিতা লেখা উচিৎ?

মাসকাওয়াথ: এখন মুক্তিযুদ্ধ হলে আপনি কী অংশ নেবেন?

কাকলী: আমার জীবনের সব চেয়ে কষ্টের এবং দুঃখের অনুভূতি হলো মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্ম হিসেবে নিজেকে পাওয়া।। যখন বাবা, কাকা, মামা রা তাদের বীরত্ব গাঁথা শোনান!! খুব ঈর্ষা হয়!! অংশ নেবো না মানে!!! ঝাঁপিয়ে পড়বো।।

তীর্থের কাক: একজন উঠতি কবির নারী ভক্তদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কি ধরনের কবিতা লেখা উচিৎ?

কাকলী: নিজের কাছে সৎ থেকে লিখা ভালো কবিতা এবং ভালো কবিতা!!

নাহিদ এনাম: আমার ধারণা, আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থাতে মুখস্থ বিদ্যার প্রচুর প্রভাব, যার ফলে বিদ্যা এবং শিক্ষার সেতু বন্ধনে বিরাট ফাঁক থেকে যাচ্ছে, যেটাকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা স্রেফ অর্থ উপার্জনের জন্য হেলদি সার্টিফিকেট পাওয়ার সংগ্রাম হিসেবে দেখতে পাচ্ছি। এটা থেকে উত্তরণের উপায় কি?

কাকলী: নাহিদ এনাম, আমি দুঃখিত এই ভেবে যে, আপনি সম্ভবত বেশ কয়েক বছর আগের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলছেন!! আমাদের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়, আর ওতে মুখস্ত বিদ্যার প্রভাব একেবারেই নেই বললেই চলে!! নাহিদ এনাম, আমি জানতাম আপনি এই প্রসঙ্গটাই তুলবেন, কিন্তু এখানেই আমার মুল পয়েন্ট, তাহলে কোচিংগুলো কিভাবে তাদেরকে একটা গণ্ডিতে পড়ার ছক কষে দিতে পারে???

নাহিদ এনাম: আমি পড়াশোনা প্রসঙ্গে কথা বলছিলাম, ব্যবসার ব্যাপারে কিছু বলিনি!! I believe, you got my point!!

সাব্বির খান: জোট সরকারের শিক্ষানীতি এবং বর্তমান মহাজোট সরকারের শিক্ষানীতির মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যর দিকগুলোকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? প্রফেসর মরহুম কবির চৌধুরীর শিক্ষানীতিতে অনেক কাটছাঁট হয়েও তা আলোর মুখ দেখতে পেল না। সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থা কি তাহলে বাংলাদেশের পটভূমিতে এখন সম্পূর্ণ অচল? যদি ব্যাখ্যা করতেন…

নাহিদ এনাম: আমার জানা ছিল না কোচিং শুধুই ব্যাবসা, তার সাথে পড়াশুনার কোন সম্পর্ক নেই। দুঃখিত।

কাকলী: সরকার আসে সরকার যায় …তদ্রুপ শিক্ষা নীতি আসে, শিক্ষা নীতি যায়।। সাব্বির খান, আপনার এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে আমি বিনীতভাবে বিরত থাকছি। কারণ আমি মনে করি, আমি একজন শ্রেণীকক্ষের শিক্ষক; বিদ্যার্থীদের পাঠদানই আমার কাজ, কোনভাবেই কোন গোষ্ঠীর নীতি বা আদর্শগত দিকগুলো নিয়ে কথা বলার মতো অবস্থানে আমি নেই!! ধন্যবাদ।

সাব্বির খান: আপনার “বিনীত ভাবে বিরত থাকা”কে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তবে খোলা মাঠে বৃষ্টি হলে সবাইকেই ভেজায়।

জুনায়েদুল হক: তুমি কি খেতে ভালবাসো বলো তো? আর কি রান্না করতে!

কাকলী: আমি সর্বভুক প্রাণী! যে কোন কিছু, যা কিছু , খাবার উপযোগী হলেই হলো।। নিজের জন্যে রান্নার ব্যপারে ভীষণ আলসে।। প্রিয়জনের জন্যে তাদের ইচ্ছে মাফিক যে কোন কিছুই রাঁধতে চেষ্টা করি।

(চলবে)

শেয়ার করুন: