প্রথম নারী ধারা ভাষ্যকার সুমনা

Cricket Sumonaউইমেন চ্যাপ্টার: দেশের প্রথম নারী ধারা ভাষ্যকার সারিয়া তানজিম সুমনা। একসময় বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের স্কোয়াডে ছিলেন। ব্যাটে-বলে উত্তাপ ছড়িয়েছেন মাঠে। আর এখন ধারাভাষ্যকার।

সম্প্রতি একটি দৈনিককে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলছিলেন, ‘ভালো লাগা থেকেই ২০০০ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করি। প্রথম প্রথম আবাহনী মাঠের ইনডোর ও আউটডোরে প্র্যাকটিস করতাম। খেলেছি ঢাকা জেলা, মৌলভীবাজার জেলা, বরিশাল বিভাগের হয়ে। তবে ক্রিকেটে আমার সবচেয়ে বড় সাফল্য ২০০৭ সালে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ১৮ জনের স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া’।

তবে এই সুযোগটা হাতছাড়া করেছেন অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার কারণে।

সুমনা বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট তখনো এতটা আলোচনায় আসেনি। এখন যেমন অনেক সম্মান-সম্মানী, সুযোগ-সুবিধা। তখন এগুলো ছিল না। ক্যারিয়ার হিসেবে ক্রিকেটকে তখন ঝুঁকিই মনে হচ্ছিল।’

তবে এখন তিনি মাঠ থেকে দূরে সরে গেলেও ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। রেডিও ভূমি থেকে ক্রিকেটের নিয়মিত ধারাভাষ্য দেন তিনি।

কিভাবে এলেন ধারাভাষ্যের কাজে? ‘জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকাকালে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলার জন্য আমাকে ডেকে পাঠাতেন কোচ। তাঁদের মতে, আমি ভালো কথা বলতে পারি। ২০০৯ সালে ঢাকায় নারীদের ট্রাই নেশন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়। সে সময় বাংলাদেশ দলের খেলা সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে আমাকে বিটিভিতে পাঠানো হলো। প্রথম দিনেই প্রয়াত খোদা বক্স মৃধা ও চৌধুরী জাফর উল্লাহ শরাফাতের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাই। এরপর আরো কয়েকবার এ ধরনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছি। একসময় মনে হলো, মাঠ ছেড়েছি তো কী হয়েছে। আমি তো ধারাভাষ্যকার হিসেবেও ক্রিকেটের সঙ্গে থাকতে পারি।’

ধারাভাষ্যকার হিসেবে সুমনার অভিষেক ২০১৩ সালের ১০ জুন ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির একটি ম্যাচ দিয়ে। সে সময় ধারাভাষ্য দেওয়ার জন্য একজন নারীকেই খুঁজছিল ভূমি রেডিও। সেই সুযোগটিই তিনি পেয়ে যান। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ২৫টির বেশি ম্যাচের ধারাভাষ্য দিয়েছেন।

দেশের প্রথম নারী ধারাভাষ্যকার হওয়ার অনুভূতিটা কেমন? ‘এটা একটা ইউনিক অনুভূতি! যেকোনো কিছুরই প্রথম হওয়ার মধ্যে অন্য রকম একটা আনন্দ থাকে, সম্মান থাকে। এই প্রাপ্তিটুকু অনেক ভালো লাগে।

সুমনা এখন ব্যস্ত ‘টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ’ নিয়ে। সুমনার গ্রামের বাড়ি নরসিংদী। জন্ম ও বেড়ে ওঠা তালতলা কলোনিতে। মাস্টার্স করেছেন ইংরেজি সাহিত্যে। বাবা মো. বদরউদ্দিন গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। মা ফরিদা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে সুমনা সবার ছোট। বিয়ে করেছেন গত বছরের ৮ মার্চ। স্বামী মাহমুদুল ইসলাম পুস্তক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ধারাভাষ্যকার হিসেবে সবাই চিনলেও সুমনা কিন্তু চাকরিও করছেন এশিয়াটিকে।

দুই পরিবার এবং অফিস কলিগদের সবার সাহায্য ছাড়া আজকের এ অবস্থানে আসতে পারতেন না বলে স্বীকার করেন সুমনা। বলেন, ‘বাবা-মা কখনো আমার কাজে বাধা দেননি। বাবা সময় সময় বলতেন, ‘পড়াশোনা ঠিক রেখে সৎ ও শালীনভাবে যা করা যায়, করো। মা তাতে সমর্থন দিতেন। এখন নতুন একটি পরিবারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। তারাও আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। আমার অফিস কলিগরাও সব সময় উৎসাহ দেন।’ একজনের কথা বললেন বিশেষভাবে। তিনি সুমনার ক্রিকেট কোচ আলতাফ হোসেন।

(সংগৃহীত)

 

শেয়ার করুন: