উইমেন চ্যাপ্টার: মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী হয়ে ভারতে গিয়ে কেউ কেউ ফিরে আসেননি। অনেক পরিবার বিভক্ত হয়ে গেছে দেশে ফেরা নিয়ে। কেউ মেয়ের বা বোনের বিয়ে দিয়েছেন ওপারে। কেউবা সপরিপারে চলে গেছেন সেখানে, কিন্তু আত্মীয়স্বজন রয়ে গেছেন এপারে।
একটা সময় ছিল যখন সীমান্তের এসব মানুষ অবাধে যখন-তখন ওপারে যাতায়াত করতে পারত। একজন আরেকজনের বিপদে পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারত। কিন্তু এখন বদলেছে সেই সময়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশী দেশটি নিজেদের সুরক্ষার জন্য সীমান্তে স্থাপন করেছে কাঁটাতারের বেড়া। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ওইসব মানুষের অবাধ যাতায়াত। আবার এদের প্রায় কারোরই নেই পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে বৈধভাবে যাতায়াতের সামর্থ্য।
তাই বন্ধ হয়ে গেছে আপাত যোগাযোগের উপায়গুলো। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পারিবারিক বন্ধনটুকু। মানুষগুলো বলছে, কাঁটাতার শুধু সীমান্তকেই নয়, তাদের হৃদয়টাকেই ভাগ করে রেখেছে।
এসব সীমান্তবাসী বছর দুয়েক থেকে শ্যামা পূজার পরদিন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গেন্দুকুড়ি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে দাঁড়িয়ে স্বজনদের কিছুটা কাছাকাছি আসতে পারার সুযোগ পাচ্ছেন। স্বজনদের একেবারে কাছে না পেলেও বিএসএফ-বিজিবির কল্যাণে এই সুযোগটুকু পেয়েই তারা অনেক খুশি।
গত রোববার ঘণ্টা তিনেকের জন্য তারা পেয়েছিল এ সুযোগ। কাকডাকা ভোর থেকে শীতের কুয়াশা আর বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে শত শত শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন বয়সী মানুষ ছুটতে থাকে সীমান্তের দিকে। স্থানীয় নদী ও ধানক্ষেত পার হওয়া এসব মানুষের চোখ ছিল শুধু সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার দিকে। লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকা বাদেও লোকজন এসেছে পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম ও রংপুর থেকেও। আবার ওপারের শীতলকুচি, দিনহাটা, শিলিগুড়িসহ নানা এলাকা থেকে ছুটে এসেছিল স্বজনের দর্শনে। এ
সব মানুষের অনেকেই নিজেদের স্বজনদের কেউ দেখেছে চার যুগেরও বেশি সময় পর, কেউবা কুড়ি বা দশ বছর পর। কাঁটাতার কেউ কাউকে ছুঁয়ে দেখতে দেয়নি। তবু বেড়ার উভয় পাশে দাঁড়িয়ে এসব মানুষ নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে চোখের দেখা দেখেই শান্তি পেয়েছেন, কেউ কেউ ডুকরে কেঁদে উঠেছেন এতোদিন পর প্রিয়জনদের দেখে। হৃদয়ের এই ক্ষত বোঝে না দেশের সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া, বোঝে না কূটনীতি। আকুতি একটাই, একবার যদি ছুঁয়ে দেখা যেত প্রিয়জনকে, একটিবার যদি বুকে টেনে নিয়ে হারানো ঘ্রাণ নেওয়া যেত!