নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন:
বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়া গ্রুপে অনেকসময় নানান ধরনের পোস্ট দেখা যায়, যেগুলোর অধিকাংশই থাকে প্রতারণামূলক! মিথ্যা পরিচয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেখানে নানাজনকে একপ্রকার প্রলুব্ধ করা হয়।
সবাইকে সাবধান করার জন্য আজকের এই লেখা।
আমার সাথে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনায় আমার এবং আমার ছেলের জীবন আজ হুমকির সম্মুখীন!
একটি গ্রুপে পাত্র চেয়ে পোস্ট দেয়ার পর সেখান থেকে নানান বয়সী পাত্র ইমেইলে ছবি বায়োডাটা দিয়ে যোগাযোগ করেন। তার মধ্য থেকে দুয়েকজনের সাথে কথাবার্তা ছবি, সিভি বিনিময়ের পর একজনের সাথে কথা আগায়, যার বয়স ৬০+। আমার চেয়ে প্রায় ১৫ বছরের বড়!
এখানে বলে রাখি যে প্রথমে যার সাথে আমার বিয়ে হয়েছিলো সে ছিল আমার সমবয়সী। তাই জীবনের প্রথম বিয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা পেয়ে বয়সে একটু বড় কাউকেই জীবনসঙ্গী করার ভাবনাটা এসেছিল। কিছুদিন কথা বলার পরে ভদ্রলোক বেশ খোলামেলা আলাপ করার চেষ্টা করলে আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বলি, আমি এই টাইপ কথা বলা পছন্দ করি না! এরপর সে দুঃখ প্রকাশ করে বলে যে সে আমাকে পরীক্ষা করছিলো আমার চরিত্র খারাপ না ভালো! এরপর নিজেকে সংযত করে কথা এগিয়ে নেয় এবং একসময় আমাদের বিয়ে হয়।
এবার আসি মূল কথায়!
আমার বর্তমান স্বামী যিনি ৩৫ বছর যাবত কানাডা প্রবাসী! উনি বাংলাদেশে গিয়ে আমাকে বিয়ে করেন। শ্বশুরবাড়ি থাকা অবস্থায় একদিন উনি তার ফোন আমার হাতে দিয়ে দেখাতে থাকে এই পর্যন্ত কতোগুলো পাত্রীর সাথে তার কথা হয়েছে! আমি দেখলাম সেই সংখ্যাটা অগণিত! ওনার ডিভোর্সের পরে দীর্ঘদিন একা ছিলেন। যাই হোক এরপর সে ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলে আমি যেন এদের সবাইকে ব্লক করে দিই, এখন যেহেতু সে বিয়ে করেছে, সুতরাং এইগুলো এখন আর প্রয়োজন নেই! আমি তো খুশিতে আত্মহারা এই ভেবে যে আমার স্বামীটি কতো লয়াল!
আমার সেই খুশি মুহূর্তেই বিষাদে পরিণত হলো যখন কয়েকজনকে ব্লক করতে গিয়ে কিছু কথোপকথনের চিত্র আমি দেখতে পেলাম, যার সিংহভাগই ছিলো অশ্লীল আর অশ্লীল ছবির আদান-প্রদান! এটা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকি!
এরপর নিজেকে সামলে নেই, আর নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিতে থাকি এই বলে যে এইগুলো সব আমাকে বিয়ে করার আগের ঘটনা।
সেইসময় আমার ভেতরে কী হচ্ছিল তা তাকে বুঝতে না দিয়ে তাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকি। এরপর তার ফিরে যাওয়ার পালা। যাওয়ার সময় সে তার ল্যাপটপ আমাকে দিয়ে যায়। সে চলে যাওয়ার পর ল্যাপটপ ওপেন করে দেখি ওখানে তার সোশ্যাল মিডিয়া সব ওপেন।
তার ইনবক্স ওপেন করে যা দেখলাম সেটার জন্য একদমই প্রস্তুত ছিলাম না!
আমার লয়াল স্বামীটি প্লেন থেকে নেমেই আমার সাথে যোগাযোগ না করে আরেকজন কানাডা প্রবাসী নারীকে মেসেজ দিয়েছে যে তিনি তার সাথে ‘এনজয়’ করতে চান। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় স্বামীর প্রোফাইলে আমাদের বিয়ের ছবিতে সুন্দর করে শুভেচ্ছাবার্তা দেওয়া অধিকাংশ নারীর সাথেই সে ভার্চুয়ালি অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতো। এদের অনেককেই সে নানাভাবে অর্থ সাহায্যও করেছে, সেই তথ্যও পাওয়া গেছে ইনবক্স থেকেই।
পরবর্তীতে এই বিষয়টি কয়েকজনের সাথে আলাপ করলে তারা আমাকে সান্ত্বনা দেয় এই বলে যে পুরুষ মানুষ দীর্ঘদিন একাকিত্বে থেকে এইগুলো করেছে, আমি কানাডায় গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে।
এইভাবে চলতে থাকে। একবারের জন্যও তাকে টের পেতে দেইনি যে ওনার সবকিছু আমি দেখতে পাই। প্রতিদিন ড্রিংক করে বিভিন্ন মেয়েদের ইনবক্সে নিরলসভাবে চ্যাট করতে থাকে। তারমধ্যে গুটিকয়েক মহিলা তার এই অশ্লীল কথোপকথনে সায় দিয়ে তাদের ভার্চুয়াল—– চালিয়ে যেতে থাকে। যেহেতু তার আইডির নিয়ন্ত্রণ আমার হাতেও আছে আমি কয়েকজনকে ব্লক করি। সে আবার পূনরায় নতুন কাউকে খুঁজে নেয়। এরমধ্যে দুজন ছিলো যে তার ক্লাসমেট এবং তাদের দুজনের স্বামী আছে। যেহেতু তারা ক্লাসমেট সেহেতু সেই নারীদের বয়সও ৬০+ ই হওয়ার কথা!
‘শিকারি’ স্বামী কিন্তু নিয়ম করেই দুই দেশের টাইম অনুযায়ী আমার সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগ রেখেছেন। আমি একরকম চোর-পুলিশ খেলছিলাম তার সাথে, আর অপেক্ষা করছিলাম ছেলেকে নিয়ে কানাডায় আসার জন্য।
স্বামীটি ঘুমিয়ে গেলে আমি তার হয়ে সেই নারীদের মেসেজ দিয়ে ফোন নম্বর চেয়ে নিই।
এরপর ওনাদের দুজনকেই ফোনে জানাই যে তাদের এইসব অশ্লীল কর্মকাণ্ড সব আমি দেখছি। তারা দুজন ক্ষমা চেয়ে রিকোয়েস্ট করে আমি যেন এইসব ছবি পাবলিক না করি। এদের মধ্যে একজন সেনা কর্মকর্তার ওয়াইফ এবং পাবলিক ফিগার। সে বারবার আমাকে অনুরোধ করে বলে, বোন, আমি যেটা করেছি এটার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই, বলো তোমাকে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি?
আমি শুধু তাকে বললাম, আমি আপনাকে ব্লক করবো না, তাহলে সে বুঝে যাবে, আপনি তাকে ব্লক করে দেবেন, তাতেই আমি কৃতজ্ঞ থাকবো।
ঘটনার এখানেই শেষ না। উনি ফেইসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে, ম্যারেজ মিডিয়া থেকে নানান বয়সী অসহায় মেয়েদের খুঁজে খুঁজে বন্ধু বানায়।
উনি যে শুধু ‘নারী পিপাসু’ তা নয়। এহেন কোন মাদক নেই যা সে সেবন করে না। এবং নেশাগ্রস্ত হয়ে আমাকে বিকৃত শারীরিক সম্পর্ক করতে বাধ্য করে।
তার এইসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানালে সে আমাকে ডিভোর্স না দিয়েই আবার বিভিন্ন ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে বর্তমানে পাত্রীর সন্ধান করছে। যেহেতু আমি এখনও তার বর্তমান স্ত্রী ,কানাডার আইন অনুযায়ী সে চাইলেও তৃতীয় বিয়ে করতে পারবে না। আর সে আমাকে ডিভোর্সও দেবে না, কারণ আমাকে ডিভোর্স দিলে কানাডার আইন অনুযায়ী তার সম্পত্তির অর্ধেক আমাকে দিয়ে দিতে হবে। অপ্রিয় সত্যি কথা হলো আমিও তাকে ছাড়তে চাই না। আমি চাই সে শুধরে যাক এবং শান্তিতে সহাবস্থান করুক।
হয়তো আপনারা আমাকে ভুল বুঝবেন এই কথা বলায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যাদের একবার ডিভোর্স হয়েছে বা যাদের ডিপেন্ডেবল চাইল্ড আছে একমাত্র তারাই ব্যাপারটি অনুধাবন করতে পারবে, বাচ্চাসহ ডিভোর্সি নারীকে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কতখানি প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হয়। বিপর্যস্ত অবস্থায় জাস্ট কাউকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায় সেই নারী এবং সেখান থেকেই আরেকটি ভুল মানুষকে জীবনে আসার সুযোগ করে দেয়। আর জীবনের অধিকাংশ সময় আমি একা পাড়ি দিয়েছি নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। এখন এই বিদেশে, অচেনা দেশে এসে আবারও সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে আমার আতংকও লাগছে।
আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে যেটা দেখেছি তা হলো, বয়স্ক পুরুষরা একটু ভীমরতিগ্রস্ত হয়। তারা বেশিরভাগ সময় বেশ খোলামেলা প্রশ্ন করতে চায়! এবং এরা সেইসব মেয়েদের টার্গেট করে যারা দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ এবং পারিবারিক ও সামাজিক চাপে বাচ্চা নিয়ে কী করবে, কোথায় যাবে বা তাদের ভবিষ্যৎ কী, এইসব নিয়ে নিজের সাথে বোঝাপড়া করতে গিয়ে এখান থেকে মুক্তির উপায় খোঁজে!
এবং সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু বিকৃত রুচির পুরুষ মানুষ ছলেবলে কৌশলে ভালোবাসা মায়া দেখিয়ে এদেরকে বিয়ের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে তাদের বিকৃত চাহিদা পূরণ করে।
আজ আমি সেইরকম একজন শিকারী পুরুষের ‘শিকার’ হয়ে ছেলেকে নিয়ে এখান থেকে বের হওয়ার পথ খুঁজছি।
তাই আমি অবিবাহিত ও ডিভোর্সি নারীদের উদ্দেশ্যে বলছি, বিদেশে থাকে, ভালো জব করে দেখলেই কেউ যাচাই-বাছাই না করে বিয়ের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসবেন না, গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সব উপায় খোলা রেখেই সিদ্ধান্ত নেবেন, এ আমার অনুরোধ।
তার বর্তমান বয়স ৬৫, অথচ সে ৫৫ বলে পাত্রী খোঁজে তাও ৩০/ ৩৫ বয়সী!
কানাডার আলবার্টায় থাকে এইরকম কোন পাত্র যদি আপনাদের কারও সাথে ইনবক্সে যোগাযোগ করে, তাহলে সতর্ক থাকবেন। এ আমার অনুরোধ একজন নারী হিসেবে।
ভালো থাকবেন সবাই।