মাসকাওয়াথ আহসান:
ইন্টারনেটের মহাজন পলক মিয়া সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ রেখে একটু ইন্টারনেট সময় ‘দুঃসময়’ টিভিকে দেবার পর থেকে তা অতিদ্রুত রেডিও পাকিস্তান হয়ে পড়ে; আর আওয়ামী লীগ ফেসবুক পেইজকে একটু ইন্টারনেট দিলে তা দৈনিক সংগ্রাম হয়ে পড়ে।
আর বাতাবি চাষীরা যারা খুব দুঃশ্চিন্তায় ছিলো তাদের বাতাবি লেবুর ফলন নিয়ে, তারা বিবিসিতে “শান্তির সুবাতাস”-এর খবর পেয়ে ঘরে ঘরে শান্তি কমিটি গড়ে তোলে।
প্রগতিশীল নব ব্রাহ্ম সমাজটি তরুণদের মুখে “তুমি কে আমি কে রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার” শ্লোগানটি শুনে ছ্যা ছ্যা করতে করতেই রংপুরে আবু সাঈদের বুকে গুলি চললে, ছাপড়ি প্রগতিশীলেরা কর্নওয়ালিশের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তী নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। রবীন্দ্র সংগীত শুনে বুকটা হালকা করে বঙ্কিমচন্দ্রের ভঙ্গিতে বলে, ছাত্র আন্দোলনে মৌলবাদিরা ঢুকে পড়েছে; এদের দমন করুন। আমার মাটি আমার মা আফঘানিস্তান হবে না।
গদি মিডিয়ায় তখন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও বীণা সিক্রি তোতাপাখির সুরে গান গাইছে, ছাত্র আন্দোলনে জামায়াত ঢুকেছে।
বাংলাদেশে অসংখ্য ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে কলকাতায় ছাত্রছাত্রীরা “তুমি কে আমি কে রাজাকার, কে বলেছে বলেছে স্বৈরাচার” শ্লোগান দিলে ঢাকা থেকে অস্থির হয়ে এক সংস্কৃতি মামা কলকাতার সংস্কৃতি মেসোকে ফোন করে, একি হলো ব্যান্ডিদা, কলকাতার ছেলেমেয়েরা কি জামায়াত হয়ে গেলো!
–আর বোলো না স্যান্ডি ভাই, মমতা এগুলোকে নষ্ট করেছে; যাদবপুর নষ্ট হয়ে গেছে ঠিক জওহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির মতো; এগুলো সব আরবান নক্সালাইট।
–ব্যান্ডিদা, কী আর বলবো, একি অবিশ্বাস্য ব্যাপার ঢাকা ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সব নষ্ট হয়ে গেলো; এদের কারো বুকে আর মুক্তিযুদ্ধের পবিত্র চেতনা নেই।
ব্যান্ডিদা ও স্যান্ডিভাই-এর আলাপগুলো ঠিক যেন আদিত্য যোগী ও মোল্লা শফির আলাপের মতো শোনায়, তারা যেভাবে তারুণ্যকে নাস্তিক ও কাফের তকমা দিয়ে; তরুণদের বুকে হিন্দুত্ববাদ চেতনা ও ইসলামি চেতনা ছিলো না বলে আক্ষেপ করতো।
মোদি প্রগতিশীল ও হাসি প্রগতিশীল আসলে বিজেপি ও আওয়ামী কট্টরপন্থা; তারাও এক ধরনের যোগী ও মোল্লা; এটা আরো স্পষ্ট হতে থাকে দিন যত যায়।
ব্যান্ডিদা জিজ্ঞেস করে, প্রবাসে হাসিনা বিরোধী এতো সমাবেশ হচ্ছে, হাসিনার পক্ষে সমাবেশ কোথায় স্যান্ডি ভাই! এভাবে নিষ্ক্রিয় থেকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তীটা কি হারিয়ে ফেলতে চান!
–ভরসা রাখুন, আর্মি নামিয়ে ডান্ডা মেরে সব ঠান্ডা করার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে; এখন শুধু ওদের “জামায়াত” তকমা দিয়ে দেয়া গেলে; এর আগের সব আন্দোলনের মতো একে কারাগারে পুরে আবার গণভবনে পিঠাপুলির আসর করা যাবে!
স্যান্ডি ভাই ফোনটা রেখে একটা নজরুল সংগীত বাজিয়ে দিয়ে খেতে বসে। বুবুর মসনদের দুঃশ্চিন্তায় তার নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। খাওয়ার সময় মুরগীর ঠ্যাং-এ কামড় দিয়ে স্বাদটা অন্যরকম লাগে।
স্যান্ডি ভাই চিৎকার করে ওঠে, আকলিমা নদী, মুরগী কাঁচা কেন, ঝোলের মধ্যে রক্ত মিশে আছে কেন!
আকলিমা স্যান্ডির দিকে তাকিয়ে হাসে, তার চোখ দুটো বেরিয়ে এসেছে; ঠোঁটের দু’পাশ দিয়ে রক্তের ধারা। স্যান্ডি বেসিনে গিয়ে রক্তমাখা হাত বারবার ধুতে থাকে। আয়নার মধ্যে তাকিয়ে দেখে আবু সাঈদ তাকিয়ে আছে অপলক। দ্রুত বেরিয়ে এসে দেখে বসার ঘরে সোফায় বসে কয়েকটি রক্তাক্ত শরীর।
দৌড়ে শোবার ঘরে ঢুকে সিটকিনি আটকে দেয় স্যান্ডি ভাই। বিছানায় একাত্তরের ঘাতক কাদেরকে শুয়ে থাকতে দেখে। কাদের তাকে বলে, তুমি আর আমি আসলে একই মাল; সরকারি দালাল! আমিও যেইভাবে গেছি; তুমিও সেইভাবে যাইবা; এই লও দড়িডা লও; দালালের জীবনের শেষ মালা হইতেছে দড়ি!