‘চোখে চোখ রেখে লড়াই চলবে’: ঐশী

উইমেন চ্যাপ্টার:

“লড়াই চলবেই”, এমনই উচ্চারণ করেছেন দিল্লির জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের আক্রান্ত সভানেত্র্রী ঐশী ঘোষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলের বর্ধিত ফি-এর বিরুদ্ধে আন্দোলন জারি থাকবে বলেও দাবি তাঁর। এদিকে রাতের অন্ধকারে ছাত্রদের উপর নির্মম অত্যাচারের প্রতিবাদে আগামী ৮ জানুয়ারি দেশজুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা।

প্রসঙ্গত রবিবার সন্ধেবেলা জেএনইউ ক্যাম্পাসে ঢুকে অন্তত তিনটি গার্লস হস্টেলে হামলা চালায় মুখ ঢাকা ‘বহিরাগত’র দল। হস্টেল থেকেই ছাত্র সংসদের সভানেত্রী ঐশী ঘোষকে টানতে টানতে বাইরে বের করে দেওয়ালে মাথা ঠুকে ফাটিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাট, লাঠির ঘায়ে আহত হোন অধ্যাপক সুচরিতা সেন-সহ অন্তত ১৮ জন। এমন হামলার নেপথ্যে অভিযোগের তীর এবিভিপির দিকে। যদিও রেজিস্ট্রার প্রমোদ কুমারের বিবৃতি সম্পূর্ণ উলটো। তাঁর অভিযোগ, এতোদিন ধরে হস্টেল ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন করেছে একদল পড়ুয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় থাকা বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের মদতই ছিল সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘদিন ধরে পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রতিবাদে শামিল হওয়া শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেছে। যারা মন দিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, তাদেরও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রেজিস্ট্রারের। তিনি আরও অভিযোগ করেন, শনিবার সেমিস্টারের রেজিস্ট্রেশনে অন্যান্য পড়ুয়াদেরও বাধা দেওয়া হয়েছে বামপন্থী ছাত্রছাত্রীদের তরফে। এর পালটা প্রতিরোধও হয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ শনি ও রবিবার হস্টেলে হামলা।

হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই সোমবার সংবাদ সম্মেলন করেন ঐশী। ১৬টি সেলাই পড়েছে তাঁর। ঐশী জানান, “হস্টেলের ফি কমানোর দাবিতে শামিল হয়েছে IIT, AIIMS-এর পড়ুয়ারাও।” মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে এই ফি কমানোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। ঐশীর অভিযোগ, “ফি বৃদ্ধির আন্দোলন বন্ধ করার জন্য এর আগেও বারবার হামলা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে ওরা। তাই এবার গুন্ডা দিয়ে হামলা করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “দুপুর থেকেই ক্যাম্পাস চত্বরে ABVP-র সদস্য ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয় অনেকে জমা হচ্ছিল। আমরা পুলিশকে এ বিষয অভিযোগ জানাই। কিন্ত তারা পাত্তা দেয়নি।”

হামলার প্রসঙ্গে ঐশীর বক্তব্য, আমাকে মারার অর্থ আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন, যারা সমর্থন করেছে তাঁদের গায়ে হাত তোলা। একইসঙ্গে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ঐশীর অভিযোগ, উপাচার্যের যদি নৈতিক দায়িত্ব থাকতো, তাহলে এতোক্ষণে তিনি পদত্যাগ করতেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাণ্ডবের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ হচ্ছে। এই ঘটনাকে ‘ভয়ংকর’ অ্যাখ্যা দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী। সমালোচনায় সরব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনরাও। জেএনইউ প্রাক্তন ছাত্র সংসদ সভাপতি কানহাইয়া কুমার সরাসরি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। পরিস্থিতি সামলাতে দিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে।

আক্রান্ত ঐশী ঘোষের দিদিমা অশীতিপর শান্তি সিনহা এই ঘটনায় অত্যন্ত কষ্ট পেলেও নাতনির লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে বলেছেন, ‘অত্যন্ত দৃঢ় মনোভাব আমার নাতনির। মার খেলেও লড়াই করে যাবে। এই লড়াই থেকে ওকে ফিরিয়ে আনার কোনও ইচ্ছাও আমাদের নেই। ওর লড়াই ওকেই লড়তে হবে। আর আমরা জানি যে ও সফল হবেই।’

ঐশীর বাবা দেবাশিস ঘোষ বলেন, আমার মেয়ের পাশে তার অগুণিত কর্মী, সহপাঠী ও নেতৃত্ব রয়েছে। আমরা দুর্বল নই। আর ওদের লড়াই ওরাই লড়তে সক্ষম। আজ আমার মেয়ে আক্রান্ত হলো৷ কাল হয়তো আমি হবো৷ আসলে দেশের পরিস্থিতি অত্যন্ত টালমাটাল৷ সেই কারণেই আমরা ভয় পাচ্ছি৷ আমার মেয়ে বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত৷ বর্তমানে সব জায়গাতেই প্রত্যেকে বামপন্থীদের রোখার চেষ্টা করছে৷’

এই ঘটনার জেরে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে ঐশীর মা বলেন, এতোবড় ঘটনার পরও উনি চুপ করে রয়েছেন৷ তবে আমার মেয়ের পাশে বহু ছাত্রছাত্রী রয়েছে৷ আমি কখনও ওকে আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসতে নিষেধ করবো না৷’

কৃতজ্ঞতা: সংবাদ প্রতিদিন

শেয়ার করুন: