#MeToo: সেলিম আল দীন একজন যৌন নিপীড়ক ছিলেন

মুশফিকা লাইজু:

তি‌নি ছি‌লেন বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ের শিক্ষক, নাট্যগুরু, আচার্য্য। এখনও প্র‌তি বছর তার ছ‌বি‌তে মালা ঝুলি‌য়ে তা‌কে মহান আখ্যা দেয় হয়। যেন বিষয়টা এমন মানুষ কোন রক‌মে তার জী‌বিত অবস্থায় কৃত পাপ অনাচার ঢে‌কেঢ‌ুকে ম‌রে গে‌লেই মহান হ‌য়ে যায়।

দিন কতক ধ‌রে আ‌মি যখন ভাব‌ছিলাম যে, আ‌মিও আমার প্র‌তি হওয়া ৩১ বছর আ‌গে যৌন হয়রা‌নির কথা মিটুতে লিখ‌বো। কিন্তু অ‌নে‌কেই আমা‌কে পরামর্শ দি‌য়ে‌ছে না লিখ‌তে, কারণ তি‌নি মারা গি‌য়ে‌ছেন, তা‌কে যেন ক্ষমা ক‌রে দেই, এখন আর লি‌খে ‌কী হ‌বে!

আ‌মি থামলাম এবং ভাবলাম ও সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম, একজন নিযার্তনকারীকে মৃত্যু এ‌সে মহান ক‌রে দি‌তে পা‌রে না। আর আজ য‌দি আ‌মি না লি‌খি, ত‌বে আগামী পৃ‌থিবী আজীবন তা‌কে মহান বা‌নি‌য়ে রাখ‌বে। কী জা‌নি আমার কন্যাও হয়‌তো তা‌কে এক‌দিন শ্রদ্ধাভ‌রে মালা দি‌তে যা‌বে মহান আচার্য্য হিসা‌বে!

আ‌মি ছিলাম অনাঘ্রাতা, ছোট্ট মফস্বল শহর থে‌কে উ‌ঠে আসা একজন ১৮ বছ‌রের মে‌য়ে, যার চো‌খেমু‌খে প্রগ‌তি আর সংস্কৃ‌তির আভা; চোখ ভরা স্বপ্ন‌ নি‌য়ে ভ‌র্তি হ‌য়ে‌ছি জাহা‌ঙ্গীরনগর বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে নাটক ও নাট্যকলা বিভা‌গে। হ্যাঁ, আ‌মিই ছিলাম প্রথম ব্যা‌চের ছাত্রী। পাল্লায় প‌ড়েছিলাম একজন ব্ল্যাক ম্য‌াজিশিয়া‌নের, সে ছিল ঐ বিভা‌গের প্র‌তিষ্ঠাতা।

সেলিম আল দীন

হ্যাঁ, আ‌মি প্রয়াত নাট্যাচার্য “সে‌লিম আল দী‌নের” কথা বল‌ছি।

প্রথম বছর ঐ বিভা‌গে মোট সম্ভবত ১৭ জন ভ‌র্তি হ‌য়ে‌ছিল, পরবর্তী‌তে ‌কেউ কেউ অন্য বিভা‌গে চ‌লে যাওয়‌তে শেষ পযর্ন্ত মোট ১১ জন ছিলাম এবং বলা বাহুল্য ক্লা‌শে আ‌মিই ছিলাম চটপটে এবং উজ্জল। প্রথমদি‌কে ক্লা‌সের ম‌ধ্যে সে আমা‌কে উ‌দ্দেশ্য ক‌রে আমার প্র‌তিভার কথা বল‌তেন, ভ‌বিষ্যত শিক্ষক হওয়ার প্র‌লোভন দেখা‌তেন, আ‌মি ছিলাম গ্রাম্য এবং বন্য, তার‌ এধর‌নের ইং‌গিত আ‌মি বুঝ‌তে পারতাম না। কারণ আ‌মি সদ্য যে সকল শিক্ষক‌দের স্কুল এবং ক‌লে‌জে ছে‌ড়ে এ‌সে‌ছি, তারা ছি‌লেন বাবা আর দেবতার মাঝামা‌ঝি জায়গায়। তো, এমন একজন শিক্ষ‌কের চ‌রিত্র নি‌য়ে প্রশ্ন তোলা আমার চিন্তারও অ‌তীত।

এক‌দিন তি‌নি ক্লা‌সে ই‌লিয়াড ও‌ডি‌সি নি‌য়ে একটা অ্যাসাইন‌মেন্ট দি‌লেন এবং জিজ্ঞাসা কর‌লেন, কে কে এই টেক্সবুক প‌ড়ে‌ছে? আমারা মোট ১১ জন ছাত্রছাত্রী ছিলাম, দুইজন পড়ুয়া হাত তু‌লে‌ছিল, যতদূর ম‌নে প‌ড়ে তার ম‌ধ্য‌ে কামাল উ‌দ্দিন ক‌বির একজন। তো, ঐ শিক্ষকই ব‌লে‌ছি‌লেন, তার কা‌ছে টেক্সবুক দু‌টো আ‌ছে, আমরা সবাই পর্যায়ক্রমে নি‌য়ে প‌ড়ে নি‌তে পা‌রি।
আ‌মি ছিলাম নবাব ফয়জুননেসা হ‌লের আবা‌সিক ছা‌ত্রী, আমার হল‌ ছিল তার বাসার (শিক্ষক কোয়ার্টার) কা‌ছেই। তো, তি‌নিই আমা‌কে উ‌দ্দেশ্য ক‌রে বল‌লেন, বিকা‌লে ৫টায় যেন আ‌মি ব‌ই দু‌টো তার বাসা থে‌কে নি‌য়ে আ‌সি এবং পড়া শেষ ক‌রে এ‌কে এ‌কে সবাই‌কে দেই। সম্ভবত ১৯৮৭ সা‌লের সে‌প্টেম্বর মাস হ‌বে, অল্প অল্প শীত প‌ড়েছে, আ‌মি ঘ‌ড়ি‌ দে‌খে তার বাসায় উপ‌স্থিত হলাম, তি‌নি দ‌রোজা খুল‌লেন। আমা‌কে ভিত‌রে এ‌সে বসার ঘরে বস‌তে বল‌লেন, তি‌নি ভিতর থে‌কে বই দু‌টো নি‌য়ে এ‌সে আমা‌কে দি‌লেন, বাসাটা কেমন নি‌রিবি‌লি, আ‌মি ভাব‌তেও পা‌রি‌নি যে তি‌নি বাসায় একা (হয়‌তো), কারণ আর কারও সাড়া পাই‌নি।

প্রথ‌মে তি‌নি আমা‌কে পড়াশুনার ব্যাপা‌রে ফালতু কিছু জিজ্ঞাসা কর‌লেন গৌড়চ‌ন্দ্রিকা দেয়ার জন্য, পড়াশোনায়‌ ম‌নো‌যোগ দি‌চ্ছি না ব‌লে ভর্ৎসনা কর‌লেন। সং‌গে এও জান‌তে চাই‌লেন, আমার গা‌য়ে‌ যে ওভার‌কোট সেটা কোথায় পে‌য়ে‌ছি। বললাম, বাবা বা‌নি‌য়ে পা‌ঠিয়ে‌ছেন, তখনকার সময় ক্যাম্পা‌সের কেউ এমন ধারার কোট প‌রে‌ছে ব‌লে দে‌খি‌নি। আ‌মি ভে‌বে‌ছিলাম, হয়তো আমা‌কে সুন্দর লাগ‌ছে, তাই জান‌তে চাই‌ছেন। বাস্তবতা ছিল আমার কো‌টের গলা থে‌কে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত বোতাম আটকা‌নো ছিল, অতগু‌লো বোতা‌মের পাহারা ভেদ ক‌রে আমার স্তন স্পর্শ করা দূরূহ হ‌বে, সেটাতে তি‌নি বিরক্ত হ‌য়ে‌ছি‌লেন।
সর্ব‌মোট ৫ মি‌নিট সময় হয়‌তো আ‌মি সেখা‌নে ছিলাম, আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আমা‌কে নি‌র্দেশ পাঠা‌চ্ছিল কিছু একটা ঘট‌তে যা‌চ্ছে। আ‌মি উঠ‌তে যাবো এরই ম‌ধ্যে তি‌নি আমা‌কে ঝাপটে ধর‌লেন, তার বি‌চ্ছি‌রি নোংরা ঠোঁট আমাকে দংশন কর‌ছিল এবং জোর চেষ্টা কর‌ছিল আমার কো‌টের বোতাম খোলার জন্য। কিন্তু ‌বোতামগুলো বড় ও বি‌শেষ কায়দায় লাগা‌নো ছিল ব‌লে একটা বোতামও তি‌নি সে‌দিন ছিঁড়‌তে পা‌রে‌ননি, সৌভাগ্য বশত দু‌টো দরজাই খোলা (চাপানো) ছিল, আ‌মি কোন রক‌মে ছু‌টে ব‌ই দু‌টো তার দি‌কে ছু‌ঁড়ে মারলাম এবং পা‌লি‌য়ে বাঁচলাম। নি‌চে নে‌মে দৌঁড়া‌তে লাগলাম।

আ‌মি যখন তার বাসার দি‌কে যা‌চ্ছিলাম, তখন আমার বন্ধু মুন্না‌কে ব‌লে এ‌সে‌ছিলাম যে স্যা‌রের বাসায় যা‌চ্ছি, একটু প‌রেই ফি‌রে আস‌বো। মুন্না আমার জন্য প‌থেই অ‌পেক্ষা কর‌ছিল, ও‌কে পে‌য়ে গেলাম, ও‌কে ধ‌রে কান্নায় ভে‌ঙে পড়লাম। ও ব‌লে‌ছিল, তা‌কে ক্যাম্পা‌সে মার‌বে (প‌রে মুন্না মত বদ‌লে‌ছিল, কারণ “সে‌লিম আল দীন” ছি‌লেন তখনকার সময় ক্যাম্পা‌সের একজন প্রভাবশালী শিক্ষক)।

আ‌মি হো‌স্টে‌লে ফি‌রে গেলাম, সারারাত সেই কোটটা প‌রেই থাকলাম, চিৎকার ক‌রে কাদঁলাম, থরথর ক‌রে কাঁপছিলাম, ঘৃণায় ব‌মি ক‌রে ফেললাম, শুধুই বাবার কথা ম‌নে পড়ছিল, ভাবছিলাম আজ বাবার দেয়া এই স্নে‌হের কোটটি আমা‌কে সম্ভাব্য ধর্ষণ থে‌কে বাঁ‌চি‌য়ে‌ছে। পরে এক সপ্তাহ ক্লা‌শে গেলাম না, আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলাম। বাবা‌কে দীর্ঘ চি‌ঠি লিখলাম। সহপা‌ঠি ক‌বির, দোলন ও আলমকে জানালাম। ও‌দের পরাম‌র্শে এক সপ্তাহ প‌র স্যা‌রের চেম্বা‌রে গি‌য়ে তা‌কে আমার কা‌ছে ক্ষমা চাই‌তে বললাম। উ‌নি আমা‌কে উ‌ল্টো ধমক দি‌লেন, উনি এও জানা‌লেন যে সে আমার জীবন ধ্বংস ক‌রে‌ দি‌তে পা‌রে আমা‌কে রাজ‌টি‌কেট দি‌য়ে।

আ‌মি চিৎকার করলাম, উচ্চস্ব‌রে কাঁদলাম। পা‌শের কক্ষে আফসার স্যার ছি‌লেন সে এ‌সে আমা‌কে শাস‌নের সু‌রে বের ক‌রে দি‌লেন, বাই‌রে এ‌সে আ‌মি কান্নায় ভে‌ঙে পরলাম। রু‌মের বাই‌রে আলম,‌ দোলন, মামুন এবং ক‌বির ভাই দা‌ঁড়ি‌য়ে ছি‌লেন। আমা‌কে সবাই সান্ত্বনা দি‌লেন এই ব‌লে যে এর একটা বি‌হীত ওরা কর‌বে।

তার প‌রেরটা আ‌রো ভয়ঙ্কর। যথারী‌তি আ‌মি ক্লা‌শে যে‌তে লাগলাম, কিন্তু উ‌নি ক্লা‌শে ঢুকেই প্রথ‌মে আমা‌কে ক্লাশ থে‌কে বের ক‌রে দি‌তেন, এবং যতগু‌লি অ্যাসাইন‌মেন্ট জমা দেয়া ছিল সবগুলোতে ২০ এর ম‌ধ্যে ০ এবং ৯ নম্বর দি‌য়ে মু‌খের উপর ছু‌ঁড়ে দি‌তে থাক‌লো। তারপরও একমাস আ‌মি যথারী‌তি ক্লাশে উপ‌স্থি‌তি এবং পড়াশুনা চা‌লি‌য়ে যে‌তে থাকলাম। সহপা‌ঠিরা আমার প্র‌তি হওয়া অ‌বিচার দে‌খে (য‌দিও মাত্র ১১জন) চুপচাপ থাক‌তো, কারণ সবাই‌কেই প্রথম শ্রেণীর প্র‌লোভন দেখি‌য়ে রে‌খে‌ছি‌লেন। য‌দি প্রথম ব্যা‌চে কেউ প্রথম শ্রেণী পায়, নির্ঘাৎ শিক্ষক হওয়ার সুবর্ণ সু‌যোগ পা‌বে! এই প্রলে‌াভন তা‌দের দি‌য়ে রে‌খেছিল।

নি‌জের না‌র্ভের সা‌থে যুদ্ধটা আ‌মি চা‌লি‌য়ে যে‌তে পার‌ছিলাম না, ‌দি‌নে দি‌নে আ‌মি ক্লান্ত হ‌তে থাকলাম, বিষন্নতা, হতাশা আমা‌কে ঘি‌রে ধরলো। অব‌শে‌ষে কাউ‌কে না ব‌লে হলে আমার সবকিছু রে‌খে একব‌স্ত্রে আমার স্ব‌প্নের জাহা‌ঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস ত্যাগ করলাম! তারপরের বৃত্তান্ত অ‌নেক বিশাল, আজ আর না লিখলাম। য‌দি কোনদিন আমার প্র‌তি হওয়া এই যৌন হয়রানির বিষয় একটা আস্ত বই লিখ‌তে পা‌রি, সে‌দিন সবাই জান‌তে পার‌বে।

আ‌মি যখন পু‌রোপু‌রি ক্যাম্পাস ছে‌ড়ে দি‌য়ে‌ছি তার একবছর (সময়টা ঠিক ম‌নে পরড়ছে না) পর কামালউ‌দ্দিন ক‌বির ভাই (আমার সহপা‌ঠি) এ‌সে‌ছি‌লেন প্রস্তাব নি‌য়ে যে এই বিষয়‌টি নি‌য়ে আ‌মি আই‌নি লড়াই‌ কর‌তে চাই কিনা? তি‌নি সব কাগজপত্র তৈরি ক‌রে নি‌য়ে এ‌সে‌ছি‌লেন। আ‌মিও রা‌জি ছিলাম। কারণ আমার বু‌কের ম‌ধ্যে সব সময়ই দহন হ‌তে থা‌ক‌তো, যা আ‌জো অব্যাহত আ‌ছে। কিন্তু আমার তখনকার প্রে‌মিক আমার সা‌থে একমত হ‌তে পা‌র‌লেন না, তি‌নি স্পষ্ট ব‌লে দি‌লেন, এ যু‌দ্ধে তি‌নি আমার সা‌থে নেই। যখন আমার শিক্ষা জীবন এভা‌বে থম‌কে গে‌লো, ঠিক তখন আ‌মি আমার প্রেমকে হারা‌তে চাই‌ছিলাম না। তাছাড়া আ‌মি মফস্ব‌লের ১৯ বছ‌রের এক‌টি মে‌য়ে, ঢাকায় কিছু চি‌নি না, বা‌ড়ি‌তে এ ব্যাপা‌রে সাহায্য করার কেউ ছিল না। সব প্র‌তিকূলতার বিরু‌দ্ধে যুদ্ধ করার মতো ম‌নোবল আমার ছিল না। তখন এও উপলব্ধি ক‌রে‌ছি যারা আমা‌কে আই‌নি লড়াই কর‌তে ব‌লে‌ছে, তারা আস‌লে স‌ত্যিকা‌র অর্থে আমার অসম্মানের প্র‌তিকা‌রের জন্য আ‌সে‌নি, এ‌সে‌ছিল আমার ঘটনাটা‌কে ইস্যু ক‌রে ঐ শিক্ষ‌কের প্র‌তি একটা চাপ সৃ‌ষ্টি করা যা‌তে তা‌দের প্রথম শ্রেণী পাওয়া সহজ হয়।

যে‌হেতু আ‌মি ঐ দিন ধ‌র্ষণের শিকার হইনি, শুধুমাত্র আমাকে চু‌মো খাওয়া ও শরীর স্পর্শ করাকে কোন ভা‌বে প্রমাণও কর‌তে পারতাম না। সুতরাং আই‌নের কা‌ছে যাওয়ার আশা ছে‌ড়ে দিলাম। শুধু ম‌নে ম‌নে ভিত‌রের আগুনটা জ্বা‌লি‌য়ে রে‌খে ছিলাম, সম‌য়ের অ‌পেক্ষা ক‌রে‌ছিলাম জীবনকে একটু গু‌ছি‌য়ে ‌নি‌য়ে জনসম্মুখে একটা থাপ্পর মে‌রে বল‌বো এই আ‌মি সে‌দি‌নের শোধ নিলাম। কিন্তু হায় এরই ম‌ধ্যে মরণ এ‌সে তা‌কে রেহাই দি‌য়ে গেল। ত‌বে আ‌মি থে‌মে থা‌কি‌নি, এর পরবর্তিতে উনার যে ছাত্রছাত্রী ও ভক্তকে পে‌য়ে‌ছি তা‌কেই ব‌লে‌ছি মাথা উঁচু ক‌রে যে আ‌মিই সেই মে‌য়ে যে কিনা যৌন হয়রানির প্র‌তিবা‌দে নির‌বে বিশ্ব‌বিদ্যালয় ছে‌ড়ে দি‌য়ে‌ছি।
বড়ই বেদনা যে, সেই সময় ঐ বিভা‌গের শিক্ষক, ছাত্র আ‌রো অ‌নে‌কে এই ঘটনা জান‌তেন, কিন্তু কেউ আমার পা‌শে এ‌সে দাঁড়ায়নি। ধিক সেই সব জ্ঞানপাপী‌দের, যারা মে‌নেই নি‌য়ে‌ছিল উনার একটু মদ ও নারী আস‌ক্তি আ‌ছে, সেটা তেমন কোন ব্যাপার নয়, এসব মে‌নে নি‌য়েই উ‌নি মহান নাট্যকার, জাতীয় আচার্য্য!

ত‌বে ঐ ঘটনা আমার জীবন দর্শনকে পুরোপু‌রি বদ‌লে দি‌য়ে‌ছে। আজ আ‌মি একজন নারীবান্ধব মানুষ, সকল বাঁধা অ‌তিক্রম ক‌রে আ‌মি পোড় খাওয়া জীবনযু‌দ্ধে হে‌রে যাওয়া নারী‌দের পা‌শে আমার ক্ষুদ্র সামর্থ্য নি‌য়ে দাঁড়াই, এমনকি আ‌মি আমার পেশার পূর্ব প‌রিকল্পনা বদ‌লে পেশা হি‌সে‌বে বে‌ছে নি‌য়ে‌ছি নারী অ‌ধিকার কর্মী হিসা‌বে আমি লিঙ্গ বৈষম্য বিলু‌প্তি নি‌য়ে কাজ ক‌রি।

‌সেদিন য‌দি ঐ শিক্ষক রুপী হায়ানা তার ক্ষুদ্র তুচ্ছ যৌনক্ষুধা ত্যাগ ক‌রে কন্যাসম ছাত্রী‌কে হয়রানি না কর‌তো, ত‌বে আজ হয়‌তো আমার জীবন অন্যরকম হতো, হ‌তে পারতাম একজন প্র‌তিভাময়ী অ‌ভিনয় শিল্পী, একজন নির্মাতা, অথবা সৃজনশীল প্রজ্ঞাবান শিক্ষক। শুধুমাত্র ঐ একটা অসুন্দর পাশ‌বিক সন্ধ্যা আমার জীবনকে এ‌নে দি‌য়ে‌ছে বিভৎস অসংখ্য দিনরাত, মাস বছর।
৩১ বছর ধ‌রে আ‌মি জ্বলন্ত আগুন বু‌কে নি‌য়ে ব‌সে আ‌ছি। ভে‌বে‌ছিলাম জনসভা ক‌রে মাই‌কে সবাইকে আমার জীব‌নের গ্লানির কথা বল‌বো। আ‌মার ম‌নে হয় আ‌মি আজও হয়‌তো আজ‌কের এই দিনটির জন্য বে‌ঁচেছিলাম যখন #MeToo মুভ‌মে‌ন্টের মাধ্য‌মে জা‌নি‌য়ে দি‌তে পে‌রেছি আমার প্র‌তি হওয়া সেই অন্যা‌য়ের কথা। আমার কন্যাও আগামী দি‌নের নৃত্য শিল্পী হ‌য়ে উঠ‌ছে, হয়‌তো পড়‌তে যা‌বে বিশ্ব‌বিদ্যাল‌য়ে। আ‌মি আশাক‌রি তা‌কে কোন শিক্ষ‌কের অথবা ভদ্র‌বে‌শী পুরু‌ষের যৌন লালসার শিকার হ‌তে হ‌বে না।

আ‌মি আমার বা‌কি জীবন প্রাণপ‌নে এই পৃথিবীর জঞ্জাল সরা‌তে সোচ্চার থাক‌বো, আ‌মি আমার কন্যা‌র এবং সকল আগামী দি‌নের কন্যা‌দের জন্য যৌন হয়রানিমু্ক্ত পৃ‌থিবী রে‌খে যে‌তে চাই। আর অনু‌রোধ সেই সুধী সমা‌জের কা‌ছে; একজন কুৎ‌সিত ‌নিকৃষ্ট মানুষ যেন আপনা‌দের কা‌ছে থে‌কে বর‌ণ্যের বরমাল্য না পায়।

বি.দ্র: আ‌মি কোন বিচার চাই না, শুধু এইটুকু প্রত্যাশা ক‌রি যি‌নি বা যারা এখনও এই ধর‌নের নিপীড়‌নের সা‌থে যুক্ত আ‌ছেন, তা‌দের বল‌ছি, দিন বদ‌লে গে‌ছে আগামী পৃথিবীর কা‌ছে সব পা‌পের, অন্যা‌য়ের হিসাব বু‌ঝি‌য়ে দি‌তে হ‌বে।

শেয়ার করুন: