আজ প্রমাণ নেই বলে…

তানিয়া কামরুন নাহার:

#Me_too এর ঘটনাগুলো যত পড়ছি ততই একটি প্রশ্ন বারবার শুনতে পাচ্ছি, “প্রমাণ কী? প্রমাণ কী?” আজ প্রমাণ নেই বলে কত মিটু না বলা রয়ে গেল, আমরা জানতে পারলাম না।

যৌন নিগ্রহের ঘটনা যখন ঘটে অবশ্যই আক্রমণকারী ব্যক্তি প্রমাণ রেখে অপকর্মটি করে না। ভিক্টিম নিজেও আগে থেকে জানেন না, নিগ্রহের ঘটনা ঘটবে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই কোন প্রমাণ সচেতনভাবে থাকে না। তবে চেষ্টা করলে হয়ত প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব। কষ্টসাধ্য, তবুও হয়ত সম্ভব। কারণ, “অপরাধ করার ১০০টি উপায় রয়েছে। কিন্তু ধরা পড়ার উপায় কিন্তু ১০১টি।”

৩০ বছর আগে অর্থাৎ এক প্রজন্ম আগে যৌন নিগ্রহ নিয়ে তেমন একটা সচেতনতা ছিল না নারীদের মধ্যে। বিশেষ করে ঘরের মানুষ বা অতি পরিচিত, বিশ্বাসভাজন কেউ যে এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে তার তেমন কোন ধারণা/সচেতনতা ছিল না। জরিপে দেখা গেছে, এ ঘটনাগুলো বেশিরভাগ পরিচিত গণ্ডির মধ্যেই ঘটে থাকে কিংবা আক্রমণকারী কোন না কোন ভাবে ভিকটিমের পরিচিত। সাম্প্রতিক মিটুতেও আমরা তা-ই দেখছি।

এক প্রজন্ম আগেও নারীরা এত সাহস নিয়ে মিটু বলতে পারতো না। কিভাবে এমন ঘটনা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হয় তাও জানতেন না। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। সচেতন নারীরা আত্মরক্ষার কৌশল শিখছে। থিওরেটিকালি অবশ্য এসব কৌশল শিখে তেমন উপকার পাওয়া যাবে না। তাই নিয়মিত কৌশলগুলো আয়ত্ত করে চর্চা করতে হবে। চর্চা না থাকলে প্রয়োজনের সময় বডি রিফ্লেক্স করতে পারবেন না। অথচ নারীরা হাত পা নড়াচড়াইই করতে চান না। একেবারে স্থবির জড় পদার্থের মত জীবনযাপন ভালবাসেন।

ইউটিউব থেকে মেকাপ করার ভিডিও দেখে সময় নষ্ট করার চেয়ে আত্মরক্ষার কৌশল শেখা অনেক বেশি দরকারি। এতে আত্নরক্ষা করা সম্ভব হলেও আবার সেই পুরোনো প্রশ্ন “প্রমাণ কী, একা গিয়েছিলে কেন?” মাথার উপর এসে হাজির হবে।

একজন সাধারণ নারী রাজনৈতিক নেতা নন যে সব সময় বডিগার্ড ও ৫০ জনের দলবল নিয়ে চলাফেরা করবেন। এখন একজন নারীকে একাই সব কাজ করতে হয়, কাজের প্রয়োজনে একাই সর্বত্র যেতে হয়। তাই হয়ত যৌন নিগ্রহের ঝুঁকিটাও বেশি। তার উপর যখন “প্রমাণ কী” প্রশ্ন মাথার উপর ঝুলে থাকে তখন আক্রমণকারীর পোয়া বারো।

সেক্ষেত্রে সময়ের প্রয়োজনে নারীকে প্রমাণ তৈরি করতে হবে। কীভাবে? সেকথাই বলবো এখন।

যখন বুঝবেন যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, যত জোরে সম্ভব চিৎকার দেবেন। একটা বাঘ বা নিদেনপক্ষে একটা কুকুরও যখন দাঁত মুখ খিচিয়ে গর্জন করে যে কেউ ভয়ে পালাবে। সুতরাং চিৎকার করা শিখতে হবে। চিৎকার করে আক্রমণকারীর আত্মার পানি শুকিয়ে ফেলতে হবে। সারা দুনিয়ার লোক জমায়েত করে ফেলতে হবে। এই হলো একটা প্রমাণ। এই প্রমাণের জন্য “ভালো মেয়েরা চুপ করে থাকে” বা “এত জোরে কথা বলে না” টাইপ কুসংস্কার বন্ধ করতে হবে।

আরো প্রমাণের জন্য চড় থাপ্পড় মেরে কাজ নেই। লম্বা লম্বা যে নখে নেইল আর্ট করেন সেই নখ দিয়ে আক্রমণকারীর মুখ খামচে স্থায়ী ক্ষত তৈরি করুন। রক্তপাত ঘটান। অন্তত বেশ কয়েকদিন যেন ঐ ব্যক্তিকে লোকের কাছে, ” কীভাবে ক্ষত হলো” এই প্রশ্নটা শুনতে হয়।

আরো প্রমাণের জন্য হাইহিল/হিলজুতা ব্যবহার করুন। বা হাতের কাছে যা পান তা-ই দিয়ে আক্রমণকারীর পেনিসে আঘাত করে থেতলিয়ে দিন।

এখন আর আক্রমণকারীর হাত থেকে শুধু নিজেকে রক্ষা করলেই হচ্ছে না, মেয়েদের প্রমাণ তৈরি করা শিখতে হবে। কী আর করার? সময়ের প্রয়োজন যে!

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.