জাতির বাতিঘরে বাতি জ্বালায় কে?

সীমা কুণ্ডু:

বিশ্ববিদ্যালয় নাকি জাতির বাতিঘর, এখানে বাতি জ্বালায় কে?

মানুষ কত রকম সম্ভাবনার কথা মাথায় আনিয়া কাঁদিয়া কাটিয়া রাস্তায় পিচগলা হইয়া ভাবিতে ভাবিতে অসার হইবার জোগাড়, ঘাস গেল কই!! এই লইয়া বিশাল তদন্ত কমিটি কাজে লাগিয়া গেল। ঘাসের উচ্চতা, আশপাশ, পরিমাণ পরিমাপ করিয়া পাতার পর পাতা প্রতিবেদন পেশ করিল। অবশেষে সেই প্রতিবেদনেই জানা গেল ছাগলে খাইয়াছে ঘাস।

সীমা কুণ্ডু

৮ই মার্চ ছিল বিশ্ব নারী দিবস। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০০ জন নারী শিক্ষক আছেন, তন্মধ্যে উপ-উপাচার্যও নারী। নারী দিবস উপলক্ষে উনারা একটা অনুষ্ঠান করা তো দূরের কথা, একটা ব্যানার পোস্টার লিফলেটের আয়োজন পর্যন্ত করেন নাই যা উনাদের অস্তিত্বের জানান দিবে। যারা নিজেদের জন্য একটা প্লাটফর্ম, অধিকার, চাওয়া পাওয়া সম্পর্কে সচেতন না,  তাদের হাতে সচেতন প্রজন্মও গঠনের ভার নিতান্তই ভার হয়েই রইলো।

চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত। এখানেই অবস্থিত Asian University For Women, একটা আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়, এমনটি বাংলাদেশে আর দ্বিতীয় নাই। পৃথিবীর প্রায় ১৫টি দেশের ছাত্রীরা এখানে লেখাপড়া করতে আসে। উপাচার্য হতে শুরু করে উচ্চাসীন সকলেই প্রায় নারী এবং মূলতও নারীদেরকে সমাজে সিদ্ধান্তগ্রহন পর্যায়ে সক্ষম এবং সমাজকে নেতৃত্ব দেবার উপযুক্ত করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের  পদযাত্রা  এবং পথচলা। এখানেও কেউ বলেনি এসো পরিবর্তনের পথে পরস্পরের হাত ধরি পরিবর্তনের জন্য।

অথচ শিক্ষায় মেধায় মননে সর্বোচ্চ ধরে নিয়েই সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে আগামী প্রজন্মকে সচেতন এবং শিক্ষিত নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলবার দায়িত্ব উনাদের হাতে অর্পণ করা হয়। ধরে নেয়া হয় উনারাই জ্ঞানের আলো জ্বালাবেন। কে আর ভাবে সলতে ছাড়া আলো জ্বালানোরও চেষ্টা থাকতে পারে!

উনারা ছাপোষা নন, তবে নির্লিপ্ত। সমাজের সবচেয়ে সুবিধাভোগী নারী হবার পরেও নারী সমাজের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্যে নির্লিপ্ততা আসলে একধরণের স্বার্থপরতা। যা সমাজ কিংবা আগামী প্রজন্ম কখনো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেনা।

এমনও হতে পারে উনারা ব্যক্তিময়তায় এতটা ব্যস্ত সামগ্রিক কোন ব্যাপারই উনাদের মনোযোগ টলাতে পারেনা, এটা আসলে ইচ্ছাকৃত অসচেতনতা, আমি একে সচেতনতার অভাব বলতে নারাজ। ইচ্ছাকৃত অসচেতন মানুষ সামগ্রিক প্রয়োজন নিয়ে ভাববার অবকাশও রাখেন না আগ্রহ তো নয়ই।

নারীরা প্রশাসনের উচ্চতর পদে আসীন থাকার পরেও এমন নির্লিপ্ততা তাদের শিক্ষা এবং যোগ্যতায় একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এ নির্লিপ্ততার কারণ খোঁজা জরুরী। আমরা কি স্বকীয়তা হারাই ব্যক্তিতান্ত্রিকতায় নাকি পুরুষতান্ত্রিকতায়?

খাবার মুখে পুরে দিলেই হবে না, গিলে নেবার শ্রমটুকু নিজেকেই করতে হয়, অন্যথা খাবার কেবল খাবার হয়েই থাকবে, শরীরের শ্রী শক্তি কিংবা পুষ্টিবৃদ্ধিতে কোন কাজেই লাগে না। কেবল লাল নীল বেগুনি রঙের জোয়ারে অধিকার আদায় হয়না, ইচ্ছা এবং মনের জোর যতক্ষণ না এ জোয়ারে এসে মেশে।

জাগো নারী,  তোমার জেগে থাকার ফসল ঘরে তুলবে তোমার প্রজন্ম, প্রজন্মান্তরে।

শেয়ার করুন: