বিকৃত সাজু খাদেম এবং লুঙ্গি উঠানো লোকটি…

.কাকলী তালুকদার: আজ ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে তারকা সাজু খাদেমের প্রশ্ন শোনে আমার ইউনিভার্সিটি জীবনের কথা মনে পড়ে গেলো।
আমার খুব নরম স্বভাবের বন্ধু সিমি একদিন প্রায় কাঁপতে কাঁপতে এসে বললো, পার্ক থেকে ফেরার পথে এক লম্বা চুলওয়ালা লোক সাইকেল করে যাচ্ছিল, তাকে দেখে হুট করে সাইকেল থেকে নেমে তার লুঙ্গি খুলে তার পুরুষত্বের যন্ত্রখানি এক ঝলক দেখিয়ে চলে গেলো। সিমির সাথে আরেকজন মেয়ে ছিল সেই সময়।

সাজু খাদেম

আমি বললাম, তুমি কিছু বলো নাই? সে তখনও কাঁপছিল। আমি বললাম, ঠিক আছে, আরেকদিন দেখলে আমাকে দেখিও এই অসভ্য লোকটাকে।
তখন ময়মনসিংহে গুলকিবাড়িতে আমরা সবাই একসাথে থাকি। একদিন সন্ধ্যেবেলায় সিমি দৌড়ে এসে আমাকে আবার বলছে, কাকলী, এই অসভ্য লোকটা বাসার সামনে দাঁড়িয়ে একই কাজ করছে। আমি দৌড়ে তার সাথে বারান্দায় গিয়ে জোরে জোরে বলতে লাগলাম, সিমি, দা’টা কোথায় দেখ তো, ঐটা নিয়ে আয়। দেখি কোন হারামজাদা দাঁড়াইছে এখানে, আজকে ওর সব কাটবো। কোনরকম চেহারাটা দেখতে পারলাম, মুহূর্তেই নাই হয়ে গেলো সেই বিকৃত লোকটা।

এই সকল বিকৃত মানসিক লোকদের মুখোমুখি আমাদের প্রায় সব মেয়েদেরই পড়তে হয়। কেউ ভড়কে যায়, কেউ প্রতিবাদ করে, কেউ ইটস টু মাচ বলে এড়িয়ে যায়।
মিডিয়ার স্ক্রিপ্ট কি কোন মান না রেখেই প্রচারিত হতে পারে? নাকি মিডিয়ার সন্ত্রাসবাদ, কলুষিত রূপের বহি:প্রকাশ মাত্র এই সাজু খাদেম?
আর যে সকল নারীগণ অতিথি সেজে বসেছিলেন, তাদের একজনেরও কী মনে হলো না এই ধরনের নোংরামি প্রশ্ন একজন উপস্থাপক কখনই করতে পারে না।

কাকলী তালুকদার

আমি যদি দেখতাম, একজন নারীও পায়ের স্যান্ডেল খুলে উপস্থাপকের গায়ে ছুঁড়ে মারতে চেয়েছে, সেটাই খুব স্বাভাবিক বলে ধরে নিতাম একটি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের দেশে।
নাকি রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বলেই নারীদেরকে যেকোনো প্রশ্ন করা যায়, সেটা খুব কুরুচিপূর্ণ হলেও?
যাক, এতোদিন ভাবতাম দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে প্রথমে রাজনৈতিক দল, তারপর সাংস্কৃতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিবাদ এখন নিজেদের ড্রইং রুমে আটকে আছে, স্বজনপ্রীতির তেল দিয়ে চলে মিডিয়া, রাজনীতি। সাংস্কৃতিক দল গুলো কে তো এই রাজনীতিই পথ দেখায়। তাই রাজনীতি আর সংস্কৃতি সব এখন একই তেলের ড্রামে ডুবে আছে।

সাজু খাদেম আর লম্বা চুলওয়ালা লোকগুলোই এখন আমাদের সমাজের সঞ্চালক। নয়তো প্রতিটি অন্যায়ের প্রতিবাদ হতো, ধর্ষকদের শাস্তি হতো। নারীদের উপর প্রতিদিনের নির্যাতন বন্ধ হয়ে যেতো। একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য অন্তত: সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বা দলগুলো জোরালো প্রতিবাদ করতো।
সাজু খাদেমরা মিডিয়ায়, পথে দাঁড়িয়ে থাকবে সেই লুঙ্গি পরা বিকৃত লোকটি!

মেয়েরা তোমরাই সিদ্ধান্ত নাও এগোবে, নাকি মোকাবেলা করবে? এই সমাজ এখন দর্শকের ভূমিকায়।

৩০ ডিসেম্বর
কানাডা

শেয়ার করুন: