মাস্টার্স ডিগ্রি পেলেন সেই রুমানা মঞ্জুর

romanaউইমেন চ্যাপ্টার: স্বামীর নির্যাতনে অন্ধ হয়ে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুর কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় (ইউবিসি) থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি পেয়েছেন।

তবে রুমানা বলেছেন, সবে মাস্টার্স শেষ করলেও অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার এখনও শেষ হয়নি তার। দুবছর আগে ঢাকায় তিনি স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্ধ হয়ে যান।

সম্প্রতি রুমানা ইউবিসির ল স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইনী ব্যবস্থা ভয়াবহভাবে তার বিরোধিতা করেছে এবং তিনি তাতে পরিবর্তন আনতে চান বলেই আইন বিষয়ে পড়তে চান।

সিবিসি নিউজে রুমানা মঞ্জুরকে নিয়ে এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, খুব দ্রুতই সেরে উঠছেন তিনি। দুবছরের মাথায় এখন তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসের সাথেই ইউবিসিতে হেঁটে বেড়ান। জীবনে এতোকিছু হারানোর পর এভাবে ঘুরে দাঁড়ানোটা অবিশ্বাস্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টটিতে।
সিবিসি নিউজকে রুমানা বলেন, ‘আমি কখনও নেতিবাচক আবেগকে প্রশ্রয় দেইনি, সবসময় ভেবেছি, এভাবেই আমাকে এগোতে হবে এবং এখনই তা করতে হবে’।

২০১১ সালের জুন মানে রুমানা মঞ্জুর ছুটিতে দেশে আসার পর স্বামীর নির্যাতনের শিকার হন। এতে তার দুচোখই আক্রান্ত হয় এবং মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যায়। বিদেশে পড়াশোনাসহ পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে দুজনের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হামলার শিকার হন রুমানা। এই ঘটনাটি তখন ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে দেশে এবং বিদেশেও। দেশব্যাপী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে উঠে। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে ভারতে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে কানাডার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়ছিলেন সেখানেও তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন কর্তৃপক্ষ।
রুমানা বলছিলেন, ‘ওইসময় আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না চোখে, অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি যে, আমি আমার মাস্টার্স শেষ করতে পারবো কোনদিন’। তিনি ইউবিসিতে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান সাংবাদিকদের।

এদিকে রুমানার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে তারা অনেক চেষ্টা করেছেন, কিন্তু পারেননি। তবে ইউবিসিতে রুমানার সহপাঠীরা তাকে সুস্থ হতে বেশ সাহায্য করেছেন। তাদেরই সহযোগিতায় রুমানা শিখে গেছেন কিভাবে বেঁচে থাকতে হবে, কিভাবে সফলকাম হতে হবে।
রুমানার সহপাঠিরা তাকে বই পড়ে পড়ে শুনিয়েছেন, অন্যেরা তার মুখ থেকে শুনে শুনে মাস্টার্সের থিসিস লিখে দিয়েছেন। আর সবার সহযোগিতাতেই তিনি সফলভাবে তার থিসিস সম্পন্ন করতে পেরেছেন বলে জানান রুমানা।
রুমানার শিক্ষকরা বলছেন, তাঁরা রুমানার মতোন এমন ট্র্যাজেডির শিকার কাউকে এতো তাড়াতাড়ি সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে দেখেননি কখনও।

শেয়ার করুন: