রাহাত মুস্তাফিজ:
“আই ওয়ান্ট টু মেইক লাভ উইথ ইউ”
‘র’ – বাংলা করলে দাঁড়ায়, আমি তোমার সাথে শুতে চাই।
তা শুতে চাওয়ার (মেইক লাভ) ইচ্ছে হতেই পারে। এই ইচ্ছের কথা জানানোও যেতে পারে। তবে এইখানে ‘যদি, কিন্তু’র ব্যাপার আছে। মানুষ বলেই আছে। লুক, প্রাণি জগতে সভ্য মানুষের সাথে অন্যান্য পশু-পাখি-প্রাণির পার্থক্য এখানেই। মানুষের ক্ষেত্রে যৌনতা কেবলমাত্র সন্তান উৎপাদনের বিষয় নয়। উপভোগেরও ব্যাপার বটে। মোরগ যেমন দৌড়ায় দৌড়ায় গিয়ে মুরগীরে ধরে (এইটা এঁদের ধরনও হতে পারে), সভ্য – সংস্কৃতবান মানুষ তাঁর পার্টনাররে তেমনটা করার কথা চিন্তাও করতে পারে না।
সভ্য হতে গিয়ে মানুষ যথেষ্ট অসভ্যতা নির্মাণ করেছে বটে, তথাপি যৌনতা প্রকাশে মানুষ ডিসেন্ট হয়েছে। পারস্পরিক সম্মতি – অসম্মতির চর্চা করতে শিখেছে। যৌনতা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখেছে। সেকারণে কাম জাগলেই সবাই অস্থির বেসামাল হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে না। এমনকি ‘শরীরের তরে শরীর’ তত্ত্বে আশ্বস্ত হয়ে নির্ভার হওয়ার জন্য সবাই প্রস্টিটিউশনেও গমন করে না।
পছন্দের সঙ্গি না পাওয়া পর্যন্ত মানুষই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর কাঙ্ক্ষিত যৌনতা উপভোগের জন্য অপেক্ষা করে। এই অপেক্ষাটা সুন্দর। সৌন্দর্যের এই ব্যাপারটা মানুষের ভেতরে আছে বলেই সাধারণত ধরে নেওয়া হয়। কামনার নীল দহনে তাই দগ্ধ হয়ে পারস্পরিক সম্পর্কের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে যৌনাকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা যায় না। মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে পছন্দের নারীদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিয়ে হুট করে ‘পুশি’ দেখতে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা জানানো একারণে অসুস্থ, অস্বাভাবিক এবং অসুন্দর।
এ সময়ের তরুণ কবি কালপুরুষের কবিতায় পড়েছিলাম,
‘অন্তর্বাস আঙুলে খোলে না
খোলে কথায়
প্রেমে’
আঙুল দিয়ে খুলতে যে যায়; সে নিপীড়ক, সে অসভ্য, সে অশ্লীল, সে ইতর। সে অনুধাবন করতে অক্ষম ইনবক্সের নীল শয্যায় কাউকে আহবান করার পূর্বে একটা সম্পর্ককে যে গভীরতায় নিয়ে যেতে হয় ততটা গভীরতায় সে পৌঁছতে পারেনি। তারপরেও এরকম দুঃসাহসী হয়ে ওঠার পেছনে থাকে ক্ষমতার দম্ভ। নারীকে ক্ষুদ্রার্থে দেখার পিতৃতান্ত্রিক জীবনচর্চা।
গাজী রাকায়েতরা ওই তন্ত্রেরই শক্তিশালী প্রতিনিধি। এঁরা শিল্পচর্চা করলেও আসলে শিল্পে বাঁচে না। অসুস্থ, বিকৃত ভোগে-সম্ভোগে এঁদের জীবন অতিবাহিত হয়। আমাদের টোটাল শিল্প-সংস্কৃতির অধঃপতনের কারণ মধ্যবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত এইসব শহুরে এলিটেরা।