মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছরই জয়যুক্ত হয়েছে

_HA_1925উইমেন চ্যাপ্টার: মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণে ১৬ বছর নয়, ১৮ বছর বয়সই জয়যুক্ত হয়েছে। উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ বিষয়ক কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বের প্রধান অতিথি হিসেবে নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি আজ একথা বলেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি ১৮ বছর পর্যন্ত একজন শিশু। গণমাধ্যমের প্রচারসহ ব্যাপক আলোচনার ফলে বিয়ের বয়সের ক্ষেত্রে ১৬ নয় ১৮ বছরই জয়যুক্ত হয়েছে। তবে সমাজের কিছু জটিল সমস্যা সমাধানে আইনে ক্লজ (ধারা) যুক্ত হতে পারে।’

উল্লেখ্য, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধসংক্রান্ত আইনটি এখনো পাস হয়নি। বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের ন্যূনতম বয়স ১৬ না ১৮ কত হবে, সে বিতর্কেরও অবসান হয়নি।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী বিয়ের ক্ষেত্রে বয়সের বিষয়টি সঠিকভাবে চিন্তাভাবনা করবেন।’

জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কানাডিয়ান হাইকমিশনার ক্রিস্টিয়ান টার্ডিফ। অতিথি আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভোরের কাগজ–এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মাতাভেল পিক্কিন, ইউএন উইমেনের আবাসিক প্রতিনিধি ক্রিস্টাইন হান্টার, ইউনিসেফের উপ-প্রতিনিধি লুইস মভোনো এবং জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন।

কর্মশালা সঞ্চালনা করেন উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সমন্বয়কারী আঙ্গুর নাহার মন্টি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম এ ধরনের কোনও মুভমেন্ট আয়োজন করা হলো।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশে কোনও আইন হওয়ার আগে সাধারণ মানুষকে তা জানানো হয়। ফলে মানুষ সে আইন সম্পর্কে তাদের মতামত জানাতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে তেমন প্রচার প্রচারণা খুব একটা হয় না। তবে এবার মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্ধারণ নিয়ে আইনের আগেই এক ধরনের বিতর্ক শুরু হয়েছে। শহর থেকে শুরু করে গ্রামের চায়ের দোকান পর্যন্ত আলোচনা চলছে এ বিষয়ে। সেসব আলোচনা থেকেই বলা যায় ১৬ নয়, ১৮ বছরই জয়যুক্ত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেরিতে হলেও আশা করছি এ নিয়ে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন তৈরি হবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন মেয়েরা ১৮ বছরে কেন, ৩০ বছরেও বিয়ে করতে চায় না। তারা পড়াশোনা শেষে রোজগার করে পরিবারে অবদান রাখতে চায়।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণমাধ্যমকর্মী মানসুরা হুসাইন। আরও বক্তব্য রাখেন ভোরের কাগজ এর সম্পাদক শ্যামল দত্ত, কানাডা হাইকমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার ক্রিশ্চিয়ান টারডিফ, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মাতাভেল পিক্কিন, ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ লুইস মোভনো, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরদিা ইয়াসমিন প্রমুখ।

সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, বাল্যবিবাহ একটি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং ধর্মীয় ইস্যু। একে আইনগতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি সমাজের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার এবং মিডিয়াকে একযোগে কাজ করার আহবান জানান।

ক্রিশ্চিয়ান টারডিফ বলেন, বাল্যবিবাহ উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। এটি নিরসনে সরকারের নেওয়া ২০১৫ পরবর্তী এজেন্ডাকে আমরা সমর্থন করি। এক্ষেত্রে বেসরকারী এবং সুশীল সমাজের সংগঠনগুলোর ভূমিকা রয়েছে। বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিয়ে বন্ধ করা একটি অত্যন্ত জটিল প্রচেষ্টা। এটা করতে সমাজ, সংস্কৃতি এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়। তাই এটি এককভাবে দূর সহজ নয়। এর জন্য নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমেরও ভূমিকা রয়েছে।

ইউএনএফপিএ-র বাংলাদেশ প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা ম্যাটাভেল পিকিন বলেন, বাল্যবিবাহ রোধ একটি সামাজিক মূল্যবোধ। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক বিপ্লব। এক রাতে বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়ে সামাজিক পরিবর্তন আসবে না। এ পরিবর্তন আনতে গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ, যেসব স্থানে সরকার এমনকি উন্নয়ন সহযোগীরা পৌঁছাতে পারে না, গণমাধ্যমে কণ্ঠ সমাজের সেসব স্থানেও পৌঁছাতে পারে।

ইউনিসেফের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ লুইস মোভনো বলেন, বাল্যবিবাহের মতো সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে সরকার, গণমাধ্যম এবং উন্নয়ন সহযোগীদের একসঙ্গে ভূমিকা রাখতে হবে।

ইউএন উইমেন-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্রিস্টিন হান্টার গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলেন, আপনারা বাল্যবিবাহ রোধে বালিকা, তাদের মা এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলুন। তাদের স্বপ্নের কথা জানুন। তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করুন।

মন্ত্রিসভায় বিয়ের বয়স কমানোর আলোচনায় প্রতিমন্ত্রীর ভূমিকা কী ছিল বা এখন তিনি ১৬ না ১৮ বছরের পক্ষে—এসব নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেন গণমাধ্যমের কর্মীরা।

এসব প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমি কাঠগড়ায় বসে আছি। সবাই প্রশ্ন করছেন। তবে সত্য কথা, বাল্যবিয়ে বন্ধ করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকার যেভাবে কর্মসূচি পরিচালনা করছে, তাতে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে ২০৪১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না।’

মন্ত্রিসভায় বয়স কমানোর বিষয়টি উত্থাপন প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয় থেকে যে খসড়া মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হয় তাতে মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছরই ছিল। ক্যাবিনেট শক্তিশালী জায়গা। সেখানে উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রীরা থাকেন। বিভিন্ন দিক নিয়ে কম–বেশি সবাই আলোচনা করেন। একপাশ বেশি হয়ে গেলে তখন আর অন্য পাশের কিছু করার থাকে না। আর এখন আমার যে ভূমিকা রাখার কথা, যেটা সঠিক মনে করছি, তা করার চেষ্টা করছি।’

বিয়ের ক্ষেত্রে বয়স প্রমাণে নোটারি পাবলিকের দেওয়া সনদ বাতিল করা, শাস্তির পরিমাণ বাড়ানোসহ আইনের অন্যান্য দিক তুলে ধরেন প্রতিমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করেন স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্টের চন্দন লাহিড়ী এবং উইমেন চ্যাপ্টার এর সম্পাদক সুপ্রীতি ধর।

 

 

শেয়ার করুন: