বাংলাদেশেও শুরু হলো ‘হি ফর শি’ ক্যাম্পেইন

Ema Watson
এমা ওয়াটসন

উইমেন চ্যাপ্টার: নারী অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি নারীর এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে অবশেষে বাংলাদেশেও শুরু হলো হি ফর শি ক্যাম্পেইন (#heforshe)। এই প্রচারাভিযানের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পুরুষরাও যাতে নারীদের সহায়ক হয় কিংবা নারীবাদ যে শুধু নারীদেরই বিষয় নয়, পুরুষদেরও বিষয় হতে পারে সেটিই তুলে ধরবার প্রয়াস।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়,  মাস খানেক আগে বিশ্বজুড়ে সাড়া জাগানো হ্যারি পটার সিনেমার অভিনেত্রী এমা ওয়াটসন জাতিসংঘে দেয়া এক ভাষণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা “হি ফর শি” ক্যাম্পেইন শুরু করেন।

জাতিসংঘের উইমেন গুড উইল অ্যাম্বাসাডর হিসেবে ভাষণ দেয়ার আগে এই ব্রিটিশ অভিনেত্রী বিভিন্ন দেশ সফর করেন যার মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। তার এ ভাষণের মূল বার্তাই ছিল শুধু নারী নয় বরং লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করতে নারী ও পুরুষ উভয়কেই ভূমিকা রাখতে হবে। সেজন্য তিনি পুরুষদের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণও জানান ওই ভাষণে।

তিনি বলেন, ”আমি সব পুরুষদের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানানোর সুযোগ নিতে চাই। লিঙ্গ সমতা আপনারও বিষয়।”

আর এরপরই ‘হি ফর শি ক্যাম্পেইন’ ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। যার ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও।

যেমন বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ফজলে হাসান আবেদ। মি. আবেদ সংস্থাটির ফেসবুক পেজে ‘হি ফর শি’ প্ল্যাকার্ড ধরে তোলা ছবি পোস্ট করে রীতিমত প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন।

‘হি ফর শি’ আন্দোলন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এমা ওয়াটসনকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি এ আন্দোলন লিঙ্গ সমতার বিষয়টিকে অনেক দূর এগিয়ে নিবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

মি. আবেদের এ বক্তব্যের সূত্র ধরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদে কর্মরত এক নারী দেলোয়ারা বেগমের সাথে কথা বলা হয়, যিনি প্রায় ২৭ বছর ধরে চাকরি করছেন। চাকরির পাশাপাশি সংসার সামলানো, সন্তানকে লালন পালনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কতটুকু সহায়তা পেয়েছেন তা জানতে চাইলে  তিনি বলেন, ”গৃহিণীর কাজ তো আমাদের করতেই হয়। সেক্ষেত্রে হাজব্যান্ড মনে করে বাজার করেছি, এটাই আমার কাজ। স্ত্রী তো পুরো সংসার দেখবে।”

গণমাধ্যমে কর্মরত শাকিলা সুলতানা জানান, বাচ্চা দেখাশোনার কাজটি তারা স্বামী-স্ত্রী ভাগাভাগি করে করলেও ঘরের অন্য কোন কাজে তিনি তেমন সহায়তা পান না। তিনি বলেন, রান্নার মতো বিষয়গুলো মেয়েরাই করে এ ধারনার কারণেও এ ধরনের কিছু কাজ সব ব্যস্ততার মধ্যে তাকেই সামলাতে হয়, যেটি ক্যারিয়ার গঠনেও এক ধরনের বাধা হিসেবে কাজ করে।

তিনি বলেন, ”আমরা মনে করি কাজগুলো মেয়েদেরই করতে হবে। যেমন রান্না, ঘর মোছা, কাপড় ধোয়া। কিন্তু সে যদি সহায়তা করে তাহলে আমাদের সুবিধা হয়।”

আবার এমনও অনেক ঘটনা ঘটছে যে একজন নারী কর্মক্ষেত্রে নিজ যোগ্যতায় একটি ভালো অবস্থানে উঠে আসলেন। এরপরই স্বামীর কর্মস্থল পরিবর্তনের কারণে নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে চাকরি ছেড়ে এমনকি বিদেশে গিয়ে সংসার করতে হচ্ছে। তেমনি একজন নারী সিফাত সুলতানা। সন্তান সহ ঢাকা ছাড়ার আগে প্রায় আট বছর প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ”আট বছর আইটিতে আমার ক্যারিয়ার ছিল। অনেক সংগ্রাম করে একটা পজিশনে এসেছিলাম। সব ছেড়ে আসতে কষ্টই লেগেছিল।”

তবে তিনি জানার ঘরের কাজে তিনি স্বামীর কাছ থেকে সহায়তা পাচ্ছেন।

কিন্তু কর্মজীবী নারীর ক্ষেত্রে পুরুষদের ভাবনা কি? তারা কি তাদের কর্মজীবী স্ত্রীর চাকুরীর ক্যারিয়ার গঠনে সহায়তা করছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমি কথা বলেছি একজন কর্মজীবী পুরুষের সাথে যার স্ত্রীও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

তিনি বলেন, ”মেয়েদের কিছু কাজে ছেলেরা সহায়তা করতে পারেনা। আমি বাসায় গিয়ে আমার বাচ্চার টেক কেয়ার করি।”

স্ত্রী চাকুরী করায় সংসারে তার কর্তৃত্ববোধ কোন হুমকির মুখে পড়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন পূর্বপরচিতি থাকায় তাদের মধ্যে কর্তৃত্বের বিষয়টি বড় হয়ে আসেনি।

বিশেষজ্ঞরা কি বলছেন? বাংলাদেশে যে বিপুল সংখ্যক নারী রয়েছেন যারা চাকরি বা অন্য কাজে নিয়োজিত আছেন তাদের ক্ষেত্রে আসলে বাস্তবতা কি ? পুরুষ কি আসলেই নারীর সহায়ক শক্তি হতে পারছে নাকি নারী এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে এখনো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব নাসরীন বলেন, ”সামাজিক কারণেও অনেকে ঘরের কাজে সহায়তা করতে পারেনা। কর্মস্থল আলাদা হলে এখনো স্ত্রীকেই কর্মস্থল ছাড়তে হয়।”

মিজ নাসরীন অবশ্য বলেন, নারীকে সহায়তার ক্ষেত্রে পুরোপুরি পরিবর্তন না আসলেও এ পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে শুরু করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

শেয়ার করুন: