মাহবুবুল নয়ন: “বছরের শুরুতে সবাই ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন টিচারের কাছে ছুটতে লাগল। কিন্তু আমার ক্লাস সেভেনে পড়া ছোট ভাইয়ের মধ্যে কোনো বিকার দেখা গেল না। সে যথারীতি ফেসবুক নিয়েই পড়ে থাকল। পড়ালেখা বলতে গেলে করেই না। আমার আম্মু পিচ্চিকে কোচিং এ যাওয়ার জন্য জোরাজোরি শুরু করলে পিচ্চি শক্তভাবে জানিয়ে দিল যে সে এবার কোথাও কোচিং করবে না, নিজে যা করার করবে। আম্মুও তার কথা মেনে নিল।
নিজে নিজে ভালো রেজাল্ট করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলেও তাকে আমি বই হাতে খুব একটা দেখিনি। সে রীতিমতো ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকল, ফেসবুক চালাতে থাকল। তার এসব কর্মকাণ্ডে আম্মুর কপালের রেখা আরও গভীর হলো।
কোন এক অদৃশ্য শক্তির প্রভাবেই হোক বা যে কারণেই হোক গত মাসে পিচ্চি ইউ টার্ন নিল। ঘোষণা করলো সে তার ক্লাস টিচারের (ধরি তার নাম পীযূষ) কাছে কোচিং এ যাবে। পড়ালেখা করা যে তার চিকন উদ্দেশ্য সেটা বুঝতে পারলাম। স্যারের কাছে পড়ে তার সুনজরে থেকে রোল নাম্বারের উন্নতি করাই তার মোটা দাগে উদ্দেশ্য। যাই হোক, ছেলে নিজ উদ্যোগে পড়তে চাচ্ছে এতেই আমার আম্মাজান খুশি। যেই কথা সেই কাজ।
পড়ানোর সময় এক ঘন্টা হলেও পিচ্চি ৪০/৪৫ মিনিটের মধ্যেই বাসায় ফিরত। পিচ্চিকে জিজ্ঞ্যেস করে জানতে পারলাম সিলেবাস শেষ, তাই স্যার এখন সাজেশন পড়াচ্ছে। ওকে, নো প্রবলেম। এতোক্ষণ যা পড়লেন তার সবটাই তবলার তুক তাক। এবার মূল বিষয়ে আসি।
আমাদের পীযূষ স্যার কিন্তু গণিতের মতো সাবজেক্ট পড়ান না। উনি বাংলার টিচার হলেও বিজ্ঞান, ইংলিশে বিশেষ অজ্ঞ। তার বিষয়ে জানতে গেলে দুটি ঘটনাই যথেষ্ট।
বলি তাহলে-
ঘটনা ১:
এটাকে ঠিক ঘটনা বলা যাবে না। এটাকে উনার স্টুডেন্ট বাড়ানোর পলিসি বলা যেতে পারে। তার কোনো ‘পার্সোনাল’ স্টুডেন্ট যদি কাউকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার কোচিং এ আনতে পারে তাহলে তিনি সেই কৃতী স্টুডেন্টকে ৫০ টাকা পুরষ্কার দেন!!!
বিষয়টা কি আঁচ করতে পারছেন? কতটা ব্যবসায়িক মনমানসিকতা থাকলে এমনটা সম্ভব!
ঘটনা ২:
ক্লাসে বিচার চলছে। গত দিন যারা ক্লাস পালিয়েছে তাদের্ই বিচার হচ্ছে। ক্লাসে থমথমে অবস্থা। স্যার একেবারে জজ সাহেবের মত গম্ভীর হয়ে একজন পলাতককে জিজ্ঞেস করলেন “কিরে, ক্লাস পালাইসিলি ক্যান?”
যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে সে এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে স্যারের আরেক পার্সোনাল স্টুডেন্ট বলে উঠল “স্যার, আগামী মাসের স্টুডেন্ট।” এই শুনে স্যার ওই স্টুডেন্টকে কিছু না বলেই ছেড়ে দিল!
ক্লাস পালিয়ে ছাত্রটা যে অপরাধ করেছে তার জন্য প্রাপ্য শাস্তি সে পেল না। ভবিষ্যতে এই ছাত্রই যে তার উপার্জনের একটা মাধ্যম হবে এতেই পীযূষ স্যার খুশি!!!
এসব ঘটনা শুনে আমি পিচ্চিকে বললাম “ভাই তুই এর কাছে পড়া ছাইড়া দে।” পিচ্চি বলল “ভাই, আমি ক্লাস এইটে উঠতে চাই” (!!!)
এরকম আর্ও অনেক টিচার্ই আমার আশে-পাশে আছে তাদের নিয়ে লেখতে গেলে আমার এই ভাঙ্গা চুরা মোবাইলটা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হবে।
প্রশ্ন ফাঁসের এই ডিজিটাল যুগে এগুলো এখন অনেকটাই ডাল-ভাত। এরকম টিচার থুক্কু চিটার আর বিভিন্ন কর্তা ব্যাক্তির ফাঁস করা প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ‘পাসে’র হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরে সেই ফলাফল প্রকাশ করার সময় আমাদের দেশের শিক্ষা মন্ত্রী তার চকচকে টাক নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন, আর বলেন “শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে।” ছাত্ররাও লাফালাফি করে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় গেলেই সব বন্ধ হয়ে যায়। তখন ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থা হয় তথৈবচ । এরপর উত্তর-দক্ষিণ, উপর-নীচ, ডান-বাম ভার্সিটি ছাড়া আর গতি থাকে না।
আফসোস … বড়ই আফসোস।