উইমেন চ্যাপ্টার: পাকিস্তানে ব্লাসফেমি আইনে আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আবেদনে এ পর্যন্ত দুই লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছে। চেঞ্জ ডট অর্গ নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে এই স্বাক্ষর নেয়া হচ্ছে।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের একটি আদালত আসিয়া বিবির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে দেশজুড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
পাঞ্জাব প্রদেশের বাসিন্দা পাঁচ সন্তানের মা আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে তার সহকর্মীরা অভিযোগ আনেন এই বলে যে, তিনি মুসলমানদের নবী হযরত মোহাম্মদকে অপমান করেছেন। তিনি মুসলিম না হওয়ায় সহকর্মীরা তার পানির পাত্র থেকে পানি খেতেও অস্বীকৃতি জানায়। ২০১০ সালের নভেম্বরে ব্লাসফেমি আইনে আসিয়াকে অভিযুক্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
আসিয়ার আইনজীবীরা জানান, তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে কি হবে না তা সম্পূর্ণই দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেয়া হবে। সুদানের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খ্রিস্টান মেয়ে মেরিয়াম ইব্রাহিমের সমর্থনে স্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোক্তা এমিলি ক্লার্ক এবারও এগিয়ে এসেছেন আসিয়া বিবিকে রক্ষায়। তারই উদ্যোগে #SaveAsiaBibi পিটিশনে এরই মধ্যে দুই লাখেরও বেশি মানুষ স্বাক্ষর করেছে।
ডেইলি মেইল জানায়, এ সপ্তাহে বিবিরি দুই ছোট মেয়ে এশাম এবং এশা মাসিহের ওপরও হামলা চালায় উগ্রপন্থী সেই ধর্মীয় লোকজনই, যারা তার মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। তারা ওই পত্রিকাটিকে জানায়, প্রথম যখন আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তখন ক্রুদ্ধ গ্রামবাসী তাদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্যাতন চালায়, এমনকি বিবির কাপড়চোপড়ও ছিঁড়ে ফেলে।
১৪ বছর বয়সী এশাম বলছিল, ‘যেদিন মাকে নির্যাতন ও গ্রেপ্তার করা হয়, সেই দিনটি এখনও আমি স্বপ্নে দেখি। এরপর থেকে ভাল করে ঘুমাতেও পারি না। ক্ষুব্ধ লোকজন ফিরে এসেছিল এবং আমাদের দুজনকে মারধর করে, জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেলে’।
এশাম আরও জানায়, ‘আমাদের টেনে-হিঁচড়ে গ্রামের মাঝখানে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা দুজনই কাঁদছিলাম, কিন্তু আমাদের দেখার কেউ ছিল না। প্রায় আধা ঘন্টা পর পুলিশ এসে বাবাকে খুঁজে বের করতে বলে। কিন্তু ভয়ে-আতংকে বাবা লুকিয়ে থাকায় পুলিশ মাকে নিয়ে চলে যায়’।
ব্লাসফেমি আইনের কারণে পাকিস্তানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পরিস্থিতি খুবই নাজুক। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, খ্রিস্টানদের একহাত নেয়ার ক্ষেত্রেই প্রায়ই এই আইনের অপপ্রয়োগ নৈমিত্তিক গঠনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত শত্রুতা অথবা জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের শেষপর্যন্ত ব্লাসফেমি আইনে গড়ায়।
আসিয়ার আইনজীবী নাঈম শাকির বলেন, এটা খুবই জোরালো একটি মামলা। আশা করছি সুপ্রিম কোর্ট আমাদের পক্ষেই থাকবে, কারণ আসিয়ার বিরুদ্ধে কোনো নির্দ্দিষ্ট অভিযোগই আনতে পারেনি কেউ। আদালত শুধুমাত্র গ্রামের ওই দুজন নারীর বিবৃতির ওপর নির্ভর করছে।
২০১০ সালে এক সংবাদ সম্মেলনে আসিয়া বলেছিলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট। গ্রামের যেসব নারী তাকে পছন্দ করতো না, তারাই এই মামলা সাজিয়েছে। পাকিস্তানের সংখ্যালঘু বিষয়ক তৎকালীন মন্ত্রী শাহবাজ ভাট্টির তদন্তেও আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। সম্পূর্ণ ধর্মীয় বিদ্বেষ এবং ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই এই অভিযোগের উৎপত্তি। তিনি আসিয়াকে ছেড়ে দেয়ার সুপারিশ করেন।