উইমেন চ্যাপ্টার: সাইনবোর্ডটি মহাখালি সামরিক অফিসার্স আবাসিক প্রকল্পের (ডিওএইচএস) একটি পার্কের। গত কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি ঘুরে ফিরছে এই দেয়াল থেকে ওই দেয়ালে। ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে সাইনবোর্ডটির একটি বাক্যকে ঘিরে।
সেখানে বলা হয়েছে, “পার্কের ভিতরে গৃহভৃত্য/বুয়াগনের Walk Way তে হাঁটা নিষেধ”-আদেশক্রমে মহাখালী ডিওএইচএস কর্তৃপক্ষ। ফেসবুকে সমালোচনার জের ধরে একটু খোঁজ নেয়া হয়েছিল বিষয়টা আসলে কি!
সাইনবোর্ডে এ ধরনের বিধিনিষেধ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক ডিওএইচএসের একজন কর্মকর্তা বলেন, পার্কে সব সময় সামরিক অফির্সাসদের পরিবার হাঁটা চলা করে থাকে। তাদের ছেলে-মেয়েদের কোনো অঘটন কিংবা ইভটিজিংয়ের হাত থেকে নিরাপদে রাখার জন্যই এরকম বিধি নিষেধ দেয়া হয়েছে।
ডিওএইচএস এলাকায় একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন রেনু বেগম। তিনি বলেন, আমরা কখনো এ পার্কে ঢুকি না। এখানে সব সময় স্যার-ম্যাডামরা তাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে হাঁটতে কিংবা ঘুরতে আসে।
পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, সামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের কিছু সংখ্যক ছেলে-মেয়ে পার্কটিতে হাঁটা চলা করছে। আর তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করে রেখেছে ডিওএইচএস কর্তৃপক্ষ।
মহাখালি ডিওএইচএস’র পরিচালনা বোর্ডের প্রেসিডেন্ট অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোশারফ হোসেন বলেন, এখানে সবসময় অফিসারদের ছেলে-মেয়েরা হাঁটাচলা করায় কোনো সার্ভেন্ট কিংবা বুয়াদের এখানে ঢোকার অনুমতি নেই।
তারা তো আপনাদেরই সেবা দিতে আসে তাহলে কেন তাদের অনুমতি দেয়া হবে না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখনই তাদের অনুমতি দেয়া যাবে না। কারণ এটি কারও একার সিদ্ধান্ত নয়। পরিচালনা পরিষদ বোর্ডে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এলাকার একজন বাসিন্দা উইমেন চ্যাপ্টারকে বলেন, সাইনবোর্ডের এই ভাষা তাকেও মর্মাহত করেছে, কিন্তু কিছু ঘটনাও এখানে ঘটেছে। ফলে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। তিনি জানান, কাজের বুয়াদের কিছু অনৈতিক কার্যকলাপ সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়, তাছাড়া লেকের পাড়ে বিভিন্ন ফলের গাছ থেকে ফল চুরির ঘটনাও আছে। এদিকে কুকুর নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও, কর্মকর্তাদের অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞা মানেন না বলেও জানান ওই ব্যক্তি।
তিনি বেশ কৌতুক করে বলেন, ‘লেকের পাড়ে সকাল আটটা পর্যন্ত মেয়েদের চলাচল করার অনুমতি থাকায় ওই সময়টাতে সেখানে পুরুষদের নিষিদ্ধ করা আছে। কিন্তু আটটার পর ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ সবার জন্যই উন্মুক্ত। যেখানে পুরুষের জন্যই সীমারেখা টেনে দেয়া হয়েছে, সেখানে বুয়া বা ভৃত্যদের বিষয় তো থাকতেই পারে’।
এদিকে ডিওএইচএস সূত্রে জানা গেছে, ৬৩ একর জায়গা জুড়ে ৫শ ৩৮টি প্লট রয়েছে। কিন্তু এ প্লটগুলো সামরিক অফির্সাসদের দেয়া হলেও অধিকাংশ সামরিক অফিসার তা বিভিন্ন পেশার মানুষের কাছে বিক্রি করে চলে যায়। আর ডিওএইচএস এলাকায় প্রথম পর্যায়ে দোতলা বাড়ির অনুমোদন দেয়া হলেও এখন সাত তলা পর্যন্ত বাড়ির অনুমোদন দিচ্ছে ক্যান্টেমেন্ট বোর্ড। বর্তমানে এ এলাকায় প্রায় দুই হাজারের উপর পরিবার বাস করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অধিকাংশই ফ্লাটেই বিভিন্ন পেশাজীবী কর্মকর্তা বসবাস করে থাকে কিংবা ব্যবসা করছে। এখানে অনেক বায়িং হাউজ ছাড়াও বিভিন্ন অফিস রয়েছে, যা কিনা বাণিজ্যিক এলাকায় রূপ নিয়েছে। ফলে যে লক্ষ্য নিয়ে ডিওএইচএস এর যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার পুরোটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।