
ফারহানা রহমান: শরিফা খাতুন ভূতগ্রস্তের মত বারান্দার সিঁড়িতে বসে আছেন সকাল থেকে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন সফিকুল সাহেবের লাশের দিকে। না ঠিক লাশের দিকে নয় তার দৃষ্টি সফিকুলের খাটিয়া ছাড়িয়ে অন্য কোথাও অন্য কোন জগতে চলে গেছে। শরিফার চেহারা দেখে বোঝার কোন উপায় নেই উনার মনের মধ্যে কি হচ্ছে? রাগ, ক্ষোভ,দুঃখ, অভিমান, অপমান , হতাশা ? কি অনুভূতি উনার? না, ঠিক কোনটাই নয়। তবে কোন একটি মিশ্র অনুভূতি আর অভাবনীয় বিস্ময় তাকে রাহুগ্রস্ত করেছে। তার বসার ভঙ্গী দেখে যে কেউ ভাবতে বাধ্য হবে যে উনি বহু যুগ ধরে এভাবে বসে আছেন এবং আর কোনদিনও উঠে দাঁড়াবেন না। সফিকুলের মৃত্যু তাকে এভাবে স্তব্ধ করে দিয়েছে মনে হচ্ছে।
কিন্ত ৭০ বছর বয়সী সফিকুল গত ৭/৮ বছর থেকে হৃদরোগে আক্রান্ত, দুবছর হল সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়ে ওপেন হার্ট সার্জারি করা হয়েছে। আর তাছাড়া অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ শরিফার খাতুনের জন্য মৃত্যু কোন অস্বাভাবিক ঘটনা না। তিনি জীবনে অনেক মৃত্যু দেখেছেন।
শরিফার তিন বছর বয়সি প্রথম সন্তানের মৃত্যু হয় সামান্য জ্বরে ভুগে শরিফারই কোলের উপর মাথা রেখে। আর ঠিক তার এক বছরের মাথায় চলে যান মা বাবাদুজনি। শুধু কি তাই? উনার সবচেয়ে ছোট প্রিয় বোনটাও না ফেরার দেশে চলে গেছে তাও প্রায় বছর পাঁচেক হতে চলল। শ্বশুর -শাশুড়ির মৃত্যু, দেবর-ভাসুরের মৃত্যু, বড় ভাইয়ের বড় ছেলের বিয়ের পর হানিমুনে গিয়ে সাগরে ভেসে হাওয়া! কি না দেখতে হয়েছে এই এক জীবনে তাকে। মৃত্যুকে জীবনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবে মেনে নেওয়ার ক্ষমতা ৬৪ বছর বয়সী শরিফার হয়েছে বলেই তার বিশ্বাস। তাই তিনি সহজে বিচলিত হন না।
তবে এও ঠিক মেধাবী ইঞ্জিনিয়র শফিকুলের গত ৩০ বছরের ব্যাবসার সাফল্য ঈর্ষান্বিত করবে যে কাউকে। অল্প বয়সে অনেক সাফল্য তার। গুলশানে ১৫ কাঠা জমির উপর রাজ প্রাসাদের মত বাড়ি, সারা পৃথিবী ঘুরে বেরিয়েছেন শরিফাকে নিয়ে । ভ্রমণ শুরু করেছিলেন শরিফার ইচ্ছেতে প্রথম হজ্ব দিয়ে। এরপর গত চল্লিশ বছরের বিবাহিত জীবনে ৬ বার আল্লাহর ঘরে গেছেন স্বামী-স্ত্রী মিলে। দুনিয়ার সপ্তম আশ্চর্য থেকে শুরু করে অ্যামেরিকা-ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়া কোথায় না গেছেন সফিকুল শরিফা ও চার সন্তানদের নিয়ে। দেশে বিদেশের কোন ব্যাংকে কত টাকা আছে সে হিসেব শরিফার নেই, তবে এতুকু তিনি নিশ্চিত জানেন যে তার আরতা র চার সন্তানের কখনও টাকার অভাব হবেনা । তাহলে শরিফা আসলে ঠিক কোন ব্যাপারটা নিয়ে এত বেশী অপ্রকৃতিস্থ বোধ করছেন? আর সেটা জানতে হলে শরিফার সম্পর্কে আরও একটু গভীরভাবে জানতে হবে আমাদের।
ক্যালকাটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যখন ইংরেজি সাহিত্যে এম এ করে ঢাকায় আসেন শরিফা তার সামনে নানা সম্ভবনার দুয়ার খোলা ছিল। কিন্তু কিশোরী বয়সের ভালবাসার মানুষ সফিকুলকেকে জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে সংসার শুরু করেই নিজেকে ধন্য মনে করেছিলেন তিনি। যদিও সফিকুলের দিক থেকে সব রকমের সহযোগিতাই উনি সব সময়ই পেয়েছেন, কিন্তু পর পর হওয়া চার সন্তানের জননী শরিফার পক্ষে প্রথম ১০ বছরের উপর সরকারী কলেজের অধ্যাপনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারটি নিয়ে কখনই কেউ শরিফাকে আফসোস করতে দেখেনি, বরঞ্চ সফিকুলই মাঝে মধ্যে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়দের মাঝে দুঃখ করে বলতেন,
আমার সংসার আর সন্তানদের সামলাতে গিয়ে শরিফাকে তার ক্যারিয়ার ত্যাগ করতে হয়েছে। আর সেজন্য আমি নিজেকেই অপরাধী মনে করি।
তবে শরিফার গর্বের জায়গা দখল করেছিল ওর সন্তানেরা। যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। শরিফা একজন রত্নগর্ভা আর সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে তাকে পদক দেওয়া হয়েছে। একান্ত নিজের একাকি সময়গুলোতে শরিফা নিজকে একটি প্রশ্নই বার বার করেছে তার অপ্রাপ্তির জায়গাটা আসলে কোথায়? কোন অজানা গভীর দুঃখবোধ তাকে তাড়িত করে কিনা? ধর্মভীরু শরিফা জানেন, আল্লাহতালা কাউকেই শতভাগ সুখ পৃথিবীতে দেয়না । কিন্তু তিনি বুঝতে পারেন না যে আসলেই কষ্টটা কোথায়? আর একইভাবে সফিকুলের সাথে একান্ত আপন সময়গুলোতেও তিনি বার বার জানতে চেয়েছেন সফিকুল ওকে নিয়ে সুখী হয়েছেন কিনা? সফিকুল কিন্তু প্রতিবারই ওকে বুকে টেনে নিয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
আমার মত সুখী মানুষ আর দুনিয়াতে কে আছে বল?
শরিফা অন্ধের মত বিশ্বাস করেছেন স্বামীকে। আর বিশ্বাস কেনই বা করবেন না? সফিকুলের তো নিজের বলে কিছুই বলতে গেলে নেই। তার সমস্ত স্থাবর-অস্থাবর যেখানে যা সম্পত্তি আছে, তার প্রায় সবই তিনি শরিফার নামেই করেছেন আর কিছু দিয়েছেন সন্তানদের। তবে শরিফার এসব বিষয় আশয়ে কোনদিনও কোন আগ্রহ ছিল না।তার জীবনের সুখের উৎস স্বামী ও সন্তানরা।
শরিফা আর সফিকুলের সংসারকে এক কথায় সবাই একটি আদর্শ দম্পতির আদর্শ সংসার হিসেবেই মনে করে। এ বিশ্বাস শুধু যে বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনই করে তা নয়। বরং তাদের নিজেদেরও এক্ই বিশ্বাস আর সমাজেও তাদের এই সম্মান তারা ধরে রাখতে পেরেছেন বহু বছর ধরে। বহু লোকের ভরসার একমাত্র স্থল এই দম্পতি যারা প্রতিনিয়ত অন্যের মঙ্গল কামনা করেছেন, সবার উপকার করেছেন । অসম্মানিত জীবনের চেয়ে মৃত্যুই যে শ্রেয় তা ধর্মপ্রাণ শরিফা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেছেন সবসময়। আর তাই তিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে সারা জীবনের এই একতাই প্রার্থনা করেছেন-
হে আল্লাহ তুমি আমাকে কখনও অসম্মানিত করো না।
শরিফা আর সফিকুলের সুখের সংসারে প্রতিপত্যি আর ধন সম্পদের অভাব কখনই ছিল না। ঠিক তেমনি সম্পদের সর্ব শ্রেষ্ঠ ব্যবহার কি করে করতে হয় সেটা শরিফার চেয়ে ভাল কেউ জানেন না। আর তাই প্রত্যেক সন্তানকে সাংস্কৃতিক আর সর্বাধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তিনি পিছপা হননি কখনই ।
বড় ছেলে রাকিব ও তার স্ত্রী দুজনেই মাইক্রোসফটের ইঞ্জিনিয়ার সিহেবে কর্মরত আছে তাও বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল। মেঝ মেয়ে রিনি ডাক্তার আর ওর স্বামী মাকসুদ এম আই টি তে ম্যাথম্যাটিকস পড়ায় ।যদিও রিনি একজন ডাক্তারকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে পেতে চেয়েছিল কিন্তু বিচক্ষণ শরিফার চোখে ভাল লেগে গিয়েছিল এমআই টি এর অংকের তুখোড় ছাত্র আর পরবর্তীতে শিক্ষক হওয়া মাকসুদকে। ফুটফুটে দুই কন্যা সন্তানের মা রিনি, নিজের মায়ের কাছে সে চির কৃতজ্ঞ । শরিফাই মাকসুদকে রিনির জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করেছিল বলে। রিনির ফোন পেলেই শরিফা প্রশ্ন করত।
‘মাকসুদ তোকে ভালবাসে তো? তোর ঠিকমত যত্ন করে তোমা?
মাকসুদের মত মানুষ হয়না আম্মু ।
তোমার চোখ তো কখনই ভুল করতে পারে না।
তুমি দুনিয়ার সেরা আম্মু তাই মেয়ের জন্য সেরা পছন্দ তাই করেছো। তবে আমার আব্বু কিন্তু শ্রেষ্ঠ ! আব্বুর মত কেউ নেই বুঝেছ সেটা হওয়া সম্ভব না । পৃথিবীতে যত মহান পুরুষই থাকুক না কেন আমার আব্বুর কাছে সবাই নস্যি বুঝেছ আম্মু? মেয়ের কথায় শরিফা হাসে, ‘ সব ছেলে মেয়ের কাছেই তার বাবা পৃথিবীর সেরা বাবা বুঝলি? এ আর নতুন কি?
তবে কথাটা শুনে ভিতরে ভিতরে শরিফা গর্ব বোধ করে জানে মেয়ে বাড়িয়ে বলেছে না একটুও। সত্যি তো সরিফুল এক শ্রেষ্ঠ বাবা যার জীবনের ধ্যান জ্ঞ্যান শুধুই তার স্ত্রী আর চার সন্তান, যাদেরকে সে কখনি বুক থেকে নামতে দেয়নি। শরিফার তৃতীয় সন্তান রাকিব যে কিনা জীবনে কোনদিন দ্বিতীয় হয়নি। বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ফ্যাকাল্টি। সেই শুধু এখনো বাবা-মার সাথে আছে। যদিও বাবার ব্যবসার প্রতি তারও কোন আগ্রহ আছে বলে মনে হয় না। ছোট মেয়ে রিসা ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতি পড়ায় আর সেও স্বামী সন্তান নিয়ে ইংল্যান্ডে স্যাটেলড বেশ কয়েক বছর হল। এই রিসারই দ্বিতীয় সন্তান হবে তা আর মাত্র কয়েক মাস বাকী সেজন্যই সফিকুল আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই শরিফার জন্য লন্ডনের ফ্লাইট কনফার্ম করেছিলেন। আর ঠিক এসময়টাতেই কোন এক ঝড়ো হাওয়া এসে তোলপাড় করে দিল শরিফার সবকিছু।
শরিফা ঘড়ির কাটার ঘরে চলেন । শরিফার বিশ্বাস নিয়ম মেনে তিনি চলেছেন বলেই আজ তার সন্তানেরা উচ্চশিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত । খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়েন আর কোরান তেলাওয়াত করেন। তাই ভোর ছয়টা বাজলেই কাজের বুয়াদের ডেকে তোলেন তিনি, তবে সকালের নাস্তা তিনি চিরকাল নিজ হাতে তৈরি করেন সফিকুলের জন্য। রহিমা যদিও রান্নার কাজে অত্যন্ত অভিজ্ঞ কিন্তু পাশে থেকে সাহায্য করাই তার মূলত কাজ। ৭.৩০ -৮.৩০ পর্যন্ত চা নাস্তা খান তিনি সফিকুল সাহেবের সাথে আর সংসারের প্রয়োজনীয় টুকটাক কথাও সেরে ফেলেন সেই ফাঁকে। এত বছরের সংসারে শরিফা খাতুনের এই একটি অভ্যাসের কোন ব্যতিক্রম হয়নি। সফিকুল সাহেব অফিসের উদ্দেশ্যে বের হন ঠিক ৯টা ৫মিনিটে, বাসা থেকে অফিস মাত্র ১০মিনিটের ড্রাইভিং ডিস্টেন্স তাই এই পথটুকু সব সময় তিনি নিজেই ড্রাইভ করেন।
প্রতিদিন নাস্তা খেয়ে শরিফা বিছানায় শুয়ে একটু ঘুমিয়ে নেনআধ ঘণ্টার মত সময়। ঠিক সকাল ১০টা থেকেই পুরোদমে সংসারের নানা লেগে যান। তবে আজকের দিনটা সত্যি খুব ব্যতিক্রম। আজকে শরিফা খাতুন নাস্তার পর ঘুম থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই হুরমুড়িয়ে উঠবেন কোন এক দুঃস্বপ্ন দেখে আর ঠিক ৯.৪০ মিনিটে অফিস থেকে ফোন আসবে যে সফিকুল সাহেব আর নেই।
সফিকুল সাহেবের লাশের খাটিয়ার পাশে বসে একনাগাড়ে গোঙিয়ে গোঙিয়ে কেঁদে চলেছে ২৭ -২৮ বছরের এক ভদ্রমহিলা যাকে একনজর দেখেই বোঝা যায় অতি সাধারণ ঘরে তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। শহরের চাকচিক্য আর জৌলুস কিছুই তার হাবভাবে বিন্দুমাত্র প্রকাশ পায় না। শরিফা খাতুনের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিত্বের কাছে নিতান্তই গেঁয়ো অভিব্যক্তি সম্পন্ন এই মফঃস্বলের সাধারণ নারীটির নাম হাসিনা। যাকে তার স্বামী সফিকুল আদর করে হাসু বলে ডাকতেন । তো সেই হাসু তার সাত বছর বয়সি ছেলে রনি আর পাঁচ বছর বয়সি মেয়ে রাণীকে নিয়ে হাজির হয়েছেন উচ্চ শিক্ষিতা দুর্দান্ত প্রতাপশালী শরিফা খাতুনের কাছে স্বামীর অধিকার নিয়ে বচসা করার জন্য। শরিফা খাতুনের অনেক গুণের মধ্যে আরও একটি বিশেষ গুণ হচ্ছে উনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী রমণী। আর তাই ৭০ বছর বয়সী সফিকুল সাহেব তার চেয়ে ছয় বছরের ছোট শরিফা খাতুনের উপর অন্ধের মত নির্ভর করেছেন মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।
সফিকুলের ভাষায় সে ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্ত্রীর স্বামী আর শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পিতা। তার সৌভাগ্যে যে অনেকেই ঈর্ষান্বিত সেটা বুঝতে পেরে সফিকুলের সুখের আর কৌতুকের শেষ ছিল না। সবই তো এতকাল ঠিকঠাক মতই চলছিল অংকের হিসেব শেষে এসে যেমন করে মিলে যায় ঠিক তেমনি। কিন্তু আজ জীবনের শেষ সময় এসে এ কোন বাস্তবতার সম্মুখীন শরিফা খাতুন ? এ এমন এক নির্জলা সত্য একে ঠিক কিভাবে মেনে নেবেন ৬৪ বছরের প্রায় প্রৌঢ়া এক অভিজাত রমণী? এত বছরের এই যে অর্জন! বিশ্বাস , সন্মান , সন্তান ,সংসার, এ সমাজ তার কি হবে এখন? বিন্দুবিন্দু ঘাম ঝরিয়ে গড়ে তোলা পাহাড় সম ব্যক্তিত্ব যা কক্ষনো কারও কাছেই মাথা নত করেনি, যার সন্মান আর সুখ ছিল লোকের আলোচনার বিষয় বস্তু ! তবে এটাও তো সত্যি বহু নারীর আইডিয়াল মডেল ছিল শরিফা আর সেই সাথে শরিফা- সফিকুলের সংসার অনেকের কাছেই ছিল একটা মিথ এর মত।
শরিফার মাথা ঠিকমত কাজ করে না আজ। তিনি কিছুতেই কোন কিছু মিলাতে পারেন না যেন আর । সফিকুলের কি এমন অপ্রাপ্তি ছিল যে উনি প্রায় বৃদ্ধ বয়সে এসে এমন একটা কাজ করবেন আর শরিফা স্বামীর এত কাছে থেকেও কক্ষনই কোন কিছুই আঁচ পর্যন্ত করতে পারলেন না সেটাও কি সম্ভব? সফিকুলের মত এমন সংবেদনশালি বুদ্ধিমান ব্যাক্তিকে কি করে মোহগ্রস্ত করে এমন একটি অতি সাধারণ নারী আর কি করেই বা তার এতদিনের সাধনার সংসার, সন্তান আর সমাজকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিতে পারল সেটা শরিফার বোধগম্য হয় না কিছুতেই। শরিফার সমস্ত জীবন দর্শনকে এক মুহূর্তে বালির বাঁধের মত চূর্ণ বিদীর্ণ করে দিল হাসিনা নামক কোন এক গ্রাম্য রমণীর বিচিত্র গোঙানির শব্দ।
গল্পের এ পর্যায়ে গিয়ে শরিফা খাতুনকে সান্তনা দেওয়ার মত কোন ভাষা আমরা খুঁজে পাইনা। খুব করুণা হয় শরিফার ভাগ্যকে। তো উনি এখন কি করবেন? কি করে সামাল দিবেন তার নিজেকে আর এতকালের পরিচিত পৃথিবীকে যে ভুবনে তার অবস্থান? এ কি পরিণতি? এ কি ধরনের পরাজয় তার ছোট মেয়ের চেয়েও কম বয়সী অল্প শিক্ষিতা এক গ্রাম্য নারীর কাছে জীবনের সব অর্জনের বিনিময়ে? এখন তাহলে ঠিক কি করবেন শরিফা খাতুন সেটা বোঝার আগেই পরাজয় হল এক সম্ভ্রান্ত সুখী পরিবারের আর সেই সাথে অসম্ভভ বলে যে দুনিয়াতে কিছুই নেই সেটা বুঝতে কারো আর বাকী থাকে না।