উইমেন চ্যাপ্টার: চলে গেলেন রত্নগর্ভা মা আয়েশা ফয়েজ। এক্ই সাথে তিনি তিন বরেণ্য ব্যক্তিত্ব সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ, শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল এবং কার্টুনিস্ট আহসান হাবিবের মা। আরও তিনটি মেয়ে আছে এই মায়ের। তবে যিনি মা, তিনি সবারই মা। তিন বিখ্যাত ছেলের মধ্য দিয়ে তিনি একটি বিশাল প্রজন্মের মা হয়েই ছিলেন। শনিবার সকালে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ৮৪ বছর বয়সী আয়েশা ফয়েজ বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনিসহ বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। এ সময় প্রয়াতের ছেলে অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও আহসান হাবীব মায়ের পাশে ছিলেন। বড় ছেলে হুমায়ূন তো দুবছর আগেই বিদায় নিয়েছেন। হয়তো মাও চললেন ছেলের কাছেই।
কে যেন বলছিলেন, ছেলের মৃত্যুর পর তিনি আর স্বাভাবিক হতে পারেননি। গত ১১ সেপ্টেম্বর কিডনিতে ইনফেকশন নিয়ে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে। ছয় মাস আগেও তার ডায়ালাইসিস করা হয়েছিল।”

জোহরের নামাজের পর দুপুর দেড়টার দিকে ছেলে আহসান হাবীবের পল্লবীর বাসার পাশের একটি মসজিদে আয়েশা ফয়েজের জানাজা হয়।
জানাজার পরে তার মরদেহ পৈত্রিক বাড়ী নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়।
আহসান হাবীব জানান, সেখানে রোববার সকাল ১০টায় দ্বিতীয় জানাজার পর তার মায়ের দাফন হবে।
আয়েশা ফয়েজের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৩ মার্চ; নানাবাড়ি বারহাট্টার কৈলাটি গ্রামে। বাবা শেখ আবুল হোসেন এবং মা খায়রুন নেসা। ১৯৪৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ফয়জুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন পুলিশ কর্মকর্তা ফয়জুর। মুক্তিযুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তা স্বামী নিহত হওয়ার পর ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে বেশ কষ্ট করতে হয় আয়েশা ফয়েজকে। স্বাধীনতার পরে শহীদ পরিবার হিসেবে মোহাম্মদপুরে একটি বাসা পেলেও সেখান থেকে পরে তাদের উচ্ছেদ করা হয়।
মায়ের লড়াইয়ের জীবন সম্পর্কে জাফর ইকবাল বলছিলেন, ‘আমার মা জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। তিনি আমাদের আগলে না রাখলে আমরা ভেসে যেতাম।’ ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া না করালে তারা হয়তো বর্তমানের অবস্থায় আসতে পারতেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রজন্মে সবচেয়ে জনপ্রিয় দুই লেখক এবং জনপ্রিয় একজন কার্টুনিস্টকে গর্ভে ধারণ করার জন্য ‘রত্নগর্ভা’ পরিচিতি পান আয়েশা ফয়েজ।
‘জীবন যে রকম’ নামে একটি আত্মজীবনীমূলক বই রয়েছে আয়েশা ফয়েজের, যাতে নিজের বেড়ে ওঠা, বিয়ে, ছেলে-মেয়েদের জন্ম, মুক্তিযুদ্ধে স্বামীর নিহত হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে ছয় সন্তানকে নিয়ে জীবনসংগ্রামের নানা দিক উঠে এসেছে।