
উ্ইমেন চ্যাপ্টার: ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আত্মাহুতি দিয়েছিলেন বিপ্লবী নারী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। দিনটিকে স্মরণ করে বীর এই কন্যার প্রতি রইলো শ্রদ্ধার্ঘ। যিনি ব্রিটিশ শাসন তো মেনে নেননি, তার ওপর ব্রিটিশদের হাতে মরতেও চাননি।
তিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দের নামেও পরিচিত, ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, একজন বাঙালী, যিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম বিপ্লবী শহীদ ব্যক্তিত্ব। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী মাস্টারদা র্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন দেন।
১৯৩২ সালে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন। এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো “কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ”। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তিতে পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন। দেশপ্রেমিক এই বীরকণ্যার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আজো কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। প্রীতিলতার জন্মভিটা পরিদর্শন করেছেন বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিপু মনি, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, বর্তমান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ভারতের সহকারী হাই কমিশনার সোমনাথ ঘোষ ও সোমনাথ হালদার, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।
এ ছাড়া মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তপতী মুখোপাধ্যায়সহ দেশের গুণী ও বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সময় ওই ভিটা পরিদর্শন করেছেন। সরকারের মন্ত্রীরা নানা রকম আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু তা আজ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে ধলঘাট গ্রামের দক্ষিণ সমুরায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার মিউনিসিপ্যাল অফিসের কেরানি, মা প্রতিভা ওয়াদ্দেদার একজন গৃহিণী ছিলেন। এক ভাই, তিন বোনের মধ্যে প্রীতিলতা দ্বিতীয়। তাঁর ডাক নাম ছিল রানী। পংকজ চক্রবর্তীর লেখা বীরকন্যা প্রীতিলতা বই থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই বইয়ে আরো উল্লেখ আছে, প্রীতিলতা শিক্ষাজীবনে চট্টগ্রাম খাস্তগীর বালিকা বিদ্যালয় থেকে প্রবেশিকা, ঢাকার ইডেন কলেজে থেকে আইএ ও কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ডিসটিংশনসহ বিএ পাস করেন। বিএ পাসের পর চট্টগ্রামের নন্দনকানন বালিকা বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করেন। চট্টগ্রামে এসে সূর্য সেন ও নির্মল সেনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং গোপনে কাজ করতে থাকেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মাস্টার দা সূর্য সেনের নির্দেশে প্রীতিলতা পাহাড়তলীর ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। সেদিন প্রায় ৫৩ জন ইংরেজ মারাত্মকভাবে আহত হয়। আক্রমণ শেষে ফেরার সময় পেছন থেকে একটি গুলি এসে প্রীতিলতার বুকে বিদ্ধ হয়। তখনো তাঁর পূর্ণ জ্ঞান ছিল। ধরা পরার আশঙ্কায় তিনি পকেটে থাকা পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে ঢেলে দিয়ে আত্মাহুতি দেন।
সৌজন্যে: দীপংকর গৌতম।