উইমেন চ্যাপ্টার: এবছর প্রথমবারের মতোন গণিতের নোবেল খ্যাত ‘ফিল্ড প্রাইজ’ পেলেন একজন ইরানী নারী। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মারিয়াম মির্জাখানি দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে গণিতবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ পুরস্কার গ্রহণ করবেন।
১৯৩৬ সাল থেকে প্রবর্তিত এই পুরষ্কার ৫২ জনের পর সর্বপ্রথম একজন নারী পেলেন । বিজ্ঞানের কিছু কিছু শাখায় নারীদের অবস্থান অনেকসময় এমনটাও বলতে বাধ্য করে যে ওটা তাদের জন্য নয়, বা তারা এর যোগ্য নন । মেধা নিয়েও প্রশ্নবোধক ঝুলে যায় কখনও কখনও । ইরানের মারিয়াম সেই প্রশ্নবোধক চিহ্নের রহস্য যেন খুলে দিয়েছেন। চারজন পুরষ্কারপ্রাপ্ত গবেষকের মধ্যে বাকি তিনজনও অসাধারণ ।
প্রতি চার বছর অন্তর ৪০ বছরের নিচের বয়সী চারজনকে এই মেডেল দেয়া হয়।
ইরানের মারিয়াম জিওমেট্রি অব মডুলি স্পেস নিয়ে একটি জটিল বিষয়ে গবেষণা করছেন। ওই শাস্ত্রের জটিল কিছু সমস্যার সমাধানের স্বীকৃতি হিসেবে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত শাস্ত্রের অধ্যাপক মরিয়মকে পুরস্কারটি দেয়া হয় বলে বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
কানাডার গণিতবিদ জন ফিল্ডসের নামে ১৯৩৬ সালে ‘ফিল্ডস মেডল’ পুরস্কার চালু করা হয়, যা গণিত শাস্ত্রের ‘নোবেল’ হিসেবে বিবেচিত। পুরস্কারের অর্থমূল্য নগদ ১৫ হাজার কানাডিয়ান ডলার।
জ্যামিতিতে বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ করে সেমেট্রি অব কার্ভড সারফেস বা বক্রতলের প্রতিসাম্য বুঝার ক্ষেত্রে একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর জন্য মরিয়ম ‘ফিল্ডস মেডেল’ পুরস্কার পান বলে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়।
গণিত ছাড়াও পদার্থ ও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় ওই গবেষণা বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পুরস্কার পাওয়ার পর মির্জাখানি বলেন, “এই পুরস্কার আমার জন্য অনেক সম্মানের। আমি আরো খুশি হব যদি আমার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়ে তরুণ নারী বিজ্ঞানী ও গাণিতিকরা উৎসাহ পায়। আমি নিশ্চিত আগামী দিনে আরো অনেক নারী এধরনের পুরস্কার পাবে।”
১৯৯৫ সালে হাই স্কুলের ছাত্রী থাকা অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক মনোযোগ কাড়েন মারিয়াম। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে তিনিই প্রথম ইরানি, যে কিনা পারফেক্ট স্কোর অর্জন করেছিলেন। ইরানে তিনি বেশ সুপরিচিত। ইয়াং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনি শুরু থেকেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। এমন মন্তব্যই করছিলেন ইন্টারন্যাশনাল ম্যাথমেটিক্যাল ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ইনগ্রিদ ডোবেচিজ। ফিল্ড মেডালিস্টদের তালিকা তৈরির ব্যাপারে তিনি একজন নির্বাচকও।
তিনি আরও বলছিলেন, নিজে একজন নারী হিসেবে তার এই অ্যাওয়ার্ড জয় নি:সন্দেহে এক অদ্ভুত অনুভূতি। নারীরা গণিতে এ পর্যন্ত এমন সম্মান পায়নি বলে যে কুখ্যাতি ছিল, মারিয়ামের এই প্রাপ্তি তাতে ঘি ঢেলে দিল। ভবিষ্যতে নারীদের পক্ষে গণিতের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড জিতে নেওয়াও কঠিন কিছু হবে না বলেই তাঁর বিশ্বাস।
ইরানের গণমাধ্যমের প্রতিবেদন মতে, ১৯৭৭ সালে তেহরানে জন্মগ্রহণকারী মির্জাখানি ইরানের শরিফ ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি থেকে গণিতে স্নাতক ডিগ্রি নেন। তিনি ২০০৪ সালে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন আমেরিকার হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
এর আগে তিনি বিশুদ্ধ গণিতে ‘ব্লুমেনথাল অ্যাওয়ার্ড ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব রিসার্চ’ এবং আমেরিকার গণিত সোসাইটির দেয়া স্যাটের পুরস্কারও অর্জন করেছেন।
২০০৮ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত শাস্ত্রের অধ্যাপক হয়ে যান। মির্জাখানি গণিতের যে সব বিষয়ে রিসার্চ করছেন তার মধ্যে হাইপারবোলিক জিওমেট্রি, টেইচমুলার থিউরি, এরগোডিক থিওরি এবং সিমপ্লেকটিক জিওমেট্রি রয়েছে।
মারিয়াম ছাড়াও যুক্তরাজ্যের ওরিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মার্টিন হেইরের, ব্রাজিলের নাগরিক ড. আর্তুর এভিলা এবং কানাডার বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধ্যাপক মানজুল ভারগাভা এবারের ফিল্ডস মেডেল পেয়েছেন।