উইমেন চ্যাপ্টার: জাতিসংঘের শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ এর গত ২২ জুলাই প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে তিন দশক আগে বিশ্বজুড়ে যে সংখ্যায় মেয়েদের খৎনা (ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন বা এফজিএম) করা হতো তার এক-তৃতীয়াংশই হ্রাস পেয়েছে। নি:সন্দেহে এটি সুখবর। কিন্তু ট্র্যাজেডি হচ্ছে, এখন পর্যন্ত প্রতি মিনিটে সাতজন মেয়ে খৎনার শিকার হচ্ছে। এর মানে হচ্ছে এই প্রথা হ্রাস পেলেও, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে তা তাল মেলাতে পারছে না। এই হার অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে খৎনার শিকার হয়ে প্রতিবছর ৩৬ লাখ থেকে বেড়ে ৪১ লাখ মেয়ের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে প্রতি ১০টি মেয়ের মধ্যে নয়জনই শিকার হয় এমন বর্বরোচিত প্রথার। এটা করতে গিয়ে মেয়েটার নিদারুণ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেইসাথে সংক্রমণ, মাতৃত্বহীনতা এবং কোন কোন সময় মৃত্যুও হয়ে থাকে।
বাল্যবিয়ে হচ্ছে মেয়ের জীবন ধ্বংসের আরেকটি প্রথা। এটাও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে নৈমিত্তিক ঘটনারই একটি। এশিয়া মহাদেশেও তুমুল আয়োজনে এখনও এই প্রথা বিদ্যমান। শিশুবয়সে একটি মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই তার ভবিষ্যত ধ্বংস করে দেয়া, সামাজিকভাবে তাকে কোণঠাসা করে ফেলা। এর ফলে তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, বন্ধ হয় শিক্ষার গতি। শিশু বয়সেই মা হয়ে যাওয়ায় তার স্বাস্থ্যেরই ব্যাপক ক্ষতি হয়, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঠেলে দেয়।
ইউনিসেফ এর তথ্যমতে, বর্তমানে ৭০ কোটিরও বেশি নারীর বিয়ে হয় তাদের ১৮ বছর হওয়ার আগেই, এর মধ্যে ২৫ কোটির বিয়ে হয় ১৫ বছরের নিচের বয়সে।
কিছু কিছু দেশের পরিসংখ্যান মতে, ২০ থেকে ৪৯ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়ে হয়েছে শিশুববয়সে। এফজিএম বা খৎনা প্রথা এখন ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে চলেছে, এর প্রমাণ মিলছে শিশু জন্মহারের পরিসংখ্যান দেখে। কমছে জন্মহার। তারপরও এতে সন্তুষ্টির অবকাশ নেই। ২০৫০ সাল নাগাদ কন্যাশিশুর বিয়ের হার ৭০ কোটিকেও ছাড়িয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন কর্তৃপক্ষ।
বিশ্বের বহু দেশেই এখন বাল্যবিয়ে এবং খৎনা এ দুটো প্রথার বিরুদ্ধেই আইন পাশ করেছে। এটা খুবই প্রয়োজনীয়, কিন্তু যথেষ্ট নয়। কারণ দুটো প্রথাই সামাজিক রীতিনীতির মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত। এটা শুধুমাত্র সম্ভব বাবা-মাকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার মাধ্যমে। তাদেরকে এই দুটো বিষয়ের ক্ষতির দিকটা ভাল করে শেখাতে পারলেই সম্ভব এ থেকে রেহাই পাওয়া। শর্তসাপেক্ষে বিভিন্ন দেশের সরকারকে অতিরিক্ত সহায়তা দেয়া হতে পারে এজন্যই যে, শুধু আইন পাশ করলেই হবে না, একে প্রয়োগও করতে হবে। অনেক দেশে পুলিশ এবং নারী অধিকার কর্মীরা ফোন হটলাইন স্থাপন করেছে, যাতে কোন ক্ষতিগ্রস্ত মেয়ে সহজেই তাদেরকে জানাতে পারে, সেইসাথে এসব মেয়েদের জন্য নিরাপদ হোমও তৈরি করেছে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রধান আবাটুন্ডে অসোটিমেহিন বলছিলেন, তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মেয়েরা যাতে স্কুলে যায় এবং তাদের লেখাপড়াটা শেষ করে এটা নিশ্চিত করতে হবে বার আগে।
(অনুদিত)