শচীন বনাম শারাপোভা এবং সীতা কাহিনী

India Hockeyউইমেন চ্যাপ্টার: সম্প্রতি টেনিস তারকা রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভাকে নিয়ে বেশ ক্যাচাল শুরু হয়েছে। বিষয়টা এমন কিছু না, কিন্তু শারাপোভাকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে যারপরনাই খারাপ ভাষায় গালিগালাজ করতেও পিছপা হচ্ছে না সো-কলড শিক্ষিত লোকজন। ক্রিকেট অঙ্গনের লিটল মাস্টার শচীন টেন্ডুলকারকে চেনেন না টেনিস তারকা, এটাই তার কাল হয়েছে। ভাবখানা এমন যে, শারাপোভার এতোবড় ঔদ্ধত্য যে শচীনকে চেনে না?

তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনি কি চেনেন শচীনকে? মারিয়া বললেন, না। শচীন হলেন ক্রিকেটের ঈশ্বর। মারিয়ার উত্তর: ওকে। পাল্টা জিজ্ঞাসা করেন, ওকে ক্রিকেট, কতগুলো দেশ ক্রিকেট খেলে? নয়টি। মারিয়া: মাত্র নয়টি? পিনপতন নিস্তব্ধতা। মারিয়া: ওকে, কষ্ট পাবেন না, তাহলে তো আপনারা নিশ্চয়ই টপ ক্রিকেট প্লেয়িং দেশ! শচীনসহ কতবার আপনারা বিশ্বকাপ জিতেছেন? দুবার, এর একবার ছিলেন শচীন। মারিয়া: ঈশ্বর তাহলে একবারই মাত্র বিশ্বকাপ তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু রিকি পন্টিং নামের একজন তিনবার বিশ্বকাপ জেতেন এবং আমি তাকেও জানি না। এটা আমার ভুল। আগে রিকিকে জেনে নেই, তোমার ঈশ্বরের পালা কিছু পরে। ব্লা ব্লা ব্লা…..

মারিয়ার এই উত্তর নিয়ে শোরগোল শুরু হয় ভারত তথা ক্রিকেট বিশ্বে। তাকে টেনে নামানোর হেন চেষ্টা নেই যা করা হচ্ছে না। যেন শচীনকে না জেনে উনি মস্ত বড় পাপই করে ফেলেছেন। যে রাশিয়ায় ক্রিকেট নামটি কখনও শোনাই হয় না, সেখানে শচীন টেন্ডুলকারের নাম জানতে চাওয়া কতটা সমীচীন হলো, সেই বোধটাই কারও নেই। এমনকি নিজের দেশের অন্য যে খেলোয়াড়রা আছেন, যারা দেশের জন্য বহুবার সুনাম কুড়িয়েছেন, তাদের কথাই কয়জনে জানে খোদ ভারতে?

ভারতে কয়জন জানেন হকি টিম খেলোয়াড়দের নাম? বা অলিম্পিক পদক জয়ীদের নাম? স্বভাবতই এমন প্রশ্নও উঠেছে এখন দেশটিতে। বিশেষ করে সীতা সাহু (১৬) নামের যে মেয়েটি ২০১১ সালে অ্যাথেন্স বিশেষ অলিম্পিকে ২০০ এবং ১৬০০ মিটার দৌড়ে দুটি ব্রোঞ্জ পদক জয়ী হলো, কেউ কি মনে রেখেছে তাকে? কেমন আছে সে?

বাবা অসুস্থ হয়ে কর্মক্ষমতা হারানোর পর সীতা স্কুল যাওয়া ছেড়ে দেয় এবং পরিবারকে বাঁচাতে কাজ করা শুরু করে। তাই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশ্ন উঠে, কেন শুধুমাত্র ক্রিকেটাররা স্বীকৃতি, সম্মান, টাকা সব পাবে, আর অন্য খেলোয়াড়রা থাকবে অবহেলিত, বা ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন অঢেল প্রাইজ মানি, অথচ যে নওজোয়ানরা জান বাজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করছে বা শহীদ হচ্ছেন, তারা কি পাচ্ছেন আসলে?

কোথাও না কোথাও বড় ধরনের কোন ভুল হয়ে যাচ্ছে। সময় এসেছে তা উপলব্ধির।

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.