বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে ব্রাজিলে শিশু ‘পতিতাবৃত্তি’

Brazil Prostitutionউইমেন চ্যাপ্টার: ব্রাজিল কেবল বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরেই ভুগছে না, পোয়াবারো হয়েছে যৌনকর্মীদেরও। বিশেষ করে শিশু যৌনকর্মীদের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে শিশু অধিকার সংগঠনগুলো।

এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিশু যৌনকর্মীদের মধ্যে ১১ বছর বয়সীরাও আছে। এদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের অথবা মাদকাসক্ত। শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন কিছু সংগঠন একসাথে হয়ে বিশ্বকাপ চলাকালে শিশুদের ওপর হয়রানি বন্ধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বলা হচ্ছে, এবারের বিশ্বকাপে ব্রাজিলের যে ক্ষতিটি সবচেয়ে বেশি হবে, তা হচ্ছে সেখানকার শিশুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে মারাত্মকভাবে। যদিও ব্রাজিলে পতিতাবৃত্তিকে অন্যায় বা গর্হিত বলে দেখা হয় না, এমনকি ১৭ বছরের শিশুদেরও টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করা যায় যৌনকাজে, তারপরও দেশটির বিস্তৃত দারিদ্র্য বিশ্বকাপের সময়টিকে সুযোগ হিসেবেই নিচ্ছে। হাজার হাজার শিশুকে ঠেলে দেয়া হয়েছে এ কাজে। এক পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে প্রায় ছয় লাখ বিদেশি দেশটিতে রয়েছে এই মূহূর্তে, তাই আশংকা, পুরো সময়টা জুড়েই যৌনবৃত্তি ব্যাপক সমস্যাই তৈরি করবে।

একটু ভাল করে খেয়াল করলেই দেখা যাচ্ছে, ১০-১১ বছরের শিশুরা ব্রাজিলের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, এমন পোশাক পরছে আর অদ্ভুত জমকালো সাজে সাজছে যে, যাতে করে তাদের একটু বড় দেখা যায়। ব্রিটেনের একটি দাতব্য সংস্থা বলছে, ‘বিশ্বকাপের মতোন বড় আয়োজনের আগে-পরে এবং চলাকালে চিহ্নিত কিছু ঝুঁকির কথা আমরা জানি। ব্রাজিলও এর ব্যতিক্রম নয়’। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা সারাহ ডি কারভালহো বলছিলেন, বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশটিতে যাওয়া অধিকাংশ ভক্ত-সমর্থকই শিশুদের সাথে এই কাজটি করতে হয়তো দ্বিধা করবে, তারা কোন ক্ষতি করতে চাইবে না শিশুদের, কিন্তু সুযোগ-সন্ধানীদেরও তো অভাব নেই।

রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, এসব শিশুর অধিকাংশই গৃহহীন, ক্ষুধার্ত, মাদকাসক্ত। জীবনের শুরুতেই তারা মার খেয়ে গেছে, যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে নিজ ঘরেই, কোন সময় নিজ পিতার মাধ্যমে বা সৎ পিতার মাধ্যমে। কিছুটা বড় হওয়ার পর পরিবার থেকেই এসব শিশুকে রাস্তায় ঠেলে দেয়া হয়।

একজন যৌনকর্মী বলছিলেন, ১০, ১২, ১৩, ১৪ যেকোনো বয়সের শিশুদেরই যৌন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। খদ্দেররা আসে, যেকোনো শিশুকে বেছে নেয় তারা। বেশিরভাগ শিশুই ওদের সাথে চলে যায়, কারণ তাদের প্রয়োজনটা অনেক বেশি। বেঁচে থাকতে হলে তাদের এই কাজ ছাড়া অন্য কোন উপায়ও নেই। এরিকা নামের ১৪ বছরের এক কিশোরী বলছিল, ১০ বছর বয়সেই তাকে জোর করে একাজে নামানো হয়েছিল। এরিকা আরও বলছিল, ‘আমি একটা রুমে দুজন পুরুষের সাথে দুই ঘন্টা কাটিয়েছিলাম। এরপরই আমি সেখান থেকে পালিয়ে যাই। রাস্তায় থাকা শুরু করি, একটি ব্রিজের নিচেই হয় আমার নতুন ঠিকানা’। এরিকা এখন সন্তানসম্ভবা, আশ্রয় পেয়েছে দাতব্য সংস্থাটিতে।

এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালে ব্রাজিলে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু যৌনকর্মীর কাজে যুক্ত ছিল। অধিকার কর্মীরা জানান, এটা এইদেশের সংস্কৃতিরও একটা সমস্যা। ওরা সেক্স পর্যটনকে উৎসাহিত করতে গিয়েই দেশের এই হাল হয়েছে। হোটেল, ট্যাক্সি, ট্যুরিজম এজেন্সি সবাই এই কাজে জড়িত। বরং একে-অন্যের পরিপূরক এই ব্যবসায়। ট্যাক্সি চালকরা প্রয়োজন এবং চাহিদা অনুযায়ী মেয়ে জোগাড় করে এনে দেয়। প্রয়োজনে ছেলেশিশুদেরও জোগান দেয় এরা। এটাই সিস্টেম ওই দেশের। বলছিলেন রুবিয়া উচোয়া নামের একজন কাউন্সেলর।

বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেক্স ব্যবসা ছড়িয়ে পড়ায় তা প্রতিরোধে নেমেছে বেশকিছু সংগঠন। শুরু হয়েছে নানা ধরনের প্রচারণা। শিশুদের ওপর এ ধরনের হয়রানি বন্ধে তারা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তারা ডেভিড লুইজ এবং গ্যারি লিনেকারের মতোন ক্রীড়া তারকাদের ব্যবহার করছে প্রচারণা কাজে। শিশু যৌনকর্মীদের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে ভ্রমণকারীদের। ব্রাজিলগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ফ্লাইটগুলোতে, চার্টার এয়ারলাইন্স এবং ব্রাজিলের জাতীয় এয়ারলাইন্সগুলোতে এ নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে নিয়মিতভাবে।

ব্রাজিল পুলিশকেও সম্পৃক্ত করা হচ্ছে শিশু যৌনবৃত্তি প্রতিরোধে। কোথাও কোন ধরনের অনিয়মত দেখলেই তাদের গ্রেপ্তার করা এবং শাস্তি দেয়ার অনুমতি দেয়া হচ্ছে পুলিশকে। এমনকি অপরাধী শনাক্ত হওয়ার পর ব্রিটেন, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার পুলিশও তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবে বলে বার বার সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে।

ইউরোপীয়ান কমিশনও “Don’t Look Away” নামের একটি প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে কোথাও কোন শিশুকে হয়রানি করতে দেখলে হরলাইন (১০০) ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। ব্রাজিল সরকার বিশ্বকাপ আয়োজন শহরগুলোর এই সংকট সমাধানে ৩৩ লাখ ডলার বাজেট তৈরি করেছে।

ইউনিসেফ এবং অন্য শিশু অধিকার সংগঠনগুলো মিলে চালু করেছে Protect Brazil নামের একটি ক্যাম্পেইন। এর মাধ্যমে গাইডদের হাতে ব্রাজিলের সব পুলিশ স্টেশনের ঠিকানাসহ একটি ম্যাপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সারাহ বলছিলেন, শিশুরা রাজী হচ্ছে বা কাছে আসছে বলেই তাদের নিতে হবে এমন কোন কথা নেই। তারা শিশু, এটা সবার মাথায় থাকতে হবে।

 

 

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.