সিঁথি

Aparna 2অপর্ণা গাঙ্গুলী: মণিমালিকা আয়না নিয়ে বসেছেন, মাথার সিঁথি খানি আর কিছুতেই সোজা হয় না। ওদিকে সব্বাই এসে পড়বে, আজ তার সাধ, বিশাল আয়োজন হযেছে, কিন্তু সিঁথি সোজা না হলে সিঁদুর পরেন কি করে! ঝি দাসীদের মুখ করে আর কিছু রাখছেন না। এটি তাঁর নবম সন্তান হতে চলেছে। তাই মনি এখন বেশ গিন্নি, ও সবেতে আর ভয়টয় পান না, আঁতুর ঘরে ঢোকেন আর বেরোন ফি বছর …

সবাই আড়ালে ডাকে ‘গাই বিউনি মেয়েমানুষ’ বলে, তাতে অবশ্য কত্তা গিন্নির ভারী বয়েই গেছে । ফি বছর সাধ, ইয়া বড় মনিহার দিয়ে গহনা দিয়ে ভরে দেন স্বামী, বাজু, বালা, সাতনরী, মান্তাসা, কানপাশা, চুটকি, চরণচাঁদ কি নেই । মণিমালিকা গরীব ঘরের মেয়ে, মুখশ্রী সুন্দর দেখে শাশুড়ি দেখে শুনে এনেছিলেন। এই বাড়িতে পা দিতে না দিতেই শাশুড়ি ঠাকরুন ইহলোক ত্যাগ করলেন। আর মণিমালিকা হয়ে উঠলেন পাকা গিন্নী ।

এত্ত যার দাপট, তার কিনা সিঁথি সোজা হয় নাকো ! নাপতিনি বৌএর ডাক পড়ল, সে পা ঘসে আলতা পরাতে বসেছে। তার গালে হাত, ড্যাব ড্যাবে চক্ষু চেয়ে সে তো বলছে … ‘ ও মা গো, ইকি অলুক্ষুনে কতা গো, বলি হ্যাঁ …. যার এত গুলি সন্তান তার কিনা সিঁথি সোজা হয় না!!’

মণিমালিকা আঁতকে ওঠেন – ক্যান রে নাপতিনি বউ সিঁথি সোজা না হবার সাথে তার কি সম্পর্ক … নাপতিনি বউ এ গালের পান ও গালে ঠেলে দিয়ে, একটু কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে – ওমা তাও জানো নি, এ আমাদের দেশ গায়ের কতা মা, সোয়ামি বে পথে গেলে সিঁথি সোজা হয় কি করে? তাই তো ভাবি ন’নটা সন্তান তোমার – এখন থেকে কি তিনি তবে বেপথেই …….

ওইটুকু শুনেই আআআঁক শব্দ করে মুর্চ্ছা গেলেন মণিমালা, জ্ঞান আসলে নাপতেনির খোঁজ পড়ল – সে আর তখন থাকে, পাওনা গন্ডা বুঝে নিয়ে সে – দে হাওয়া!!

এখনকার মণিমালিকা নিজেকে আয়নায় দেখে নিচ্ছে, তার এক সন্তান, তাও সে নিজের থেকে চায়নি, স্বামীই জোর করে। সিঁথি বাঁকাই তার, স্বামীও সোজা পথেই আছেন…. যদিও বাঁকা সোজা নিয়ে তার কিছু যায় আসে না এখন। সে নিজেকে নিজের আয়নায় দেখে নিতে শিখে গেছে।

শেয়ার করুন:
Copy Protected by Chetan's WP-Copyprotect.